আটকে আছে ৫ দিন আগের রিপোর্ট, সীমিত সংখ্যক পরীক্ষাকর্মীর ওপর অমানবিক কাজের চাপ

জনবল সংকটে চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষায় নমুনা জট

প্রকাশিত: ১:২৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২০

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০ জেলা থেকে প্রতিদিন ৩শ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন অর্ধেকের মতো পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। এতে করে সংগৃহীত নমুনা জমে যাচ্ছে। বতর্মানে পাঁচ দিনের আগে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন একাধিক রোগীর স্বজন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা টেস্টের বিষয়টিকে আরো বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে না হলেও অন্তত দুদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার চেষ্টা চলছে। ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি)-এর পাশাপাশি গতকাল থেকে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়েও করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে করোনা পরীক্ষা শুরু হলে জট কিছুটা কমে আসবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের জন্য আনা জাহাজের বিদেশি নাবিক, চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর দেশে ফেরাসহ নানা কারণে করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত চট্টগ্রামে করোনা টেস্টের সুযোগ সীমিত। শুধুমাত্র বিআইটিআইডিতে করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। একটি মাত্র পিসিআর মেশিন ছিল বিআইটিআইডির। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি পিসিআর মেশিন আনা হয় এই পরীক্ষাগারে। দুটি মেশিন দিয়ে দৈনিক ৫০টি রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও এই পরীক্ষাগারে গতকাল ১৮৫টি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। রাতে-দিনে চব্বিশ ঘণ্টা কাজ করছেন এই পরীক্ষাগারের সীমিত সংখ্যক মানুষ। নানা ভোগান্তি সয়ে তারা প্রতিদিনই রিপোর্ট প্রদান করছেন। এদের অনেকে লকডাউনের মধ্যেও নানাভাবে কষ্ট সয়ে প্রতিদিন কাজে আসেন এবং গত এক মাসেরও বেশি নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন।

বিআইটিআইডির পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার এম এ হাসান গতকাল বলেন, আসলে আমার মানুষগুলোর কষ্ট কেউ দেখল না, কেউ শুনল না। কি যে অমানবিক কষ্ট করে তারা দিনের পর দিন কাজ করছেন! তিনি বলেন, করোনা টেস্ট একটি জটিল প্রক্রিয়া। আট ঘণ্টার নানা প্রতিক্রিয়া থেকে রিপোর্ট তৈরি হয়। আমার লোকজনকে অনেক কষ্ট করে একেকটি রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। আমরা কষ্ট করছি দেশের জন্য। নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে প্রতিদিনই রিপোর্ট তৈরি করছি। প্রদান করছি। তিনি বলেন, আমার সক্ষমতা ছিল দৈনিক ৫০টি নমুনা পরীক্ষা। তা দিয়েই শুরু করেছিলাম। ক্রমে একশটি করলাম, দেড়শটি করলাম। গতকাল ১৮৫টি রিপোর্ট দিয়েছি। প্রতিদিন এত বেশি নমুনা আসছে যে, আমাদের কিছু করার থাকছে না। টানা চব্বিশ ঘণ্টা তো কাজ করা যায় না। আমরা শিফটিং করে কাজ চালাচ্ছি। যাতে রাতে-দিনে সবসময় কাজ করা যায়। বিষয়টি শুধু লোকবলের নয়, এই পরীক্ষার সাথে মানুষ যেমন জড়িত, তেমনি মেশিনও জড়িত। তাই মানুষ এবং মেশিনের সমন্বয়ে সর্বোচ্চটাই আমরা করছি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১০ জেলা থেকে প্রতিদিন ৩০০টির মতো নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা সংগ্রহের ব্যাপারে শুধু সন্দেহজনক লোকদের নয়, শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংস্পর্শে যারা এসেছেন, বিদেশ থেকে এসেছেন এমন লোকজনের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। কেউ কেউ নিজ থেকেও নমুনা দেয়ার জন্য ফোন করেন। নমুনা দিতে আসেন। সংগ্রহ করা নমুনার অর্ধেকের মতো জমে যাচ্ছে প্রতিদিন। যেগুলো পরদিন করা হয়। আবার পরদিন সংগৃহীত নমুনা আটকা পড়ে। এভাবে সংখ্যা বাড়ছে। বতর্মানে পাঁচ দিনের আগে রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না বলে একাধিক রোগীর আত্মীয়স্বজন জানিয়েছেন। এতে করোনা চিকিৎসায় সংকট তৈরি হচ্ছে। তারা বলেন, আমরা নমুনা দিয়ে এসেছি। কিন্তু পজেটিভ না নেগেটিভ সেটি জানতে না পেরে মানসিক অস্থিরতার মাঝে থাকছি। সন্দেহজনক রোগীকে আইসোলেশনে রাখা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার ব্যাপারে করনীয় নির্ধারণে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামে করোনা নমুনা পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা অনেকটা কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সিভিল সার্জন ডাক্তার সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আজ থেকে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামে চালু হওয়ায় দ্বিতীয় এই ল্যাবে প্রতিদিন অন্তত ১০০ নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। চমেক হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা আগামী সপ্তাহে শুরু হবে। তখন আরো কিছু নমুনা আমরা পরীক্ষা করাতে পারব। চমেক হাসপাতালে একটি পিসিআর মেশিন বসছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, বিআইটিআইডিতে কয়েকশ নমুনা পড়ে আছে। এত বেশি নমুনা পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। চমেক হাসপাতালের পরীক্ষা আগামী সপ্তাহে শুরু হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সুত্রঃ আজাদী

আপনার মতামত দিন :