গুজরাটে করোনার চিকিৎসায় হিন্দু-মুসলিমের জন্য আলাদা ওয়ার্ড

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৮:৫১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২০

ভারতে গুজরাটের এক হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ধর্মের বিবেচনায় চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে অভিযোগ করে স্থানীয় মুসলমান বলেন, হিন্দুদের বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ওই হাসপাতালে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

আল জাজিজার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুজরাটের আহমেদাবাদে করোনা আক্রান্তদের জন্য সরকারি হাসপাতালে যে ওয়ার্ড তৈরি হয়েছে সেখানে হিন্দুদের রাখার জন্য একটা ওয়ার্ড এবং মুসলিম রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড  তৈরি করা হয়েছে। হিন্দুদের ওয়ার্ডে জায়গা পাবেন না মুসলিম রোগীরা এবং মুসলিমদের ওয়ার্ডে  রাখা হবে না হিন্দুদের।

হাসপাতালের দাবি, সরকারের নির্দেশেই এ কাজ করা হয়েছে। যদিও সরকার বলছে, এ বিষয়ে তাদের কিছুই জানা নেই। তবে রোগীরা জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে হিন্দু এবং মুসলিমদের আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ধর্মীয় এ বিভাজন নিয়ে ভারতজুড়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে, এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। স্বাধীন ভারতের সাত দশকের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। এটি শুধু অমানবিক ঘটনা নয়, অসাংবিধানিকও। কারণ সংবিধান অনুসারে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয়দের এভাবে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।

সূত্রে জানা গেছে, আহমেদাবাদের সিভিল হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ১ হাজার ২০০ টি শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ভর্তি আছেন ১৫০ জন। আরও ৩৬ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে। তারা একটি আলাদা ওয়ার্ডে আছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে অন্তত ৪০ জন মুসলিম রোগী, গত সপ্তাহেই যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক মুসলিম রোগীর পরিবারের সদস্য জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, হিন্দু ও মুসলিম রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হবে। সে অনুযায়ী রাতেই মুসলিম রোগীদের অন্য ওয়ার্ডে সরিয়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের সুপার গুণবন্ত রাঠোর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা মেনেই এ কাজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। যদিও গুজরাটের উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিতিন প্যাটেল জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন।

তবে রোগীদের বক্তব্য, প্রাথমিকভাবে রোববার সন্ধ্যায় আইসোলেশন ওয়ার্ডের ২৮ জনের নাম ঘোষণা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেকেই মুসলিম। তাদেরকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মানবতার কথা তো অনেক পরের বিষয়। গুজরাটে যা ঘটেছে তা অসাংবিধানাকি। ভারতের সংবিধানের ২৫ থেকে ২৮ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করা আছে। সংবিধানের প্রস্তাবনাতেও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি আছে। জাত, ধর্ম দেখে রোগী চিহ্নিত করা এবং পৃথক করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এটা হতে পারে না।’

গত কয়েক বছরে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভেদ এবং উস্কানি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। কয়েক মাস আগেই দিল্লিতে ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী প্রাণ হারিয়েছেন পঞ্চাশেরও বেশি মুসলিম। এখনও গৃহহীন অসংখ্য। তারও আগে এনআরসি, সিএএ নিয়ে সহিংসতা চলেছে মাসের পর মাস। রাস্তায় নেমেছেন মুসলিম নারীরা। ভারতজুড়ে তারা দিনের পর দিন অবস্থান বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। রাস্তায় নেমেছেন ছাত্ররাও। সেখানেও হিন্দু-মুসলিম বিভেদ তৈরির চেষ্টা হয়েছে। তারই মধ্যে শুরু হয় করোনার প্রকোপ।

আপনার মতামত দিন :