১৬ বছরে বিশেষজ্ঞ তৈরি হয়েছে মাত্র ১৬ জন, এমডি আসন মাত্র ৪টি দেশের ক্যান্সার বিষয়ক উচ্চশিক্ষা সংকটে, নেই এফসিপিএস করার সুযোগ Jewel Das Jewel Das Guptha প্রকাশিত: ১২:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০ দেশের ক্যান্সার (অনকোলজি) বিষয়ক উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রম সংকটময় সময় পার করছে। প্রতিবছর দেড় থেকে দুই লাখ রোগী বাড়লেও বাড়ছে না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এতে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা। ক্যান্সার বিষয়ক উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী চিকিৎসকদের জন্য দেশে বেশ কিছু বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘মেডিকেল অনকোলজি’ বিষয়ে নেই এফসিপিএস করার সুযোগ। এমডি করার সুযোগ থাকলেও বার্ষিক আসন মাত্র ৪টি। এক্ষেত্রেও রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। তাই দেশে উপযুক্ত চিকিৎসা না পেয়ে রোগীরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। মেডিকেল অনকোলজিস্টরা জানান, উন্নত বিশ্বে ক্যান্সার চিকিৎসায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় মেডিকেল অনকোলজি বিষয়ে। রোগ শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার্থে প্রথমে যাদের সহযোগিতা প্রয়োজন তারা হলেন মেডিকেল অনকোলজিষ্ট। ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান এমনকি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতেও ক্যান্সার চিকিৎসায় প্রধান ভূমিকা রাখছে মেডিকেল অনকোলজিস্টরা। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে এই বিভাগটি খোলা হয়। এরপর মেডিকেল অনকোলজিস্ট বের হয়েছে মাত্র ১৬ জন। অথচ বর্তমানে যে হারে রোগী বাড়ছে, তাদের ন্যূনতম চিকিৎসা প্রদানের জন্য মেডিকেল অনকোলজিষ্ট প্রয়োজন কমপক্ষে ১০০ জন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মেডিকেল অনকোলজির ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমডি কোর্সে মাত্র ৪টি আসন রয়েছে। কিন্তু এফসিপিএস করার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে রেডিয়েশন, গাইনি ও পেডিয়াট্রিক অনকোলজির ক্ষেত্রে এফসিপিএস, এমডি ও এমএস করার সুযোগ রয়েছে। এফসিপিএসের ক্ষেত্রে আসনের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেখানে মেডিকেল অনকোলজিস্ট আছে মাত্র ১০ জন। অথচ গড়ে প্রতিদিন বহির্বিভাগে রোগী আসে চার শতাধিক। এছাড়া রয়েছে ডে-কেয়ার। যেখানে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি দেয়া হয়। পাশাপাশি নতুন রোগী ভর্তি, ডিসচার্জ ইত্যাদি তো আছেই। হাসপাতালটিতে রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট আছেন ৩০ জন। যদিও রোগীদের রেডিওথেরাপি দেয়ার কাজটি করে টেকনোলজিস্টরা। আর রোগীর রেডিয়েশনের সঠিকতা পরিমাপ করে মেডিকেল ফিজিসিস্টরা। জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দেশে ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছে। যাদের চিকিৎসার প্রধান দায়িত্ব মেডিকেল অনকোলজিস্টদের। অথচ অ্যাকাডেমিক কোর্সে বছরে মাত্র চারজনকে সুযোগ দেয়া হয়। এতে গত ১৬ বছরে দেশে মেডিকেল অনকোলজি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছেন মাত্র ১৬ জন। যদিও প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে লক্ষাধিক। এমনিতেই দেশের সামর্থ্যবান রোগীরা ইন্ডিয়াসহ অন্যান্য দেশে চিকিৎসা নিতে যান। এভাবে চলতে থাকলে একসময় দেশে ক্যান্সার চিকিৎসক পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। জানা যায়, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা ও শিক্ষার পেছনে একটি দুষ্টচক্র কাজ করছে। যারা পদে পদে ক্যান্সার চিকিৎসার উৎকর্ষ সাধনে বাধা দিচ্ছে। এই চক্র নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নিজেদের অযৌক্তিক মতামত চাপিয়ে দিয়ে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্বল করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ভারি যন্ত্রপাতি আমদানিকারকরাও। মূলত ক্যান্সার চিকিৎসায় ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগে। কিন্তু রেডিয়েশন অনকোলজিস্টদের ক্লিনিক্যাল প্র্যাকটিস করার সুযোগ না থাকায় তারাই এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এমনকি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার জন্য তারা ক্লিনিক্যাল অনকোলজিস্ট নামে একটি নতুন বিভাগ খোলার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিকভাবে যার কোনো ভিত্তি নেই। তারা সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে না পারায় অনেক ক্যান্সার রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পেয়ে অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। কিন্তু নিজেদের সুবিধার্থে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে তারা মেডিকেল অনকোলজির কোর্স চালু করতে দিচ্ছে না। এই চক্র কোনো হাসপাতালে বিভাগ খুলতে দিচ্ছে না। এমডি কোর্সে যেন নতুন চিকিৎসকরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী না হয়, সেজন্য বিভিন্ন কৌশলও অবলম্বন করছে তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বড় মেডিকেল কলেজগুলোতে রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগ রয়েছে। কিন্তু মেশিন নষ্ট। এমনকি চিকিৎসকও নেই। সব রেডিয়েশন অনকোলজিস্টরা ঢাকায় বসে আছেন। ফলে প্রান্তিক মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা থেকে। ক্যান্সার হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া কোথাও মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ নেই। জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, গত তিন দশকে ভারতে মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের উৎকর্ষে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই বিভাগটি কোনোভাবেই বিকশিত হতে পারছে না। এই বিভাগ বিকশিত হলে কিছু চিকিৎসক প্রাইভেট রোগী দেখার সুযোগ পাবেন- এই ভেবে পদে পদে নানা প্রতিকূলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ২০৩০ সালে দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। কিন্তু তাদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, দেশের সব মেডিকেল কলেজে মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ খোলার জন্য আবেদন করেছি। উচ্চশিক্ষায় আসন বাড়ানোর আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো আবেদনই আলোর মুখ দেখছে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য ক্যান্সার চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল হাসেম খান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে সভা করেছি। দেশে কোন কোন খাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কম আছে সে বিষয়ে খোঁজ নিতে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা হবে। সুত্রঃ যুগান্তর আপনার মতামত দিন : SHARES জাতীয় বিষয়: