বিশাল আকারে মৃত্যুর আশংকা এখনই সাবধান না হলে মহামারী, হুঁশিয়ারী মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার Jewel Das Jewel Das Guptha প্রকাশিত: ১২:১৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২০ নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের যে স্তরবিন্যাস রয়েছে, তার তৃতীয় ধাপে পৌঁছেছে বাংলাদেশ- এখন সবাই সাবধান না হলে চতুর্থ ধাপ অর্থাৎ মহামারীর মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। জনবহুল ঢাকা শহরে যখন ক্রমশ এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, সে সময় এই সতর্ক বার্তা দিলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র। মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল বুধবার বিকালে বলেন, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ পর্যায়ে আমরা রয়েছি তৃতীয় স্তরে। তার মানে করোনাভাইরাসটি এখন সামাজিক পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে, তবে তা সীমিত আকারে। আমরা এখন সোশ্যাল ডিসট্যান্সিংয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এটা যদি যথাযথভাবে পালন করা না হয় তবে চতুর্থ স্তরে চলে যেতে পারি। তিনি জানান, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও ব্যাপকতার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের দেশগুলোকে চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। স্তর-১ : নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলো থেকে আগতদের মধ্যে কারও নমুনায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া। খবর বিডিনিউজের। স্তর-২ : বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে বা নির্দিষ্ট কোনো এলাকাতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া। স্তর-৩ : নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বৃহত্তর এলাকায় সামাজিক সংক্রমণ। স্তর-৪ : মহামারী। বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসে বিশ্বে এরইমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ লাখের বেশি মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৮১ হাজারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ লাখ লাখ রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে। অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, যাদের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তার প্রায় সবগুলোর কন্টাক্ট ট্রেসিং করার চেষ্টা করছি আমরা। হ্যাঁ, কিছু নমুনা আছে যার কন্টাক্ট ট্রেসিং বা উৎস আমরা অনুসন্ধান করতে পারিনি। সোর্স অব ইনফেকশন অ্যানালাইসিস করে আমরা কিছু কিছু এলাকাকে ক্লাস্টার হিসেবে চিহ্নিত করেছি। কিছু কিছু জায়গায় কমিউনিটি ট্রান্সমিশন রয়েছে। আমরা এখন যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি সেগুলো কঠোরভাবে মেনে চলা হলে আমরা চতুর্থ ধাপের পথে অগ্রগতিটা রুখে দিতে পারব। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ভাইরাস আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছেন তারা। সেই সব তথ্য বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে অতি সংক্রামক এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার সারাদেশে সব ধরনের কর্মকাণ্ড ও মানুষের চলাচল বন্ধ করলেও এখনও নানা অজুহাতে অহেতুক মানুষ বাইরে বেরোচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। এজন্য জরিমানাসহ নানা ধরনের শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। লোকসমাগম বন্ধ করতে মসজিদ, মন্দিরে না গিয়ে ঘরে বসে ইবাদত/প্রার্থনা করতে সরকারি নির্দেশনা জারি হলেও তাও অনেক জায়গায় মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ আসছে। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, জনগণ সচেতন না হলে কঠোর আইন প্রয়োগ করেও আদতে লাভ নেই। জনগণকেই এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে, ঘরে থাকতে হবে। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে যত বেশি সম্ভব নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলে আসছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৯৮৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং সেগুলোর মধ্যে ৯৮১টির পরীক্ষা শেষ করা হয়েছে বলে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সানিয়া তহমিনা ঝোরা জানিয়েছেন। বাকি সাতটির বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে সেসব নমুনা পরীক্ষা করা যায়নি। তবে শিগগিরই তা করা হবে। আমরা নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, নমুনা পরীক্ষার জন্য তাদের হাতে এখন ৭১ হাজার কিট রয়েছে। সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে মজুদ থাকায় নুতন কিট্ সরবরাহের প্রয়োজন হয়নি। সানিয়া তহমিনা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য সারা দেশে ২ হাজার ৪৮৫ জন চিকিৎসক এবং ৭৫৪ জন নার্সকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই ভাইরাস মোকাবেলায় ২১টি গাইডলাইনও প্রণয়ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যেগুলো অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অনেক জায়গায় চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ আসছে। এই সমস্যার সমাধানে সানিয়া তহমিনা বলছেন, তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন টেলিমেডিসিনে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়ে ২ হাজার ৩৬৭ জন চিকিৎসক স্বাস্থ্য সেবা বাতায়নের ১৬২৬৩, জরুরি সেবার ৩৩৩, আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরগুলোতে রোগীদের টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ১৭ লাখ ১৮ হাজার ২৯১ জনকে টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়েছে। আপনার মতামত দিন : SHARES জাতীয় বিষয়: