‘রোগী নিয়েই তো গাড়ি চালাই, বাকিটা আল্লাহ ভরসা’

Shakil Shakil

Ahmed

প্রকাশিত: ১১:০৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া একজনের স্বজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌’আমার রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে তোলার সময় জ্বর আর শ্বাসকষ্টের কথা শুনে অ্যাম্বুলেন্স চালক নিতে রাজি হননি। অনেক অনুরোধের পরও নেননি। আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারকে কল করা হয়, তিনিও জ্বরের কথা শুনে নিতে রাজি হলেন না। তৃতীয় একজন রাজি হলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

কথা হয় উত্তরা এলাকার অ্যাম্বুলেন্স চালক মোহাম্মদ মামুন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রোগী টানতে চাই না বিষয়টি এমন না। আমরাও তো মানুষ। আট বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালাই, কোনোদিন রোগী ফিরিয়ে দিইনি। কিন্তু এখন তো জীবন নিয়ে টানাটানি। দুইটা পয়সার থেকে নিজের জীবন ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বড়।’

মামুন মিয়া আরও বলেন, ‌’কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে কয়েকদিন আগে একটা লাশ আনতে ফোন করেছিল; সেটা করোনা রোগী ছিল কিনা তাও জানি না। কিন্তু পোশাক না থাকায় না করে দিয়েছি। ওই হাসপাতালে তো এখন করোনা রোগীদেরই রাখা হচ্ছে। খারাপ লাগছে, কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।’

এতদিন পর গত ৬ এপ্রিল সুরক্ষা পোশাক পাওয়ার কথা জানিয়ে মামুন মিয়া বলেন, ‘এখন তেমন সমস্যা হবে না, তবুও সবার কাছে আমি দোয়া চাই।’

‘এই রোগীর কাপড় ধরলেও নাকি রোগটা ধরে ফেলে। আমাদের পোশাক নেই, রোগটাও নতুন, একজন থেকে আরেক জনে ছড়ায়, তাইলে কাজ কেমনে করি’—বলেন আরেক চালক মিলন মিয়া।

অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, সরকারি হাসপাতালগুলোতে তাদের জন্য শুরু থেকেই নির্ধারিত সুরক্ষা পোশাক, হ্যান্ড গ্লাভসসহ অন্যান্য সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যারা চালান, তাদের জন্য সুরক্ষা পোশাকের বিষয়টা অতোটা জোরদার নয়। এলাকাভিত্তিক অ্যাম্বুলেন্স চালকরা নিজেদের মতো করে তার ব্যবস্থা করেছেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের যানবাহন শাখার ইনচার্জ মো. শাহআলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ ঢামেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সকে পুরোপুরি করোনা রোগীর জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে। রোগীদের কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাপসাতালে এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তাদের সুরক্ষার জন্য পিপিই, হ্যান্ড গ্ল্যাভস দেওয়া হয়েছে। এই অ্যাম্বুলেন্সে অন্য রোগী নেওয়া হচ্ছে না। চালকও একজনই, তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে আলাদাভাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজই তো রোগী আনা-নেওয়া করা। কিন্তু এই সময়ে যদি আমরা কাজ না করি, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?’ ‘রোগী নিয়েই তো গাড়ি চালাই, বাকিটা আল্লাহ ভরসা’—যোগ করেন শাহ আলম।

তিনি বলেন, ‘শুরুতে রোগীর সংখ্যা কম ছিল, তাই একটি অ্যাম্বুলেন্সে যাতায়াত করা হতো। এখন রোগী বাড়ছে, তাই হাসপাতাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স চালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌’আমরা তো কেবল একজন রোগী নিয়েই বসে থাকতে পারি না, সারাদিন অসংখ্য রোগী আনা নেওয়া করতে হয়। একজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়ার পর বাকিদের নিয়ে তো যাতায়াত করতে পারবো না, তখন তো আরও সমস্যা হবে।’

আপনার মতামত দিন :