World Doctor’s Day তে চিকিৎসকদের প্রতি ডাঃ ফজলে এলাহী খাঁনের আহ্বান

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২০

প্রিয় চিকিৎসকবৃন্দ,

আসসালামু আলাইকুম/আদাব
আজ ৩০শে মার্চ,
বিশ্বের অনেক দেশে এই দিনটি ‘বিশ্ব চিকিৎসক দিবস’ হিসেবে (World Doctor’s Day) উদযাপিত হয়। আমি সকল চিকিৎসককে এই দিবস উপলক্ষে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ এবং তাদের সফলতা ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। বিশেষ করে সে সমস্ত চিকিৎসকের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা যারা চলমান কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এর পাশাপাশি নার্স/ব্রাদার/আয়া,ওয়ার্ড বয়/পরিছন্নতাকর্মি সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর অবদানও অনস্বীকার্য। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, বঞ্চণা আছে, বৈষম্য আছে, নিগ্রহ আছে, কিন্তু বাংলাদেশের চিকিৎসকসমাজসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আজ পর্যন্ত কোন জাতীয়দুর্যোগে চিকিৎসাসেবা প্রদানে পিছপা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবেনা। বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা তাঁরাই বেঁধেছে। প্রধানত তাদের অসামাণ্য অবদানের কারণেই বাংলাদেশ বিভিন্ন স্বাস্থ্যসূচকে (মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, প্রজনন হার হ্রাস, গড়আয়ু বৃদ্ধি, গুটিবসন্ত, পোলিও, নবজাতকের ধনুষ্টঙ্কার, কালাজ্বর নির্মূল ইত্যাদি) অসামাণ্য সফলতা অর্জন করেছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অনেকগুলো পুরস্কার স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জনের জন্যে পেয়েছেন। নিকট অতীত স্মরণ করা যেতে পারে; গত বছরের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সময় চিকিৎসকসমাজ নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অসংখ্য জীবন রক্ষা করেছে। আমার জানা মতে চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ৯ (নয়) জন চিকিৎসক সে সময় প্রাণ হারিয়েছেন; আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে তাঁদের স্মরণ করছি।৭ই মার্চের ভাষণে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী,শতাব্দীর মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান সতর্ক করেছিলেন,মনে রাখবেন শত্রুবাহিনী পিছনে ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু মুসলমান যারা আছে তাঁরা আমাদের ভাই, বাঙালী, অ-বাঙালী তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের উপর,আমাদের যেন বদনাম না হয়।’ এই দুর্যোগে আমরাও খেয়াল রাখবো আমাদের যেন কোন বদনাম না হয়; কোন রোগী বিনা কারণে যেন চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে না যায়,সেবাঅন্তঃপ্রাণ হিসেবে আমাদের সুমহান ঐতিহ্য যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। ৫০০০ চিকিৎসকের সরকারি চাকুরিতে যোগদানের অনুষ্ঠান উপলক্ষে পরম শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ডাঃবায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ ভাই ‘হিপোক্রেটিক শপথ’ বাংলায় অনুবাদ করেছিেলন। এটা হৃদয়ঙ্গম করতে পারলে বোঝা যায় আমাদের পেশাটা সত্যিই কত মহান, কত মানবিক, কত সেবাপ্রবণ, কত দায়িত্বপূর্ণ। চিকিৎসকের বিজয় মানে রোগের পরাজয়, নির্মমতার পরাজয়; রোগাক্রান্তের বিজয়, মানবতার বিজয়। আসুন, আরেকবার দৃপ্তকণ্ঠে, নিঃশঙ্কচিত্তে, আস্থার সাথে উচ্চারণ করি হিপোক্রেটিক শপথ ( আধুনিক সংস্করণ):
#আমি_শপথ_করছি_যে_আমার_সর্বোচ্চ_সক্ষমতা ও বিচারবোধ দিয়ে আমি এ সমস্ত অঙ্গীকার পূরণ করবো:
★আমি শ্রদ্ধা করবো সে সকল চিকিৎসকের কষ্টার্জিত অর্জনকে যাদের পদাঙ্ক আমি অনুসরণ করে চলছি এবং আমার নিজের এতদ্বিষয়ক জ্ঞান ভবিষ্যতের অনুসরণকারীদের মাঝে আনন্দিতচিত্তে বিতরণ করবো।

