করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে খাদ্যতালিকা-ডাঃ ফজলে এলাহী খাঁন Shahadat Shahadat Hossain প্রকাশিত: ২:৫৭ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২০ ছবিঃ ডাঃ ফজলে এলাহী খাঁন (এনাম) সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ,নোয়াখালী। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। ইতিমধ্যে নোভেল করোনা ভাইরাসের বিস্তার বিশ্বের প্রায় ২০০টির ও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।ভাইরাসটি প্রতিরোধে দেশে দেশে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। তবে ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবচেয়ে বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দরকার ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ট্রেস এলিমেন্ট। বিভিন্ন ভিটামিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন ডি। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো ব্যক্তিগত সচেতনতা গড়ে তোলা এবং প্রত্যেকের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেম বাড়িয়ে তোলা। এর ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে মারাত্মক লক্ষ্মণ অর্থাৎ শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণ, সেগুলো সহজে প্রতিরোধ করা সম্ভব। সহজভাবে বললে, যেকোনো ভাইরাস হলো প্রোটিন যুক্ত অণুজীব, যার কারণে মানুষ জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি মারাত্মক নিউমোনিয়ায় (নতুনভাবে) আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া এই ভাইরাস ভয়ংকর প্রাণঘাতী রোগ তৈরি করতে পারে খুব সহজে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রতিদিন। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হলো কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম, যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের (দেহের কোষ, প্রোটিন ও DNA ক্ষতি করে এমন কিছু) বিরুদ্ধে লড়াই করে, শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে শরীরে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। প্রধান অ্যান্টি–অক্সিডেন্টগুলো হলো বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, ই, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ যে খাবারগুলো বেশি করে খেতে হবে, সেগুলো হলো: বিটা ক্যারোটিন: উজ্জ্বল রংয়ের ফল, সবজি। যেমন গাজর, পালংশাক, আম, ডাল ইত্যাদি। ভিটামিন এ: গাজর, পালংশাক, মিষ্টি আলু, মিষ্টিকুমড়া, জাম্বুরা, ডিম, কলিজা, দুধজাতীয় খাবার। ভিটামিন ই: কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, বাদাম তেল, বিচিজাতীয় ও ভেজিটেবল অয়েল, জলপাইয়ের আচার, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি। ভিটামিন সি: আমলকী, লেবু, কমলা, সবুজ মরিচ, করলা ইত্যাদি। ছাড়া যে খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সেগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো। এ খাবারগুলো আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে তো বাড়িয়ে তুলবেই, সেই সঙ্গে আরও বিভিন্নভাবে আপনার শরীরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে। সামগ্রিকভাবে উদ্ভিজ্জ খাবারই হলো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের সবচেয়ে ভালো উৎস, বিশেষ করে বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রংয়ের শাকসবজি ও ফল। যে ধরনের খাবারগুলো আপনার প্রয়োজন, সেগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। ১. সবজি: করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ), পারপেল/লাল পাতা কপি, বিট, ব্রোকলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি। ২. শাক: যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক। ৩. ফল: কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই, আনারস ইত্যাদি। ৪. মসলা: আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি, গোলমরিচ। ৫. অন্যান্য: শিম বিচি, মটরশুঁটি, বিচিজাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল ও আটা, বাদাম। ৬. টক দই: এটি প্রোবায়োটিকস, যা শ্বাসযন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্র সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। অন্যদিকে শাকসবজি, ফল, বাদামজাতীয় খাবার শরীরে নিউটোভ্যাক্স ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা স্টেপটোকোক্কাস নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ৭. চা: গ্রিন টি, লাল চায়ে এল-থেনিন এবং ইজিসিজি নামক অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরে জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অনেক যৌগ তৈরি করে শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। ৮. এ ছাড়া ভিটামিন বি-৬, জিংক–জাতীয় খাবার (বিচিজাতীয়, বাদাম, সামুদ্রিক খাবার, দুধ ইত্যাদি) শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির কোষ বৃদ্ধি করে। তাই এ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে। ৯. উচ্চ মানের আমিষজাতীয় খাবার (ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি) বেশি করে খেতে হবে। ১০. অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের খুব ভালো কাজ পেতে হলে খাবার রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপে বা দীর্ঘ সময় রান্না না করে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় রান্না করতে হবে। খাবারগুলো ছাড়াও নিউমোনিয়া প্রতিরোধে উচ্চ আমিষযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ ও টিস্যু দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এবং পাশাপাশি নতুন টিস্যু তৈরি হবে। এর সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। অপর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম শরীরে কর্টিসল হরমোনের চাপ বাড়িয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, তাই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। যে খাবার বাদ দিতে হবে সব ধরনের কার্বনেটেড ড্রিংকস, বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, তামাক, সাদাপাতা, খয়ের ইত্যাদি। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাধা দিয়ে ফুসফুসে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়, ঠান্ডা খাবার, আইসক্রিম, চিনি ও চিনির তৈরি খাবার (যা ভাইরাসের সংক্রমণে সহায়তা করে)। এ লেখার উদ্দেশ্য সঠিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে প্রত্যেকের শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করা, যাতে শুধু করোনাভাইরাস নয়, সব ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় আপনি শারীরিকভাবে সক্ষম থাকতে পারেন। তাছাড়া দৈনন্দিন এর খাদ্য তালিকা তথা ৩ বেলার খাদ্য তালিকা নিচে দেওয়া হলো। সকালের নাস্তা সকালের নাস্তায় ডিমসিদ্ধ, ডাল আর সালাত, গাজর, খিচুড়ি, ক্যাপসিকাম, বিনস, বরবটি,সয়াবিনের বড়ি বা ডিম দিয়ে বাড়িতে বানানো চাওমিন, সুজি, স্যুপ, ওমলেট এসব প্রয়োজনমতো খাওয়া যেতে পারে । আর নাস্তা সেরে নিয়ে মিড মর্নিংয়ে একটা লেবু, আপেল, পেঁপে, শসা বা যে কোনও একটা ফল খেলে মন্দ হয় না। দুপুরের খাবার সাধারণ বাঙালি খাবার— ভাত, ডাল, সব্জি, মাছের ঝোল, চাটনি, শাকভাজা, লাউ, পেঁপে বা পটলের তরকারি খাওয়া যায়। তবে খাবারের সঙ্গে সালাত আর দই বেশ উপকারী। বিকালের নাস্তা ভেজা ছোলা, বাদাম দিয়ে ঝালমুড়ি বা চানাছুর খেতে পারেন। পরে চিনি ছাড়া লিকার চা আর বিস্কুট হলে জমে উঠবে বিকাল। তবে মনে রাখতে হবে বাড়িতে আছেন বলে একাধিক বার চা ও কফি পান করা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। দিনে সর্বোচ্চ চার–পাঁচ বারের বেশি চা-কফি পান করা ঠিক নয়। রাতের খাবার রাতের খাবার ৯টার মধ্যে খেয়ে নিতে পারলে ভাল হয়। খাবার অন্তত ২ ঘণ্টা পরে ঘুমোন উচিত। রুটি, ডাল, চানা, রাজমা, চিকেন সুবিধেমতো খাবেন। খাবার পর সহ্য হলে এক কাপ স্কিমড দুধ পান করলে ঘুম ভাল হয়। লেখক ডাঃ ফজলে এলাহী খাঁন (এনাম) সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (নেফ্রোলজি) আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী। সভাপতি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নোয়াখালী জেলা শাখা। আপনার মতামত দিন : SHARES স্বাস্থ্য বিষয়: