নতুন ‘হটস্পট’ কেরানীগঞ্জ, নেপথ্যে পুরান ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে সংযোগ

প্রকাশিত: ১০:১২ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২০

রাজধানীর উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত এ এলাকায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ১০৩ জন, যা এককভাবে সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের চেয়ে বেশি। পুরান ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন সংযোগের পাশাপাশি জনসংখ্যার ঘনত্বও করোনার দ্রুত বিস্তারে প্রভাব রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এভাবেই কেরানীগঞ্জ হয়ে উঠছে করোনার নতুন ‘হটস্পট’।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর মোবারক হোসাইন সমকালকে জানান, মূলত তিনটি ইউনিয়নে পড়েছে করোনার থাবা। মঙ্গলবার পর্যন্ত শুভাঢ্যায় ৩৫, জিনজিরায় ২৮ এবং আগানগরে ১৬ জন শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া শাক্তায় ৮, কোন্ডায় ৬, কালিন্দীতে ৫, তেঘরিয়ায় ৩, কলাতিয়া এবং রুহিতপুরে একজন করে।

তিনি জানান, এমন ছয়টি পরিবার রয়েছে, যেখানে ৫০ থেকে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিটি পরিবারে আট থেকে ১০ জন করে আক্রান্ত। একটি উপজেলায় এত বেশি আক্রান্তের তথ্য বিস্ময়কর। জনসংখ্যার বাড়তি চাপ এবং মানুষের অসচেতনতার কারণে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। সংক্রমিত এলাকাগুলোর রাস্তাঘাটে মানুষের অনেক জটলা। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে এই পরিস্থিতির মধ্যেও কেরানীগঞ্জে নেমেছে শ্রমিকের ঢল। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ফিরতে শুরু করেছেন। দিনের বেলায় পুলিশের প্রতিবন্ধকতা এড়াতে রাতেই বেশি মানুষ ঢুকছে। বেশিরভাগই কেরানীগঞ্জের স্থানীয় কারখানাগুলোতে কাজ করেন।

এ বিষয়ে মীর মোবারক হোসাইন বলেন, পোশাক কারখানা পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে আগানগর ইউনিয়নে দিনে অন্তত এক লাখ মানুষের আনাগোনা হবে। সারাদেশের পাইকাররা এখানে ভিড় জমায়। ঈদের আগে ওই ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

জানা গেছে, কেরানীগঞ্জে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৫ এপ্রিল। প্রথম ১০ দিনে শনাক্তের সংখ্যা ছিল ২৬ জন। পরের ১৩ দিনে অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সব মিলিয়ে ২৩ দিনে মোট শনাক্তের সংখ্যা ১০৩। গত ১৫ এপ্রিল প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত মারা গেছেন পাঁচজন। এ পর্যন্ত আটজন সুস্থ হয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত দেবনাথ বলেন, কেরানীগঞ্জে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় আট লাখ। কিন্তু অস্থায়ী বা ভাসমান মানুষের সংখ্যা বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। অধিকাংশেরই বসবাস শুভাঢ্যা, জিনজিরা ও আগানগরে। শুভাঢ্যায় বসবাসকারীর সংখ্যা প্রতিবেশী দোহার-নবাবগঞ্জ দুই উপজেলার চেয়েও বেশি।

জানা গেছে, কেরানীগঞ্জের মোট আয়তন ১৬৬ দশমিক ৮৭ বর্গকিলোমিটার। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ১৩ হাজার ৩৬৩ জনের বসবাস। শুভাঢ্যা, জিনজিরা এবং আগানগর ইউনিয়নের ঘনত্ব আলাদা করে হিসাব করলে সেটি কয়েকগুণ হবে।

এত ঘনবসতি করোনা সংক্রমণ বিস্তারে বেশি প্রভাব ফেলছে জানিয়ে ইউএনও বলেন, পুরান ঢাকায় ব্যবসা বা চাকরি করেন, এমন অনেক লোকজন থাকেন কেরানীগঞ্জে। আবার নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগাযোগ ভালো। পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও মানুষের মধ্যে নূ্যনতম সচেতনতা নেই। প্রতিদিনই রাস্তায় অভিযান চলছে। কিন্তু ঘুরেফিরে একই অবস্থা। এর মধ্যে আবার কারখানার কর্মীরা আসতে শুরু করেছেন।

সূত্র জানায়, ঢাকার পরে নারায়ণগঞ্জকে করোনাভাইরাসের উপকেন্দ্র ঘোষণা করা হলেও কেরানীগঞ্জের সঙ্গে এর সংযোগে ভাটা পড়েনি। দুই অঞ্চলে প্রতিনিয়ত মানুষের আসা-যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে পুরান ঢাকার সঙ্গে কেরানীগঞ্জের দূরত্ব বলতে বুড়িগঙ্গা নদী।

আপনার মতামত দিন :