চিকিৎসক ও নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বাড়বে সবার ঝুঁকি

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ১০:০৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২০

কোভিড-১৯ সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ আক্রান্ত, অন্যদিকে যারা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে তারাও সমান হারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ইতালিতে মোট আক্রান্তের ৮.৩ ভাগ স্বাস্থ্যকর্মী। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ২১ জন। এর মানে আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের গাণিতিক সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৯০৩ জন।

চীনে তাদের আক্রান্তের হার ইতালির আক্রান্তের হারের ঠিক উল্টো। দশমিকের আগের সংখ্যাটা দশমিকের পরে আর পরের সংখ্যাটা দশমিকের আগে আসলেই অংকটা মিলে যাবে। অর্থাৎ চীনে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের হার মোট আক্রান্তের ৩.৮ ভাগ। চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ৮ জন। তাহলে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৮ জন।

ইতালি এবং চীন দুটি দেশই চিকিৎসা বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে। তাদের হেলথ ওয়ার্কারদের উন্নতমানের সব ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) দিয়েছে। একেকজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দেখলে মনে হয় নভোচারী এইমাত্র মহাশূন্যে যাবে, বা মাত্র মহাশূন্য থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করেছে। তা সত্ত্বেও এসব উন্নত বিশ্বে স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্তের সংখ্যা এত বেশি।

ইতালিতে তারা এত আক্রান্ত হচ্ছে যে সেখানে চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। ইভেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত চিকিৎসকরা নিজেদের চিকিৎসা না নিয়ে অনবরত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। এই চিকিৎসকদের অবদান সারা বিশ্বের মানুষ জানে? সারা বিশ্ব কি এইসব মানবতার উচ্চ শিখরে থাকা চিকিৎসকদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখবে?

আমাদের বাংলাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৪ জন। কিন্তু  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ১০ জন চিকিৎসক আইসোলেশনে আছেন। আমাদের দেশে এখনো কোভিড-১৯ এর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়নি। বাংলাদেশে লেভেল-৩ ট্রান্সমিশন চলছে। যারা বিদেশ ফেরত বা বিদেশ ফেরতদের সংস্পর্শে এসেছেন তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের দেশে যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে যায়, আর সমান তালে চিকিৎসক, নার্সরা যদি আক্রান্ত হওয়া শুরু করে এবং ইতালী বা চীনের মতো এত সংখ্যক মানুষ যদি আমাদের দেশে আক্রান্ত হয় তাহলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের হাসপাতাল ডাক্তার ও নার্স শূন্য হয়ে যাবে। এটি একটি বড় ধরনের আশঙ্কার ব্যাপার।

আমাদের দেশে এখনো সকল হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই দেওয়া হয়নি। যার ফলে একদিকে যেমন চিকিৎসকরা সর্দি কাশি জ্বরের রোগীদের চিকিৎসা দিতে ভয় পাচ্ছেন। অন্যদিকে বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসা না পাওয়ার ভয়ে বিদেশ গমণের কথা গোপন করছে। রোগীদের ধারণা বিদেশ গমনের ইতিহাস থাকলে তারা চিকিৎসা পাবে না, প্রকৃতপক্ষে ঘটছেও তাই। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হবে।

ডাক্তারদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি একটি উদাহারণ দিয়ে বলি, বাংলাদেশে প্রথম যে ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি করোনার লক্ষণগুলো নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাননি। উনার কিডনিতে পাথর ছিল, সেটার চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকা মেডিক্যালের আউটডোরে গিয়েছেন। রোগের পূর্ণ ইতিহাস শুনে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা তাকে আইইডিসিআরে পাঠায় করোনার পরীক্ষার জন্য। সেখানে তাকে পজিটিভ হিসেবে শনাক্তকরণ করা হয়। তাঁর চিকিৎসার সাথে যেসব চিকিৎসক জড়িত ছিল সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়। এভাবে যদি একজন রোগীর জন্য ৪ জন চিকিৎসককে আইসোলেশনে রাখতে হয়, তাহলে হাসপাতাল শূন্য হতে সময় লাগবে না।

যেসব চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে, নয়ত আমরা সবাই ঝুঁকিতে থাকবো। যেসব চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মচারীরা আউটডোর সেবা দিবে তাদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুযায়ী লেভেল-১ প্রোটেকশন দেওয়া জরুরি। লেভেল-১ প্রোটেকশনে যেসব পিপিই দরকার, তার তালিকা:

১. সার্জিক্যাল মাস্ক,
২. ডিসপোজেবল গ্লোবস
৩. সার্জিক্যাল ক্যাপ
৪. ওয়ার্কিং ইউনিফর্ম (চিকিৎসকরা নিজেরা নিয়ে আসবে)
৫. ডিসপোজেবল আইসোলেশন ক্লথিং (যদি প্রয়োজন হয়)

চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হলে তারা যেসব সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা করবে তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, আউটডোরে যারা সেবা নিতে আসেন তারাও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

চিকিৎসকদের প্রস্তুত করাটা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি, যা সম্পূর্ণভাবে করা হয়নি। প্রস্তুতির কথা সংবাদ সম্মেলনে সীমাবদ্ধ না রেখে চিকিৎসকদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, জনগণকে নিরাপদে রাখুন। দেশকে মহামারী থেকে রক্ষা করুন।

আপনার মতামত দিন :