করোনায় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনা : সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চান বিশেষজ্ঞরা

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ১২:২১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২০

করোনা চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত ও প্রাণোৎসর্গ করা চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রণোদনার ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দিতে উৎসাহিত হবেন। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এটি দেওয়া হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছেন কেউ কেউ। এই দুর্যোগে শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পাশে দাঁড়ালে বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলে জানান তারা।

করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকালে নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ প্রণোদনা ঘোষণা করেন তিনি।

এতে বলা হয়েছে, চিকিৎসক-নার্সসহ কোনো স্বাস্থ্যকর্মী দায়িত্বকালীন সময়ে করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের জন্য ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবীমা চালু করা হবে।

যা বললেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক:

প্রণোদনার ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

প্রণোদনা ঘোষণার পর দুপুরে এ অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি।  

অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকসহ সকল স্বাস্থ্যকর্মী ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এ অবস্থায় তাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে একটি প্রণোদনার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করি। স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা বিবেচনা করে তিনি এ আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। এতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেবা দিতে উৎসাহিত হবেন।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক আরও বলেন, ‘এছাড়াও পরিস্থিতি খারাপ হলে পশ্চিমবঙ্গের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করার পরমর্শ দিই।তাতেও তিনি সাড়া দিয়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর দাবি হলো: চিকিৎসকরা যেন মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে যান।এক্ষেত্রে সকল স্বাস্থ্যকর্মী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) পরিধানের বিষয়টি যথাযথভাবে মেনে চলবেন।’

সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চান পেশাজীবী সংগঠনগুলো:

কোন প্রক্রিয়ায় এ প্রণোদনা দেওয়া হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে পেশাজীবী সংগঠনগুলো নেতারা বলেছেন, এই দুর্যোগে বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রণোদনার আওতায় না আসলে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ তারা হারিয়ে ফেলবেন।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে কিভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশেনের (বিডিএফ) প্রধান উদ্যোক্তা ডা. নিরুপম দাশ বলেন, ‘ঝুঁকিভাতা হিসেবে প্রণোদনা ঘোষণা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এটা চিকিৎসকদের অন্যতম একটি দাবি ছিল। সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতের চিকিৎসকরাই এ পরিস্থিতিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ঘোষণায় বেসরকারি চিকিৎসকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। আমরা বেসরকারি চিকিৎসকদের জন্যেও তা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কর্মক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাওয়া কোনো কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা আছে—বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. নিরুপম দাশ বলেন, ‘কর্মক্ষেত্র থেকে যদি কেউ পালিয়ে যান, দায়িত্ব পালন না করেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এটি আমাদের ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা। এ দায় চিকিৎসকরা এককভাবে গ্রহণ করবেন না। আমাদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্পূর্ণ ও সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি। তার কাছে চিকিৎসকদের বিষয়ে নেতিবাচক বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। চিকিৎসকরাই কিন্তু এ পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছেন।

বাইরে থেকে প্রয়োজনে চিকিৎসক আনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে কিভাবে দেখেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা সেবা প্রদানে যথেষ্টই স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাহির থেকে চিকিৎসক আনার বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা সক্ষম। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। এটি ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা। কেন এমনটা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।

তাহলে ঢাবির একজন ছাত্র বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠ নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে বিডিএফ নেতা বলেন, ‘কোনো রোগী যেন বিনা চিকিৎসায় ফেরত না যায় সে বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আমরা বলেছি, করোনা কেন্দ্রগুলোকে যদি ঠিকমতো কার্যকর করা যায়, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কোন রোগীই চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলো কতটুকু প্রস্তুত তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা মনে করি, প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতাল যদি সরকারি হাসপাতালের মতো প্রস্তুত করা হয়, তবে বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

জানতে চাইলে ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি এন্ড রাইটসের (এফডিএসআর) মহাসচিব ডা. শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) এ ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরাই করোনা আক্রান্তের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন। কিন্তু ঘোষণার বিষয়গুলো পরিষ্কার না। তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এর ফলে বেসরকারি চিকিৎসকরা এর আওতাভুক্ত কিনা সেটা নিশ্চত নয়। রোগীর পরিমাণ যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে শুধু সরকারি হাসপাতাল দিয়ে তা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি দেখে ধারণা করা যায়, সামনে আরও খারাপ সময় আসছে। এক্ষেত্রে এখনই বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করা উচি। তাদেরকে পরীক্ষা করার অনুমতি দেয়া উচিত। আর বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও এই প্রণোদনার আওতাভুক্ত করা উচিত। কেননা তারাও তখন ঝুঁকিতে পরবে। এ জায়গাটি আমাদের কাছে স্পষ্ট না। বীমা সুবিধাটি যেহেতু যারা ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিবে তাদের জন্য, সুতরাং এ জায়গাগুলো স্পষ্ট হওয়া উচিত।

চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন না করার বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রী কথাগুলো বলেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে চিকিৎসা খাতে কিছুটা অরাজকতা ছিল। কিন্তু এখন তা ঠিক হয়ে গেছে। তিনি হয়তো অভিমানবোধ থেকে কথাটা বলেছেন। চিকিৎসকদের ব্যাপারে আমাদের সমাজে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমার মনে হয় চিকিৎসকদের উৎসাহ প্রদান করা উচিত। আমার মনে হয় তথ্যগুলো ঠিকভাবে তাঁর কাছে যাচ্ছে না। হয়তো দুই একটা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পদ্ধতিগত অব্যবস্থাপনার জন্য চিকিৎসকদের সম্পূর্ণ দায়ী করা উচিত হবে না।’

বাইরে থেকে প্রয়োজনে চিকিৎসক আনার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কিভাবে দেখেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকদের পালিয়ে যাওয়ার যে তথ্য তাঁর কাছে গেছে হয় তো তার পরিপেক্ষিতেই এ ধরনের মন্তব্য এসেছে। আমি মনে করি সংশ্লিষ্টরা তথ্যগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেননি। সারা বিশ্বেই এখন চিকিৎসক সংকট, সুতরাং তা বাস্তবসম্মত না। আশা করি, দেশে ভয়াবহ অবস্থা হবে না। তবে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। শুধু চিকিৎসকদের জন্য না, এ অবস্থায় কাজ করছে এমন প্রত্যেককে প্রণোদনা এবং নিরাপত্তা প্রদানের কথা বলেছি।

আপনার মতামত দিন :