মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এবং তার ইতিকথা : সুমন পাল

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ১:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১১, ২০২০

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট যাঁরা করোনার রোগীর কাছ থেকে স্যাম্পল কালেকশন করে এবং ল্যাবে বসে পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেয় যেটা দেখে ডাক্তার বুঝতে পারেন রোগীর রেজাল্ট পজিটিভ নাকি নেগেটিভ।

আজকে আমাদের দেশের জনগণ জোর গলায় বলছেন ১০০/১৫০/২০০ টেস্টে কি এমন ধরা পরবে? করোনার রোগীর সঠিক তথ্য পেতে প্রতি দিন ১০,০০০ পরীক্ষা করতে হবে তাহলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। আমি তাদেরকে বলতে চাই-ভাই, যাঁরা পরীক্ষা করেন তাঁরা হলেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট যাঁদের নিয়োগ ১২ বছর ধরে বন্ধ, টেস্টটা করবে কারা? কিভাবে এত পরীক্ষা হবে? কারা করবে নার্স, ডাক্তার? না ভাই! ডাক্তার পরীক্ষা করেন না, তাঁরা পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক সরকারের উপর মহল থেকে শুরু করে অনেক আমলারা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এর এই পেশা সম্পর্কে জানেন না, জানতে চান ও না! তাঁরা জানেন না ডাক্তার, নার্স এর পর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আর একটা মহান পেশা যাদের ছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা চালানো সম্ভব হয় না।

অত্যন্ত দুঃখের ব্যপার সরকারের ওপর মহল থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব সহ বড় বড় ডাক্তাররা তাঁদের বক্তব্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নামক জাতিটাকে ভুলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার ভুল নামে ল্যাব টেকনিশিয়ান বলে সম্বোধন করছেন। এটা খুব লজ্জাজনক। কাউকে তার প্রাপ্য সম্মান না দেয়া। ডাক্তাররা রোগীর কাছে না গেলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা ঠিকই রোগীর দেহ থেকে স্যাম্পল কালেকশন করছেন। বাস্তবিক অর্থে মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা সব চেয়ে বেশী ঝুঁকিতে থাকেন। যাঁরা গেজেটেড মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হওয়া সত্ত্বেও তাদের ডাকা হয় ল্যাব টেকনিশিয়ান বিষয়টা অবশ্যই কোনো যুক্তি দিয়ে বুঝানো যাবে না।

আজকে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এর অভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা হতে দেরি হচ্ছে। জেলা উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ দুই জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকার কথা কোথাও একজনও নেই। ১২ বছর নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় হাজার হাজার পাশ করা ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আজ বেকার। যাদের অনেকের সরকারি চাকুরীর বয়স চলে গেছে নিয়োগের আশা করতে করতে।

উচ্চ শিক্ষার নাম করে বিএসসি ইন মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স সরকারি ও বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চালু করা হয়েছে। বাস্তবতা হল সরকারিভাবে যার কোন পোস্টই নেই। হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা বিএসসি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও বেকার। এমন প্রহসন আর কতদিন প্রশ্ন এ জাতির?

এখনো সময় আছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দের দ্রুত নিয়োগ দেন। WHO বলে এক জন ডাক্তারের বিপরীতে ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দরকার কিন্তু সেইখানে ৫ জন ডাক্তারের জন্য ১ জনও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নেই। আর WHO এর নিয়ম মেনে নিয়োগ দিলেই নির্ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাবে আর সাধারণ জনগণ সঠিক চিকিৎসা পাবে। এর পরেও দেশের এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন (বিএমটিএ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব ও বিএমটিপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জনাব আশিকুর রহমান ভাইয়ের ডাকে সারা বাংলাদেশের সকল মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়ে প্রয়োজনবোধে দেশপ্রেমের শপথ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করে দেশকে করোনা ভাইরাস মুক্ত করবো। তাই মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নতুন নিয়োগসহ বিএসসি মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের নতুন পদ সৃষ্টির জন্য জোড়ালো দাবি জানাচ্ছি।

লেখক :
সুমন পাল
সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ (বিএমটিপি), সিলেট জেলা শাখা।

আপনার মতামত দিন :