★রোগীর কল্যাণের জন্য আমি প্রয়োজনীয় সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো; বর্জন করবো অতিচিকিৎসা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য হয় না এমন ধারণার যমজ ফাঁদকে।

★আমি স্মরণ রাখবো যে চিকিৎসা তথা বিজ্ঞানের শিল্পমাধুর্য রয়েছে এবং হৃদয়ের উষ্ণতা, সহানুভূতি আর বোঝাপড়ার গুরুত্ব চিকিৎসকের ছুরি বা ঔষধের গুরুত্বের চেয়ে বেশি।

★আমি জানি না এ কথা বলতে আমি সংকোচ বোধ করবো না অথবা রোগীর আরোগ্যলাভের জন্য প্রয়োজনে আরো দক্ষ কোন সহকর্মীর শরণাপন্ন হতে আমি দ্বিধা করবো না।

★আমার রোগীর গোপনীয়তা আমি পূর্ণাঙ্গরূপে রক্ষা করবো, কারণ তার সমস্যাসমূহ জনসমক্ষে প্রকাশের জন্য নয়। বিশেষভাবে আমি খেয়াল রাখবো তার জীবনমৃত্যুর সাথে জড়িত বিষয়সমূহকে। মানুষের জীবন বাঁচানোর মহান দায়িত্ব লাভ করে আমি ধন্য। কিন্তু আমি সতর্ক থাকবো যে আমার কারণে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। এই দারূণ দায়িত্ব আমি পালন করবো অতিশয় বিনয়ের সাথে এবং আমার নিজের দুর্বলতার প্রতি সচেতন থেকে। সর্বোপরি, আমি নিজেকে কখনোই সৃষ্টিকর্তার মত সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী মনে করবো না।

★আমি স্মরণ রাখবো যে আমি কেবল জ্বরের পরিমাপ বা ক্যানসারের চিকিৎসা করছি না বরং একজন অসুস্থ সমগ্র মানুষকে চিকিৎসা করছি যার অসু্স্থতা তার পরিবার এবং তাদের আর্থিক অবস্থাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অসুস্থ মানুষের জন্য যথাযথ সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে আমি এসব আনুষঙ্গিক বিষয়কেও যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করবো।

★যেহেতু প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম তাই আমি যেখানে সম্ভব সেখানেই রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করবো।

★আমি বিস্মৃত হবো না যে আমি সমাজেরই একজন সদস্য যে সমাজের সকল মানুষের সুস্থ দেহে সুস্থ মন নিশ্চিতকরণসহ রোগ নিরাময়ে আমার বিশেষ সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে।

★আমি যদি এ শপথ ভঙ্গ না করি তবে আমি জীবন ও শিল্পসৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবো; আমাকে শ্রদ্ধা করা হবে এবং মানুষ আমাকে মনে রাখবে ভালোবাসার সাথে। আমার পেশার সুন্দরতম ঐতিহ্যসমূহ রক্ষায় আমি সর্বদা সচেষ্ট থাকবো। সেবাপ্রার্থীদের রোগমুক্তিদানের আনন্দ আমাকে সদা অনুপ্রানিত করবে।
ভাবানুবাদ: ডাঃবায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ

#মানবতার_জয়_হোক_চিকিৎসকের_জয়_হোক কোভিড১৯-এর বিরুদ্ধে, সকল রোগশোকের বিরুদ্ধে, সকল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, সকল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে, সকল অস্বীকৃতির বিরুদ্ধে, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে।মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হোন।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

ডাঃ ফজলে এলাহী খাঁন
সহঃঅধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান,
কিডনি বিভাগ,
আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী, এবং
সভাপতি
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ(স্বাচিপ),নোয়াখালী জেলা।

আপনার মতামত দিন :