শরীরে ক্যান্সার হবে কিনা জানা যাবে আগেই * এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে রোগ নির্ণয়ের সব পরীক্ষা

এনআইএলএমআরসি: গর্ভস্থ শিশু রোগাক্রান্ত কিনা দেশেই হবে পরীক্ষা

Shakil Shakil

Ahmed

প্রকাশিত: ১২:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২০

শিশু মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় জানা সম্ভব, সে কোনো রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে কিনা। জন্মের আগেই মাতৃগর্ভের তরল পদার্থের নমুনা সংগ্রহ করে বিশেষ পরীক্ষার মাধমে জানা যাবে শিশু কী ধরনের রোগ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হবে।

অর্থাৎ শিশুর কোনো বংশগত, ইম্যুনলজিক্যাল বা সংক্রমণ জাতীয় রোগ আছে কিনা, উচ্চতর মলিক্যুলার পদ্ধতিতে সেটি নির্ণয় দেশেই সম্ভব।জাতীয় পর্যায়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার (এনআইএলএমআরসি) এ ধরনের পরীক্ষা চালু করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

এ প্রতিষ্ঠানের অত্যাধুনিক মলিকিউলার বায়োটেকনোলজি বিভাগে হবে এসব জটিল পরীক্ষা। পাশাপাশি মানবদেহের কোশের পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, শরীরে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা আছে কিনা- সেটি জানা যাবে ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি বিভাগের পরীক্ষায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট এবং এর মান নিয়ে জনমনে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। ফলে দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থা হারিয়ে সামর্থ্যবানরা সুচিকিৎসার্থে যান দেশের বাইরে।

রোগ নির্ণয়ের নির্ভুল রিপোর্ট এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার। এখানে এক ছাদের নিচে পাওয়া যাবে রোগ নির্ণয়ের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এ কাজে সম্পৃক্ত চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্টদের জন্য রয়েছে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা। নতুন এবং অত্যাধুনিক সব রোগ নির্ণয় পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ পাবেন টেকনোলজিস্টরা।

আর চিকিৎসকদের জন্য রয়েছে রোগ ও নির্ণয় পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার ব্যবস্থা।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সাধারণ সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি মানবদেহের কোশের পরিবর্তনজনিত সম্পর্কে জানতে রয়েছে ইমিনোহিস্টোকেমিস্ট্রি বিভাগ।

কোশ ও কলার অস্বাভাবিকত্ব জানতে রয়েছে সাইটোপ্যাথলজি বিভাগ। মাতৃগর্ভের শিশুর কোনো জেনেটিক রোগ বা ইম্যুনলজিক্যাল সমস্যা রয়েছে কিনা- সেটি জানতে রয়েছে মলিকিউলার বায়োটেকনোলজি বিভাগ।

এসব পরীক্ষার জন্য আগে আমাদের দেশের মানুষের ভারত, সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ড যেতে হতো। সামর্থ্যবানরা যেতেন ইউরোপ বা আমেরিকা। এসব জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

ইন্সটিটিউট সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো ধরনের রক্তরোগ সম্পর্কে জানতে এখানে রয়েছে হেমাটোলজি বিভাগ। মানবদেহের জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন জানতে রয়েছে বয়োকেমিস্ট্রি বিভাগ।

সাধারণ রোগ নির্ণয়ের জন্য রয়েছে ক্লিনিক্ল্যাল প্যাথলজি, সংক্রমণ রোগ সম্পর্কে জানতে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ। এছাড়া রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ। জানা গেছে, মুজিববর্ষকে সামনে রেখে চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সব বিভাগ চালুর কাজ এগিয়ে চলছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে।

২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। তবে জনবল সংকট, ভবনের অভ্যন্তরীণ কিছু কাজ বাকি থাকায় তা চালু হয় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি।

সামগ্রিক বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান বলেন, রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে কারও অসন্তোষ বা সন্দেহ থাকলে রেফারেন্সের মাধ্যমে তা আমাদের কাছে এলে আমরা তা পরীক্ষা ও পুনঃনিরীক্ষা করে রিপোর্ট দেব।

আপনার মতামত দিন :