আইইডিসিআরের কর্তৃত্বে নিষ্ক্রিয় ৭ ল্যাব Emon Emon Chowdhury প্রকাশিত: ৩:৪৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২০ আইইডিসিআর-এর একক কর্তৃত্বের কারণে সরকারি-বেসরকারি ৭টি ল্যাব করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করতে পারছে না। ০১ এপ্রিল (বুধবার) দৈনিক যুগান্তরে প্রিন্ট সংস্করণে এমন সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সুযোগ না দিয়ে আইসিডিডিআর, বি-কে নামমাত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাব ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল থাকা সত্ত্বেও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। পরীক্ষার জন্য অপেক্ষমাণদের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। এসব কারণে করোনাভাইরাসের পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না।ফলে আগের মতোই শুধু ঢাকায় দুটি ও চট্টগ্রামে একটি ল্যাবে চলছে পরীক্ষা। এতে প্রস্তুত সাতটি ল্যাব নিষ্ক্রিয় অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১০টি ল্যাব এ ভাইরাস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আরও ১৯টি ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। ১৫ এপ্রিলের মধ্যেই এগুলো কাজ শুরুর মতো অবস্থায় যাবে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা একটি পরিকল্পনা করে কাজ করছি। তাই অনেকগুলো ল্যাব প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ বা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়নি, বিষয়টি সে অর্থে ঠিক নয়। আমরা মনে করি, যখন আইইডিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না, তখন ওই ল্যাবগুলোর সহায়তা নেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে আমরাই নমুনা সংগ্রহ করব এবং কোন ল্যাব পরীক্ষা করবে, সেটিও আমরাই নির্ধারণ করব। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- করোনাভাইরাসে সন্দেহভাজন সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও একাধিকবার অধিকতর পরীক্ষা করার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। সামগ্রিক বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সরকারের পক্ষ থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৯টি ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। এ ক্ষেত্রে সমন্বিত পুল করে নমুনা সংগ্রহে ব্যাপক জনবল অন্তর্ভুক্ত করা না হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। সন্দেহভাজন অনেকেই থেকে যাবে পরীক্ষার বাইরে। ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সন্দেহভাজন যে হবে, তাকেই পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আইইডিসিআরের ব্রিফিংয়ে জানানো হল নতুন দু’জন রোগী পাওয়া গেছে। তাদের একজনের উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। এটা নিশ্চিত প্রমাণ করে সামাজিক সংক্রমণ চলছে। তিনি বলেন, সারা দেশে প্রাইভেট পর্যায়ে প্রচুর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে টিম গঠন করে সব সন্দেহভাজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে পুল তৈরি করা না হলে, পর্যাপ্ত নমুনা পাওয়া যাবে না এবং আশানুরুপ পরীক্ষা করা সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে তিনটি সর্বাধুনিক মানের পিসিআর ল্যাব রয়েছে। টেকনোলজিস্টদের প্রশিক্ষণ দেয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলে এখন থেকেই কেন্দ্রীয়ভাবে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের লক্ষণ-উপসর্গ থাকায় সোমবার গণমাধ্যমের এক কর্মী পরীক্ষা করাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে যোগাযোগ করেন। অধিদফতরের এক কর্মকর্তা তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনাইউনিটে অবস্থান করতে বলেন। পাশেই শিশু হাসপাতালের ল্যাব থেকে তার নমুনা সংগ্রহের জন্য টেকনোলজিস্ট পাঠানো হবে। কিন্তু প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরও নমুনা সংগ্রহে কেউ না এলে তিনি চলে যান। শিশু হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, আইইডিসিআরের অনুমতি না পাওয়ায় প্রথমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। পরে অন্য ব্যবস্থাপনায় ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর আগে সন্দেহভাজন এক রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে রাজধানীর ডেল্টা হাসপাতালের প্রায় ১০ জন চিকিৎসক ও নার্স কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হন। পরে কোয়ারেন্টিনে যেতে হয় হাসপাতালের সব কর্মীকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর’বি) এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, তাদের গবেষণাগারে আটটি পিসিআর মেশিন রয়েছে। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য রয়েছে উচ্চপ্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী। যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সব গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও এই ল্যাব ও জনগোষ্ঠী কাজে লাগাতে আইইডিসিআর অনীহা প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত আইইডিসিআর ল্যাব কাজে লাগানোর কথা বলা হলেও নিজস্ব ব্যবস্থায় নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার অনুমতি মেলেনি। এমনকি আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে করোনা পরীক্ষার কিট দেয়া হয়েছে মাত্র ১০০টি। করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারীতে পরিণত হয়েছে। সারা বিশ্বে এই মহামারী মোকাবেলায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু দেশের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনকে (নিপসম) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, প্রতিবছর নিপসম থেকে দেড়শ’জনের বেশি শিক্ষার্থী জনস্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে এমপিএইচ ও এমফিল ডিগ্রি অর্জন করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞে পরিণত হচ্ছেন। কিন্তু চলমান করোনা পরিস্থিতিতে এদের কাজে লাগানোর কোনো ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত করা যায়নি। তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর মতো জুনোটিক (প্রাণীবাহিত রোগ) রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া নিপসমে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাব রয়েছে। শুধু বায়োসেফটি নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই ল্যাবেই করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব। তাছাড়া নিপসমের রয়েছে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত জনবল। কিন্তু আইইডিসিআরের পাশেই অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানকে কেন কাজে লাগানো হচ্ছে না, তা বোধগাম্য নয়। সূত্র: দৈনিক যুগান্তর আপনার মতামত দিন : SHARES অপরাধ ও অসংগতি বিষয়: