বিএমডিসি’র স্বীকৃতিবিহীন বেসরকারি ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা কোর্স ভর্তিকে না বলুন

প্রকাশিত: ৩:২৬ পূর্বাহ্ণ, জুন ২০, ২০২০

বেসরকারি মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ম্যাটস্ পরিচালনা নীতিমালা আইন- ২০১০ এ পরিষ্কার বলা আছে, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ অধিভূক্ত বেসরকারি ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ‘ডিএমএফ’ একাডেমিক কোর্স পরিচালনার ১ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল বিএম&ডিসি কর্তৃক বেসরকারি ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধিত ও স্বীকৃত হতে হবে। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করেই অধিকাংশ বেসরকারি ম্যাটস্ পরিচালিত হচ্ছে। এতে করে ধারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এসব ম্যাটস্ থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি পাশকৃতরা। বিএম&ডিসি স্বীকৃতি না থাকায় এসব ম্যাটস্ থেকে ডিএমএফ পাশকৃতরা বিএম&ডিসি’র ‘মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার’ পেশাগত নিবন্ধন সনদ পাচ্ছে না। যে কারণে তারা কর্মক্ষেত্রে চাকরি কিংবা প্রাইভেট চেম্বার প্র্যাকটিস কোনটাই করতে পাচ্ছে না। ফলে তারা বেকার ও মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। কিছুদিন পূর্বে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক মানহীন ও ভর্তির জন্য আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থী খোঁজে না পাওয়া ৫৬ টা বেসরকারি ম্যাটস্ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, এসকল বেসরকারি ম্যাটস্ এর কারোরই বিএম&ডিসি কর্তৃক ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি ছিল না! একবার কি ভেবে দেখেছেন, ‘এই বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি ম্যাটস্ এর ‘ডিএমএফ’ পাশকৃতরা কিভাবে বিএম&ডিসি’র পেশাগত নিবন্ধন সনদ পাবেন?’ আমার তো মনে হয় না, তারা উচ্চ আদালতের আদেশ ছাড়া বিএম&ডিসি’র পেশাগত নিবন্ধন সনদ পাবেন। আর সেই মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট শরণাপন্ন বেসরকারিভাবে ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জনকারী কোন প্রার্থী হবেন?

মানলাম, সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে বিএম&ডিসি পেশাগত নিবন্ধন সনদ লাগে না। তবে অন্যান্য ডিপ্লোমা পেশাজীবী ( নার্স, মিডওয়াইফ, ফার্মাসিস্ট প্রমুখ ) যারা সরকারি কাউন্সিল নিবন্ধিত তাদের সবার লাগে। ভবিষ্যতে ডিএমএফ ধারীরও সরকারি চাকরিতে বিএম&ডিসি পেশাগত নিবন্ধন সনদ লাগবে। তাছাড়া সরকারি চাকরির সোনার হরিণ কয় জন ডিএমএফ ধারীই বা পাবেন? তারপরও বেসরকারি ভাল প্রতিষ্ঠানে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে চাকরি কিংবা প্রাইভেট চেম্বার প্র্যাকটিস করা বিএম&ডিসি পেশাগত নিবন্ধন সনদ ছাড়া অসম্ভব। বিএম&ডিসি সনদ ছাড়া প্রাইভেট চেম্বার প্র্যাকটিস করা, রোগী দেখা, এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা দেয়া নিষিদ্ধ। আদেশ অমান্যকারীর ৩ বছরের জেল ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানার উভয় দণ্ড তো আছেই।

আমার জানা মতে, সরকারি ৯ টি, বেসরকারি ২০৯ টা ম্যাটস্ বর্তমানে চালু আছে। বেসরকারি ২০৯ টা ম্যাটস্ এর মধ্যে মাত্র ৬৪ টা বেসরকারি ম্যাটস্ এর বিএম&ডিসি’র স্বীকৃতি আছে। বাকী বেসরকারি ম্যাটস্ গুলো বিএম&ডিসি স্বীকৃতি ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে। এটা স্রেফ অন্যায় করছে বেসরকারি ম্যাটস্ মালিক কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় সকল নিবন্ধিত ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উচিত, বিএম&ডিসি স্বীকৃত বেসরকারি ম্যাটস্ ছাড়া অন্য কোনো বেসরকারি ম্যাটস্ সমূহে যেনো ডিএমএফ কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি না হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া। এটি সকল ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নৈতিক দায়িত্ব। এটি ডিপ্লোমা চিকিৎসক হিসেবে এই জাতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা।

পাদটীকাঃ

★ যে সকল ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসক একবার বিএম&ডিসি নিবন্ধিত হয়েছেন, তারা যতদিন বেঁচে থাকবেন, প্র্যাকটিস করতে চাইবেন রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করতে পারবেন।

★ বিএম&ডিসি’র পেশাগত নিবন্ধন সনদ ছাড়া কোনো ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী, ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন- বিডিএমএ’ এর সম্মানিত সদস্যপদ হতে পারবেন না। বিডিএমএ কেবল সেই সকল ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে যারা বিডিএমএ’র সম্মানিত সদস্য ও ভোটার (রেফারেন্স; বিডিএমএ গঠনতন্ত্র)।

★ যেসকল বেসরকারি ম্যাটস্ এখনো বিএম&ডিসি’র স্বীকৃতি নেয় নি, তবুও শিক্ষার্থীদের ডিএমএফ মূল সনদ দিয়েছে, দিচ্ছে ম্যাটস্ কর্তৃপক্ষকে বলুন স্বীকৃতি অতিদ্রুত নিতে। অন্যথায়, শিক্ষার্থীরা এসব ম্যাটস্ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করতে পারবেন। বিএম&ডিসি’র স্বীকৃতিবিহীন বেসরকারি ম্যাটস্ পড়িয়ে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর জীবন নষ্ট করার জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রত্যেক শিক্ষার্থী ন্যূনতম ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করতে পারবেন।

বেসরকারি ম্যাটস্ অনুমোদন নীতিমালা ২০১০ এ পরিষ্কার বলা আছে, বেসরকারি ম্যাটস্ পরিচালনার ১ বছরের মধ্যে বিএম&ডিসি’র স্বীকৃতি অবশ্যই নিতে হবে। বিএম&ডিসি স্বীকৃতি না নিয়ে ৪ বছর পার করা বা শিক্ষার্থীকে ডিএমএফ মূল সনদ দেয়ার মানে কর্তৃপক্ষ স্রেফ প্রতারণা ও অপরাধ করেছে শিক্ষার্থীদের সাথে। হাইকোর্ট মামলা আমলে নিবে। এমনও অনেক বেসরকারি ম্যাটস্ পাশ ডিএমএফ আছেন যারা একাডেমিক কোর্স শেষ করে ইন্টার্ণশীপ শেষ করেছেন প্রায় ৪ বছর পূর্বে মূল ডিএমএফ সনদও পেয়েছেন কিন্তু তাদের ম্যাটস্ বিএম&ডিসি স্বীকৃতি এখন পর্যন্ত নেয় নি! যে কারণে এসব ম্যাটস্ ডিএমএফ পাশকৃতরা বিএম&ডিসি পেশাগত নিবন্ধন সনদ পাচ্ছে না। কবে নাগাদ পাবে তারও কোন হদিস নেই!

★ কিছুদিন পূর্বে ৫৬ টা বেসরকারি ম্যাটস্ বন্ধের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সকল ম্যাটস্ এর বিএম&ডিসি স্বীকৃতি ছিল না। কাজেই এ সকল ম্যাটস্ ডিএমএফ সনদ দিয়ে বিএম&ডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বর করতে বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। হাইকোর্টে মামলা করা ছাড়া তারা বিএমডিসি রেজিঃ নং পাবেন বলে মনে হয় না। হাইকোর্ট আদেশ দিলে বিএম&ডিসি রেজিঃ দেবে। কিংবা এই ৫৬ টা ম্যাটস্ পুরোপুরি ভাবে বন্ধ হয়ে গেলে এখান থেকে পাশ করা ডিএমএফ দের রেজিঃ দিতে কিংবা মানদণ্ড যাচাইয়ের জন্য বিএম&ডিসি এদের আলাদা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিতে চাইতে পারে। যারা পরীক্ষায় পাশ করবে তারাই কেবল রেজিঃ পাবে। বিদেশী ভার্সিটিতে মেডিকেল ও ডেন্টাল সায়েন্সে ডিগ্রি নিয়ে বাংলাদেশে এসে প্র্যাকটিস করতে চাইলে বিএম&ডিসি’তে এধরনের কোয়ালিফাইং পরীক্ষায় পাশ করার পর ১ বছর ইন্টার্ণশীপ করে বিএম&ডিসি’র স্থায়ী নিবন্ধন নিতে হয়।

★ মনে রাখবেন, বিএমডিসি’র পেশাগত নিবন্ধন সনদ ব্যতীত ডিএমএফ ডিপ্লোমা সনদের পাঁচ পয়সার দাম নেই।

★ সবশেষে বিএম&ডিসি’র স্বীকৃতিবিহীন বেসরকারি ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠান সমূহে ডিপ্লোমা কোর্স ভর্তিকে না বলুন।

লেখক:

ডা. এম. মিজানুর রহমান (জনস্বাস্থ্যবিদ)

এক্স; তথ্য, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিডিএমএ), কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ।

সাংগঠনিক সম্পাদক,

পাবলিক হেলথ্ স্পেশ্যালিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পিএইচএসএবি), কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ।

আইন শাস্ত্রের শিক্ষার্থী ও সুলেখক।

 

আপনার মতামত দিন :