করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কিডনী রোগীদের করণীয় – ডাঃ ফজলে এলাহী খাঁন

Shahadat Shahadat

Hossain

প্রকাশিত: ১১:৪২ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০২০

বিশ্বব্যাপি এখন চরম আতংকের নাম কোভিড-১৯।  যা করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত । সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের শিরোনামে প্রাধান্য বিস্তার করেছে এই ভাইরাস টি। এশিয়ার বিভিন্ন অংশ এবং এর বাইরেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন করে আপনি এই ভাইরাসটির সংক্রমণ ও বিস্তারের ঝুঁকি অনেক আংশেই কমিয়ে আনতে পারেন।

কতটা ভয়ংকর এই ভাইরাস?

শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুস্থতার মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং জ্বরসহ হালকা লক্ষণ দেখা দিতে পারে । কিছু মানুষের জন্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মক হতে পারে। এর ফলে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট এবং অর্গান বিপর্যয়ের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ মারাত্মক হয়। এই ভাইরাস সংক্রমণের ফলে বয়স্ক ও আগে থেকে অসুস্থ ব্যক্তিদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কিডনী । যাকে বাংলায় বলে বৃক্ক। পিঠের নিচের দিকে মেরুদণ্ডের দুই পাশে একটি করে দুটি শিম বিচির আকৃতির অঙ্গটিই কিডনি বা বৃক্ক, যার আকৃতি ৮ থেকে ১২ সেন্টিমিটারের মতো। প্রতিটি কিডনির ভিতরে রয়েছে লাখ লাখ কোষ , যা নেফ্রন নামে পরিচিত। এই নেফ্রনগুলো শরীরের রক্ত ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বিপাকীয় আবর্জনা গুলো বের করে দেয়, তাই কিডনিকে আমাদের শরীরের পরিশুদ্ধির অঙ্গ বলা চলে।

কোভিড-১৯ তথা নোভেল করোনা ভাইরাসে কিডনী রোগে আক্রান্ত রোগীরা উচ্চ ঝুঁকি তে রয়েছেন।
করোনা ভাইরাসের কারনে কিডনী বিকল হয়ে মৃত্যু ঘটার ও সম্ভাবনা বেশি।

# কিডনী রোগীদের ক্ষেত্রে সর্তকতা সমূহঃ-

* নিয়মিত ভালোভাবে হাত ধোয়া
* হাঁচি- কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা।
* মাস্ক ব্যবহার করে নিজের ও অন্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
*যতটুকু সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা।
* সিরাম ক্রিয়েটিন-ইলেক্ট্রলাইটস সহ কিডনী রোগের নিয়মিত চেকআপ গুলো করা।
* ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা।
* পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত ওষুধ সেবন না করা।
* ঠান্ডা বা ফ্লু আক্রান্ত সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
* ডায়ালাইসিস গ্রহণ কারী রোগীদের নিয়মিত শিডিউল অনুযায়ী ডায়ালাইসিস সেবা গ্রহন করা।
* সাধারন সর্দি-কাশি বা জ্বর হলে বিচলিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা।
* রোগীদের নির্ধারিত খাদ্যতালিকা মেনে চলা।
* কোন সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।

তাছাড়া সব সময়ের মত ভয়াবহ কিডনী বিকল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে নিচের পদ্ধতি সমূহ মেনে চলা আবশ্যক

* কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করা।
* উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখা।
* স্বাস্থ্য খাবার গ্রহণ ও ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা।
* পর্যাপ্ত পরিমান পানি পাণ করা।
* ধূমপাণ থেকে বিরত থাকা।
* নিয়মিত কিডনীর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা।

কিডনি রোগীদের খাবারের গ্রহনে ক্ষেত্রে যে বিষয় গুলো খেয়াল রাখতে হবে কিডনি রোগীরা তাদের দৈনন্দিন পরিচালনার জন্য খাদ্য তালিকা বা রুটিন অনুযায়ী খাবার খেতে হবে।

নিচে তাদের খাবার নিয়ে আলোচনা করা হলো :

যে সব খাবার খাবেন : সবজি, লাউ, চিচিঙ্গা, করল্লা, বিচি ছাড়া শসা, সজনা, ডাটা শাক, লাল শাক, কচুশাক জিঙা, পেঁপে হেলেঞ্চা শাক ইত্যাদি।

সে সব সবজি খাবেন না (রক্তে পটাশিয়াম বেশি থাকলে) :

ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, কচু, মুলা, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, গাজর, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি, মুলাশাক ইত্যাদি। প্রাণিজ আমিষ, যেমন : মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি। সীমিত পরিমাণে খাবে। ডাব, কলা, আঙ্গুর তো একে বারেই খাবেন না। কেননা, এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কিডনি রোগীদের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কিডনি রোগীদের রক্ত পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে থাকে। পেঁপে, নাসপাতি ইত্যাদি। রোগীর খাদ্য তালিকায় প্রোটিন রাখতে হবে রোগের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে। যেমন : রোগীর রক্তের ক্রিয়েটিনিন, শরীরের ওজন, ডায়ালাইসিস করেন কিনা, করলেও সপ্তাহে কয়টা করেন তার ওপর নির্ভর করে প্রোটিনের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।

লেখক
ডাঃ ফজলে এলাহী খাঁন
সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান(কিডনী বিভাগ)
আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ,নোয়াখালী।
সাংগঠনিক সম্পাদক,বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন।

আপনার মতামত দিন :