কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স বন্ধ হলো Emon Emon Chowdhury প্রকাশিত: ৯:১২ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০ অবশেষে বন্ধ হলো কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স। এতে করে পূর্বের মতো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এককভাবে এ কোর্সগুলো পরিচালিত হবে। গত ১৫ বছর ধরে কারিগরি বোর্ডের অধীন চিকিৎসা বিজ্ঞানসংক্রান্ত এ কোর্স দুটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। সংশোধন হচ্ছে এ সংক্রান্ত আইন। ১০ ফেব্রুয়ারি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। ২ ফেব্রুয়ারি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত, হাইকোর্ট বিভাগের রায় এবং ৯ ফেব্রুয়ারি বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের ১৬৭তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই বোর্ড পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ’ বিভাগে ন্যস্ত করার বিষয়ে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২০ সালে মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্সে নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ কোর্স পরিচালনাসংক্রান্ত বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৮’র তফসিল ১-এর (১ঞ) এবং ৪-এর (৪ক, ৪ঘ) এ বর্ণিত শব্দগুলো বিলুপ্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মোরাদ হোসেন মোল্লা ১০ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবকে উল্লিখিত তফসিল সংশোধনে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন। এ সংক্রান্ত আইন সংশোধনের অগ্রগতি জানতে চাইলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুন্সী শাহাবুদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আইন সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী এটি দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে। এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনু বিভাগ (বিধি-৩) শাখা থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিবকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইনের তফসিলে মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স সংক্রান্ত বিধানাবলী বিলুপ্তকরণসংক্রান্ত কার্যক্রম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে বলা হয়। এর ফলে চলতি বছর থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো উক্ত কোর্স দুটিতে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মন্ত্রণালয়ের কার্যপরিধি অনুযায়ী মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিংসংক্রান্ত শিক্ষা কার্যক্রম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। ১৯৬২ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স এবং বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল নার্সিং কোর্স পরিচালনা করে আসছে। ২০০৫ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স পরিচালনা শুরু করলে জটিলতা সৃষ্টি হয়। গত ১৫ বছর ধরে এ নিয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বান্দ্বিক অবস্থা বিরাজমান ছিল। জটিলতা নিরসনে ২০০৭ সালে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্টের আওতায় পরিচালনার সুপারিশ করে। কিন্তু এ সুপারিশ উপেক্ষা করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কোর্স পরিচালনা অব্যাহত রাখায় জটিলতা বৃদ্ধি পায়। সূত্র বলছে, এ জটিল পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়ায় উচ্চ আদালতে তারা মামলা করেন। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে মামলাটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে নেয়া হলে ২০১৬ সালের নভেম্বরে ২০০৭ সালে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের আলোকে ‘ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট’ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। সূত্র জানায়, মেডিকেল টেকনোলজি কোর্স নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার মধ্যেই ২০১২ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নার্সিং কোর্স পরিচালনা শুরু কর। এতে জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধামন্ত্রীর নির্দেশনার পর ১৭ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা প্রতিবেদনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং কোর্স বন্ধ করার সুপারিশ করে। সেখানে বলা হয়, সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং সংক্রান্ত সব শিক্ষা কার্যক্রম ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্টের আওতায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে। এসব কোর্সে নতুন করে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৮ সংশোধন করতে হবে। উক্ত আইনের তফসিল ১ এর ক্রমিক (ঞ) এবং ক্রমিক ৪সহ উক্ত তফসিলে উল্লিখিত মেডিকেল টেকনোলজি ও নার্সিং প্রশিক্ষণসংক্রান্ত বিধানাবলী বিলুপ্ত/সংশোধন করার জন্য ৩০ দিনের মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগকে কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি মনে করে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৮-এর তফসিল সংশোধন করা হলে আদালতের প্রদত্ত রায়ে উল্লেখিত ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের প্রস্তাবিত শিক্ষা বোর্ড আইন প্রণয়ন দ্রুত হবে। সৌজন্যে : যুগান্তর। আপনার মতামত দিন : SHARES আইন-আদালত বিষয়: