আজ ৮ই মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস Muminur Muminur Rahman প্রকাশিত: ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ, মে ৮, ২০২০ থ্যালাসেমিয়া বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত একটি রোগ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ অর্থাৎ প্রায় দেড় কোটি নারী-পুরুষ নিজের অজান্তে থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মায়। মরণব্যাধি থ্যালাসেমিয়া বেশির ভাগ রোগী রক্তস্বল্পতায় ভোগে। প্রতি দুই থেকে চার সপ্তাহ পরপর তাদের নিয়মিত রক্ত নিতে হয়। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ওষুধ এবং অন্যের কাছ থেকে রক্ত নিতে হয়। এটি আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। সত্যিকার অর্থে থ্যালাসেমিয়া রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই। এই রোগের স্থায়ী চিকিৎসা হচ্ছে ‘ব্যোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন’ ও জীন থ্যারাপি। তবে এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।অথচ একটু সতর্কতা অবলম্বন করা হলেই এই মর্মান্তিক পরিণতি এড়ানো যাবে। তাই রোগটি প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি আমাদের সবার দায়িত্ব। #থ্যালাসেমিয়া_কেন_হয়? অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন জিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া হয়। বাবা অথবা মা অথবা মা-বাবা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়া জিন থাকলে বংশানুক্রমে এটি সন্তানের মধ্যে ছড়ায় #লক্ষণ:- জন্মের পর পরই এ রোগ ধরা পড়ে না। শিশুর বয়স এক বছরের বেশি হলে বাবা-মা খেয়াল করেন শিশুটি ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে, বাড়ছে শিশুর দুর্বলতা, অবসাদ অনুভব, শ্বাসকষ্ট, মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস), মুখের হাড়ের বিকৃতি, ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি, পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া, গাঢ় রঙের প্রস্রাব। #থ্যালাসেমিয়া_হলে_শিশুর_শরীরে_কী_ঘটে:- মানুষের রক্তের লোহিত কণিকার আয়ুষ্কাল চার মাস। লোহিত রক্ত কণিকা (RBC) অস্থিমজ্জায় অনবরত তৈরি হচ্ছে এবং তিন মাস শেষ হলেই প্লীহা এ লোহিত কণিকাকে রক্ত থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর লোহিত কণিকার (RBC) আয়ুষ্কাল অনেক কমে যায়। তাদের হিমোগ্লোবিন ঠিকমতো তৈরি না হওয়ায় লোহিত কণিকাগুলো সহজেই ভেঙে যায় এবং অস্থিমজ্জার পক্ষে একই হারে লোহিত কণিকা তৈরি সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে একদিকে যেমন রক্তশূন্যতা সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে প্লীহা(Spleen) আয়তনে বড় হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত আয়রন জমা হয়ে হার্ট, প্যানক্রিয়াস, লিভার, অণ্ডকোষ ইত্যাদি অঙ্গের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। বার বার রক্ত পরিবর্তনের কারণে থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের রক্ত বাহিত বিভিন্ন রোগ যেমন-হেপাটাইটিস হতে পারে, অস্থিমজ্জা প্রসারিত হয়ে যায় এবং এতে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। এতে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। #থ্যালাসেমিয়া_হওয়ার_ঝুঁকিতে_যারা:- যাদের শরীরে থ্যালাসেমিয়া রোগের জিন আছে, কিন্তু রোগের কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না, তাদের থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক বলা হয়। এরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। তবে এরা এদের সন্তানদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগের বিস্তার ঘটায়। পিতা-মাতা উভয়েই বাহ হলে থ্যালাসেমিয়া শিশুর জন্ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যে কেউ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হতে পারে। কাজেই বিয়ের আগে সবারই জেনে নেওয়া দরকার, তিনি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক কি-না! থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক জানার জন্য যা করবেন রক্তের বিশেষ ধরনের পরীক্ষা হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস দিয়ে আমরা এই রোগ নির্ণয় করতে পারি ও বাহকে শনাক্ত করতে পারি। #প্রতিরোধ: →দেশের প্রতিটি নাগরিককে এই রোগ সম্বন্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। →যদি পরিবারের কোনো সদস্যের থ্যালাসেমিয়া রোগের ইতিহাস থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। গর্ভধারণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। →থ্যালাসেমিয়া থেকে বাঁচতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, এ রোগের বাহকদের শনাক্ত করা। এ জন্য স্ক্রিনিং কর্মসূচি গ্রহণ করে বাহকদের চিহ্নিত করে পরামর্শ দিতে হবে। দুজন বাহক যদি একে অন্যকে বিয়ে না করে তাহলে কোনো শিশুরই থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করা সম্ভব নয়। →প্রতিরোধের একমাত্র উপায় বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করা। থ্যালাসেমিয়ার জিন বহনকারী নারী গর্ভধারণ করলে তার সন্তান প্রসবের আগে অথবা গর্ভাবস্থায় ৮ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে প্রি-মেটাল থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় করিয়ে নিতে হবে। এ পরীক্ষার যদি দেখা যায়, অনাগত সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে সন্তানটির মারাত্মক পরিণতির কথা ভেবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সন্তান গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যেতে পারে। #থ্যালাসেমিয়া_পরীক্ষা:- →জন্মের পর শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে যে যে পরীক্ষানিরীক্ষা গুলো করতে হবে– ১. রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC) এবং ২. পেরিফেলার ব্লাড ফিল্ম (PBF) পরীক্ষা করতে হবে। ৩. হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকলে হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস করে থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। মৃদু থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণ ও উপসর্গ খুবই অল্প থাকায় ব্লাড ট্রান্সিফিউশন লাগে না। →গর্ভস্থ সন্তানের থ্যালাসেমিয়া জানার জন্য যে পরীক্ষাগুলো করতে হবে– ১. কোরিওনিক ভিলিয়াস স্যাম্পলিং (Chorionic villus sampling) ২. অ্যামনিওসেনটিসিস (Amniocentesis) ৩. ফিটাল ব্লাড স্যাম্পলিং (Fetal blood sampling) #থ্যালাসেমিয়া_রোগের_চিকিৎসা:- থ্যালাসেমিয়া রোগের স্থায়ী চিকিৎসা হচ্ছে ‘ব্যোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন’ ও জীন থ্যারাপি যা অনেক ব্যয়বহুল। তাই এ রোগের চিকিৎসা হিসেবে ২-৪ সপ্তাহ পর পর রক্ত নিতে হয়। আমাদের দেশের মানুষ থ্যালাসেমিয়া সমন্ধে কিছুটা সচেতন হলেও এর এর সঠিক চিকিৎসা সমন্ধে একেবারে সচেতন নয়।আমরা সাধারণত ২-৪ সপ্তাহ পর পর থ্যালাসেমিয়া রোগীকে রক্ত দিয়ে থাকি যা রোগীর চিকিৎসা হিসেবে ধরা হলে কিন্তু অন্য দিকে রোগীর জন্য ক্ষতিকর হয়। কেননা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য শুধুই লোহিত কণিকার (RBC) প্রয়োজন, রক্তের অন্য কোন উপাদান নয়।কিন্তু আমরা রোগীকে সাধারণত এক ব্যাগ রক্তের (Whole Blood) সবকিছু দিয়ে থাকি এতে রোগীর রক্তের অন্য উপাদানগুলো প্রয়োজনের থেকে বেড়ে যায় ফলে শরীরে আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, প্লীহা (Spleen) বড় হয়ে যায়, পেট ফুলে যায় নানান রকম সমস্যা দেখা দেই এমন কি অপারেশন পর্যন্ত করতে হয়। তাই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সঠিক চিকিৎসা হিসেবে রক্তের হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে নিয়মিত প্রতি ব্যাগ রক্ত থেকে লোহিত কণিকার আলাদা করে রোগীর শরীরে দিতে হবে অর্থাৎ (PCV=Packed Cell Volum or RCC= Red Cell Concentrated) দিতে হবে। এতে করে রোগীর কোন সমস্যা হবে না দীর্ঘদিন সুস্থ থাকতে পারবে। দেশের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি আধুনিক ব্লাড ব্যাংকে রক্তের লোহিত কনিকা (PCV or, RCC) আলাদা করা হয় এবং ট্রান্সফিউশন দেওয়া হয়। থ্যালাসেমিয়া সমন্ধে যেকোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। লেখকঃ মোঃ মুমিনুর রহমান ল্যাবরেটরি মেডিসিন আই.এইচ.টি, রাজশাহী। এডমিন, জয়পুরহাট অনলাইন রক্তদান সংগঠন আপনার মতামত দিন : SHARES সচেতনতা বিষয়: