মহামারী তদন্তে চীনে বিশেষজ্ঞ দল পাঠাল ডব্লিউএইচও

Selim Selim

Reja Sobuj

প্রকাশিত: ৬:০৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ তদন্তে দেশটিতে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) হু। ভাইরাসের সংক্রমণ, প্রতিরোধে চীন সরকারের কার্যক্রম, দেশটির বাইরে মানুষ থেকে মানুষে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানে সেখানে যাচ্ছে ওই তদন্ত দল। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক টুইট বার্তায় তদন্ত দল পাঠানোর তথ্য নিশ্চিত করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়াসাস। রয়টার্স।

সংবাদ মাধ্যমটি তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সোমবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, ৯ ফেব্রুয়ারি রোববার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০৮ জনে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৭১ জন। এর আগে রোববার চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২০০২-০৩ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্সকেও (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) ছাড়িয়ে গেছে। সে সময় সার্স ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের ২৪টিরও বেশি দেশে মোট ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়, আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৯৮ জন।

রোববার ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়াসাস বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. ব্রুস এলওয়ার্ডের নেতৃত্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বিশেষজ্ঞ দলকে চীনে পাঠাতে আমরা বিমানবন্দরে এসেছি।’ এর আগে প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাস সংক্রমণ এবং টিকাদান, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও পোলিও নির্মূলের উদ্যোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ড. ব্রুস।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। একপর্যায়ে এই ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি (হেলথ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও। অন্তত ২৮টি দেশে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। চীনের বাইরে হংকং ও ফিলিপাইনে এতে আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ফিলিপাইনের ওই ব্যক্তিও চীনা নাগরিক। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মতো সমস্যা দেখা দেয়। ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না যায়, সেজন্য হুবেই প্রদেশকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বেইজিং। ওই অঞ্চলের সঙ্গে চীনসহ বাইরের দুনিয়ার সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাডহানম গেব্রিয়াসাস। বহু দেশেই করোনাভাইরাস শনাক্তের পদ্ধতি না থাকাই বড় দুশ্চিন্তার কারণ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্ত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তাদের সেবা নিশ্চিতে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো ঠেকাতে সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।’

করোনার ঝুঁকিতে থাকা ২০ দেশের তালিকায় ভারত : বিশ্বের যে ২০টি দেশে করোনা প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে সে তালিকায় রয়েছে ভারতের নাম। তালিকায় দেশটির অবস্থান ১৭ নম্বরে। জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেশটির সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও রবার্ট কচ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের এ সমীক্ষার সংক্রমণ সূচকে সবার ওপরে রয়েছে থাইল্যান্ড। তার ঠিক পরেই রয়েছে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। যে দেশগুলোতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যেই ২০ ছাড়িয়েছে।

সমীক্ষার প্রয়োজনে আকাশপথে চীনের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, মোট ৪ হাজার বিমানবন্দরের সঙ্গে চীনের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। আর সেই দিকটি খতিয়ে দেখেই একটি মাপকাঠি তৈরি করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ মাপকাঠির সূচকেই ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা ০.২১৯ শতাংশ। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংক্রমণের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এ বিমানবন্দরের সংক্রমণ সূচক ০.০৬৬ শতাংশ। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সংক্রমণ সূচক ০.০৩৪ শতাংশ। এরপরই আছে কলকাতা বিমানবন্দর। পাশাপাশি বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও কোচি বিমানবন্দরেও আছে সংক্রমণ আশঙ্কা।

চীন থেকে ভারত ও অন্যান্য শহরের একজনের গন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সমীক্ষাটি করা হয়েছে। আকাশপথে যাতায়াতের প্রেক্ষিত বিচার করে পর্যালোচনা করা হয়েছে সংক্রমণের মাত্রা। ব্যস্ত বিমানবন্দর ও সংক্রমিত যাত্রীর পরিসংখ্যান রাখা হয়েছে বিচার্য বিষয় হিসেবে। সংক্রমণ ঠেকাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈধ ভিসা থাকলেও চীন থেকে কারও ভারতে গমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চীনা নাগরিক বা পর্যটক, সেদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার ওপরও আছে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা। ভারত যে করোনার প্রভাবমুক্ত নয়, তার প্রমাণ ইতোমধ্যেই মিলেছে কেরালায়। চীনের উহান ফেরত তিনজনের দেহে করোনার জীবাণু মিলেছে। চীন থেকে ফেরা আরও প্রায় ২০০০ ছাত্রছাত্রীকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যেও কারও কারও শরীরে সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির এ সমীক্ষা ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়াল।

আপনার মতামত দিন :