আদালত জামিন দিলেও মুক্তি পাননি ভারতের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কফিল খান

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৩:৫৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০

ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে  বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া দেশটির আলোচিত শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কাফিল খানকে মুক্তি দেয়া হয়নি।

আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর শুক্রবার তার মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। এজন্য আদালত গেটে তার আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলেন। কিন্তু তাকে মুক্তি না দিয়ে প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন বা এনএসএ রুজু করেছে। তিনি দেশটির মথুরা জেলে বন্দি।

আলিগড়ের পুলিশ আধিকারিক আকাশ কুলহরির বরাত দিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা জানায়, কাফিলের বিরুদ্ধে এনএসএ জারি হয়েছে, তিনি এখন জেলে থাকবেন। জামিন তিনি পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু তাঁকে ছাড়া হবে না।

এনএসএ-র আওতায় যে কোনও ব্যক্তিকে ততদিন পর্যন্ত জেলে রাখা হয় যতদিন না প্রশাসনের মনে হয়, ওই ব্যক্তি জাতীয় নিরাপত্তা বা আইনি ব্যবস্থার পক্ষে কোনও বিপদ নন।

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেন ডা. কাফিল খান।উত্তর প্রদেশ পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ২৯ জানুয়ারি মুম্বাই থেকে তাকে গ্রেফতার করে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় আলিগড়ের সিভিল লাইন্স থানায়। মুম্বইয়ে গ্রেফতার করার পর তাঁকে আলিগড় নিয়ে আসা হয়, তারপর পাঠানো হয় মথুরা জেলে।

প্রসঙ্গত, এর আগে সম্পূর্ণ বিনা দোষে ৯ মাস জেল কাটেন ভারতের প্রখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কফিল খান।

হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ৬০ জনেরও বেশি শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় ডা. কফিল খান ৯ মাস জেল কাটার পর আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত হন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডা. কাফিলের বিরুদ্ধে ওঠা চারটি অভিযোগের একটিও প্রমাণিত হয়নি। বরং ওই বিপর্যয়ের সময় সব থেকে বেশি অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর বাবা রাঘব দাস মেডিকেল কলেজে (বিআরডি হাসপাতালে) একদিনে মারা গিয়েছিল ৬০ জনের বেশি শিশু। অক্সিজেনের অভাবে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে খবর বের হয়। পরে এ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষমতায় আসার চার মাসের মাথায় এ ঘটনা ঘটায় চরম অস্বস্তিতে পড়েন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। পরে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ডা. কাফিল খানকে বরখাস্ত করেন তিনি। কিছুদিন পর তাকে গ্রেপ্তার করে নয় মাসের জন্য জেল হেফাজতেও পাঠানো হয়।

এ সময় তার বিরুদ্ধে টেন্ডার দুর্নীতি, কাজে ফাঁকি, প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়। মূলত তিনি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের আক্রোশের শিকার।

যদিও আগস্টের ১০ তারিখ থেকে ওই হাসপাতালে টানা ৫৪ ঘণ্টা অক্সিজেন ছিল না। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না করায় নিজের টাকা খরচ করেই রোগীদের জন্য সিলিন্ডার এনেছিলেন ডা. কাফিল। এজন্য সারা দেশের মানুষ তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছিল; কিন্তু কয়েকদিন পরেই উল্টো ওই ঘটনায় তার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে উত্তর প্রদেশ সরকার। নায়ক থেকে খলনায়ক বানিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এই চিকিৎসককে।

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

আপনার মতামত দিন :