চিকিৎসককে বাসা ছাড়ার আল্টিমেটাম ভবন মালিকদের!

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ১২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৩, ২০২০

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রাজধানীর বকশিবাজারে এক চিকিৎসককে বাসা ছেড়ে দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন অ্যাপার্টমেন্ট মালিকরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ওই নারী চিকিৎসককে হয় বাসা বা না হয় চাকরি ছাড়ার জন্য চাপ হয়েছে।  শনিবার (২২ মার্চ) সকালে পুরান ঢাকার বকশিবাজারের উমেশ দত্ত রোডে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাঁর অনুজ সহকর্মী ডার্মাটোলজিতে এম ডি কোর্সে অধ্যয়নরত ডা. মো. অলিউল্লাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের টাইমলাইনে বলেন, ‘আমার সহকমী সকালে ফোনে জানালেন, অলি আমি খুব বিপদে আছি। বাসা থেকে বের হতে পারছি না। আমার অ্যাপার্টমেন্টের সকল মালিক বাসার সামনে এসে জানালো, তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজিই আমাকে বাসা ছিড়ে দিতে হবে। তারা বললেন, এ বাসায় থাকলে হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চাকরি করা যাবে না।’

এছাড়াও ভবন মালিকরা লিফটের মধ্যে নোটিস টানিয়ে বলেছে, ডাক্তার ও নার্সদের লিফট ব্যবহার করা নিষেধ।

সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ডার্মাটোলজির বিভাগীয় প্রধান ডা. রাশেদ মুহাম্মদ খান ও ডা. এমদাদকে জানান বলে উল্লেখ করেন ডা. মো. অলিউল্লাহ।

কিছুক্ষণ পর ওই নারী চিকিৎসক অ্যাপ্রন ছাড়া হাসপাতালে হাজির হন। এ সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে শান্ত হওয়ার কথা বলেন এবং তাকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

জানতে চাইলে ঢামেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. খান মো. আবুল কালাম আজাদ রোববার (২২ মার্চ) রাতে বলেন, ‘ঘটনা সত্য। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও দুশ্চিন্তার বিষয়, ওই ডাক্তার সাহেব আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজের। তার বাসা বকশিবাজারের উমেশ দত্ত লেনে। তিনি গতকাল (শনিবার) আমার কাছে অভিযোগপত্র নিয়ে এসেছেন, তাকে তার বাসার মালিকরা বলেছেন, তুমি যদি হাসপাতালে যাও তাহলে এ বাসায় থাকতে পারবে না। বাসা থেকে বের করে দেবো। আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেবেন। আশা করছি, এ বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ ঘরে থাকতে পারবেন, কিন্তু ডাক্তাররা তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমাদের সকলেরই জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, কখনোই যেন কেউ এ জাতীয় কথা না বলেন। হয় তো তারা নিজেদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে এসব কথা বলেছেন। এজন্য আমরা ডাক্তাররা কিছু মনে করিনি। কিন্তু এটা করা তো অত্যন্ত গর্হিত কাজ।’

অন্যান্য দেশে করোনাভাইরাস মহামারীতে ভূমিকা রাখার জন্য সব মহলে চিকিৎসদের প্রশংসিত হওয়ার কথা তুলে ধরে অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ইতালিয়ানরা গান গেয়ে গেয়ে ডাক্তারদের বীরের সম্মান দেয়। তারা যে রাস্তা দিয়ে হাঁটে তাদের অভিনন্দন জানায়। চীনে ডাক্তারদের জাতীয় বীরের সম্মান দেওয়া হয়েছে। আমাদের ডাক্তাররা পরিবার-পরিজনদের কাঁদিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন রোগীদের চিকিৎসা করতে। তিনি ফিরে যদি বাসায় ঢুকতে না পারেন, তাহলে বিপর্যয়টা কার হবে? ক্ষতিটা কী দেশবাসীর হবে নাকি ডাক্তারদের?’

তিনি আরও বলেন, ‘হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ডাক্তাররা যদি খাবার-দাবার না পান তাহলে রান্না করে তাদের কাছে জনগণের খাবার পৌঁছে দেওয়া উচিত। তাদের প্রোটেকশনের জন্য জিনিস-পত্র দিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা যদি উল্টো কাজ করি, তাহলে আমাদের জাতির আর কিছু থাকবে না।’

এ প্রসঙ্গে লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি। আসলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। সংবাদ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আরেকটু সতর্ক হয়ে বিষয়টি দেখবো। স্বাস্থ্য সেবায় জড়িত কেউ এই এলাকায় অবস্থান করলে আমরা তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টি অবশ্যই দেখবো।’

আপনার মতামত দিন :