গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পেশাগত সুরক্ষা বিশেষ করে নিয়মিত বেতনভাতার পাশাপাশি আপদকালীন প্রণোদনা নিশ্চিত করতে মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি।

বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘করোনার এ মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত অবাধ তথ্য সংগ্রহ, প্রকাশ ও প্রচার এটি সর্বজনবিদিত। ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে পৃথিবীর কোনো দেশেরই এ সংকট কার্যকরভাবে মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সামর্থ্য ও প্রস্তুতি ছিল না, তাই এক্ষেত্রে ঘাটতি ও দুর্বলতা থাকাই স্বাভাবিক। এ কারণেই তথ্য গোপন নয়, তথ্য প্রচারে প্রতিবন্ধকতা নয়, বরং স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আরও বেশি অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা, পেশাগত সুরক্ষা ও বিশেষ করে নিয়মিত বেতনভাতার পাশাপাশি আপদকালীন প্রণোদনা নিশ্চিত করার জন্য মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।’

টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই নিরলসভাবে কাজ করছেন সংবাদকর্মীরা। বিশেষ করে ফ্রন্টলাইন সাংবাদিকদের অনেককেই ন্যূনতম সুরক্ষা ছাড়াই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে, যা তাদের নিজেদের ও সামাজিক সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সংবাদক্ষেত্র ও সংবাদকক্ষের চরিত্র বিবেচনায় একজন আক্রান্ত হলে তা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ইতোমধ্যেই অন্তত একজন সংবাদকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং ওই চ্যানেলের আরও প্রায় অর্ধশতাধিককর্মী কোয়ারেন্টিনে আছেন। এ অবস্থায় অবিলম্বে গণমাধ্যমকর্মীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেন গণমাধ্যমের কোনো পর্যায়ের কর্মীর নিজেদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি না হয়, তা মালিকপক্ষকেই নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদমাধ্যম কর্মীদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) সরবরাহ নিশ্চিত করা। ঝুঁকি এড়াতে নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের কর্মস্থল এবং সংবাদ সংগ্রহ স্থানে যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সম্মিলিত উদ্যোগে বিকল্প ব্যবস্থায় সংবাদ সংগ্রহের কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে মালিকদের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাংবাদিকরা তাদের মাসিক বেতনের বাইরে প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি বা স্বাস্থ্য বীমার মতো সুবিধা পান না। নিয়মিত বেতন ভাতাও পান না অনেক গণমাধ্যমকর্মী। মালিকপক্ষের অনেকেই সুকৌশলে দীর্ঘদিন সংবাদকর্মীদের বঞ্চিত করে এসেছেন। করোনা সংক্রমণের বেশ আগে থেকেই খরচ কমানোর অজুহাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিক ছাঁটাই চলছিল। এই বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন যে হয়নি তার প্রমাণ এই দুর্যোগকালেও একটি টেলিভিশন বেশকিছু কর্মী ছাঁটাই করেছে। কোনো কোনো চ্যানেলে এখনও নিয়মিত বেতন দেওয়া হয় না। অথচ এটি অজানা নয় যে, বেশিরভাগ গণমাধ্যমের বিনিয়োগে রয়েছে ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী। এ দুর্যোগকালে গণমাধ্যমের মালিকদের নিজেদের সামাজিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন ব্যবসায়ী হিসেবে প্রমাণ করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তাই গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা, পেশাগত সুরক্ষা ও নিয়মিত বেতনভাতার পাশাপাশি আপদকালীন প্রণোদনা নিশ্চিত করতে মালিকপক্ষকেই মূল দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে মালিকদের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে।’

এছাড়া অবিলম্বে গণমাধ্যমকে জরুরি সেবাখাত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবাদকর্মীদের নিয়মিত বেতনভাতা ও প্রণোদনা নিশ্চিতের জন্য রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে ঘোষিত স্বল্প হারে ঋণ কর্মসূচির আওতাভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি পেশাদারি মনোভাব নিয়ে গণমাধ্যম মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) ও অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো), সম্পাদক পরিষদ ও এডিটরস গিল্ড এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও করা হয় টিআইবির পক্ষ থেকে।