করোনা প্রতিরোধে সেনাবাহিনী নামানোসহ সরকারের ১০ সিদ্ধান্ত Emon Emon Chowdhury প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২০ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে তিনজনের মৃত্যু এবং ৩৩ জন আক্রান্তের মধ্যে আগামী ২৬ মার্চ হতে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। সরকারি অফিসের পাশাপাশি বেসরকারি অফিসও এই ছুটির আওতাধীন থাকবে। বিভাগীয় ও জেলা শহরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) থেকে মাঠে নামছে সেনাবাহিনী। তারা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের (ডিএম) সমন্বয়ে জেলা ও বিভাগীয় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসহ কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা পর্যালোচনাসহ আনুষাঙ্গিক কাজ করবে। সোমবার (২৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে জরুরি ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের এ ১০ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস ছাড়াও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি এবং তা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ‘এরপূর্বে তিনি সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া তিনি প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে সভা ও আলোচনা করছেন।’ ‘সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এই ১০ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করেছেন,’ যোগ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সরকারের ১০ সিদ্ধান্ত হচ্ছে- ১। আগামী ২৬ মার্চের সরকারি ছুটি এবং ২৭-২৮ মার্চের সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে ২৯ মার্চ হতে ২ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করছে এবং ৩ ও ৪ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন এই বন্ধের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। কাঁচাবাজার, খাবার এবং ঔষধের দোকান, হাসপাতাল এবং জরুরি সেবার জন্য এই ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না। করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি রোধকল্পে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সঙ্গে জনসাধারণকে এই মর্মে অনুরোধ করা যাচ্ছে, তারা যেন এ সময় জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (খাদ্যদ্রব্য, ঔষধ ক্রয়, চিকিৎসা, মৃতদেহের সৎকার ইত্যাদি ) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে না আসেন। ২। এই সময়ে বিভিন্ন অফিস আদালতের প্রয়োজনীয় কার্যাবলী অনলাইনে সম্পাদন করতে হবে। সরকারি অফিসসমূহের মধ্যে যারা প্রয়োজন মনে করবে তারা অফিস খোলা রাখবে। ৩। গণপরিবহন চলাচল সীমিত থাকবে। জনসাধারণকে যথাসম্ভব গণপরিবহন পরিহারে পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহণ ব্যবহার করবেন তাদের অবশ্যই করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গাড়িচালক এবং সহকারীদে অবশ্যই মাস্ক ও গ্লাভস পড়াসহ পর্যাপ্ত সতর্কমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৪। জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে। ৫। ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দুরত্ব ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে সহায়তায় নিয়োজিত হবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে তারা জেলা ও বিভাগীয় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা পর্যালোচনা করবে। সেনাবাহিনী বিশেষ করে বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের কেউ নির্ধারিত কোয়ারেন্টিনের বাধ্যতামূলক সময়পালনে ত্রুটি বা অবহেলার করছে কিনা তা পর্যালোচনা করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা এজন্য স্থানীয় আর্মি কমান্ডারের কাছে সেনাবাহিনী কর্তৃক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য আইনানুসারে অনুরোধ জানাবেন। ৬। করোনা ভাইরাসের কারণে নিম্ন-আয়ের কোনো ব্যক্তি শহরে জীবন-যাপনে অক্ষম হলে সরকার তাকে ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচির অধীনে নিজ গ্রাম/ঘরে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের ঘোষণা করছে। জেলা প্রশাসকরা এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ৭। সরকার ভাষাণচরে এ লক্ষ্যে মানুষের জন্য পর্যাপ্ত আবাসন ও জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করেছে। সে সঙ্গে আগ্রহী ব্যক্তিদের সরকার এই সুযোগ গ্রহণে আহ্বান জানাচ্ছে। ভাষাণচরের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকরে নিজেদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ব্যক্তিকে সেখানে প্রেরণের জন্য সব জেলা প্রশাসকদেরও নির্দেশনা দেওয়া হলো। ৮। করোনা ভাইরাসজনিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়-অসংস্থানে অসুবিধা নিরসনে জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সাহায্য দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৯. প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ৫০০ ডাক্তারের তালিকা করার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)- কে নির্দেশ দিয়েছেন; যেন তারা করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ১০। সবরকম সামাজিক রাজনৈতিক/ধর্মীয় জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অসুস্থ, জর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মসজিদে না যেতে বারংবার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তা ভঙ্গ করে একজন মিরপুরে মসজিদে যাওয়ায় অন্য ব্যক্তিও আক্রান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের ইসলামী ফাউন্ডেশন এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে। সূত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম আপনার মতামত দিন : SHARES জাতীয় বিষয়: