দুধের শিশু বাসায় রেখে হাসপাতালে কাজ করছেন মা Shakil Shakil Ahmed প্রকাশিত: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, মে ১, ২০২০ আসমাউল হুসনা আসমাউল হুসনা বাসায় ২০ মাসের বাচ্চা। সে এখনো বুকের দুধ খায়। টানা পাঁচ দিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে পারেননি মা। আরও দুই দিন ফিরতে পারবেন না। এর মধ্যে ওয়ার্ডে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী এলে আরও ২১ দিন তাঁর ফেরা হবে না। এই মা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন আয়া। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। তাঁর স্বামী রিকশাচালক। করোনাকালে রোগী সেবার দায়িত্ব মাথায় নিয়ে এই মা দুধের শিশুকে বাসায় রেখে থাকছেন হাসপাতালের কোয়ার্টারে। এই আয়ার নাম আসমাউল হুসনা (৩০)। পরিবারে তিনি তানিয়া নামে পরিচিত। স্বামীর নাম কুরবান আলী। তাঁরা নগরের হেতেমখা কারিগরপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। বাসায় হুসনার মা শিশুটিকে দেখভাল করছেন এখন। আট বছর ধরে হুসনা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করার কারণেই আয়া হিসেবে তিনি অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য হাসপাতালে তাঁকে থাকতেই হবে। এদিকে হাসপাতালে কাজ করেন বলে বাসার মালিক তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। এ নিয়ে হুসনা পড়েন চরম বিপদে। রাজশাহীতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁর বাসার মালিক ঘোষণা দেন, হাসপাতালে কাজ করলে তাঁকে আর বাসায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। হুসনা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব বিধি মেনেই তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন এবং সেভাবেই তিনি বাসায় আসেন। তাঁর স্বামী–সন্তানের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তার কথাও তাঁকে ভাবতে হয়। কিন্তু বাসার মালিক কিছুতেই তা বুঝতে চান না। গত ১৯ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে কাজ শেষে বাসায় ঢুকতে গেলে বাসার মালিক তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তাঁদের বাসা থেকে বের করে দিতে চান। ভেতরে দুধের শিশু মায়ের জন্য কাঁদছে, আর মা বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। এই খবর পেয়ে রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ঘটনাস্থলে যান। বাড়ির মালিককে বোঝান। শেষ পর্যন্ত কথা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সেবা করলে হুসনা পরবর্তী ২১ দিন বাসায় আসতে পারবেন না। অবশেষে এই শর্তে তিনি রাজি হন। এরই মধ্যে গত রোববার করোনাভাইরাস সন্দেহে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর থেকে হুসনা আর বাসায় ফিরতে পারেননি। হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, জ্যেষ্ঠ এবং কনিষ্ঠ আয়াদের নিয়ে পৃথক দল করে দিয়েছেন। একটি দলে রয়েছেন হুসনা। মেয়েটি বেশ অভিজ্ঞ এবং সৎ। তাঁকে নিয়ে গর্ব করা যায়। হুসনা যে দলে রয়েছেন, সেই দলকে নিয়ে তিনি গত রোববার করোনা সন্দেহে তাঁর ইউনিটে ভর্তি হওয়া এক রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। ২৯ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় জানা গেছে, ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত নন। তারপরও নিয়ম অনুযায়ী সাত দিন তিনি আলাদা থাকছেন। তাঁর সঙ্গে হুসনার দলের সবাইকেও আলাদা করে কোয়ার্টারে রাখা হয়েছে। তাঁদের বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি। আগামী শনিবার পরীক্ষা করে তাঁর (ইনচার্জ) যদি নেগেটিভ ফল আসে, তাহলে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর কোনো কারণে তাঁর যদি পজিটিভ ফল পাওয়া যায়, তাহলে দলের সবাইকে পরীক্ষা করা হবে। ওঁদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। আসমাউল হুসনা প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করলেও তাঁর চাকরিটা স্থায়ী হয়নি। তারপরও দায়িত্ব ফেলে বাসায় বসে থাকতে পারছেন না। আর অভাবের সংসার, বাসায় বসে থাকলেও পেট চলবে না। রিকশা চালিয়েও স্বামী আগের মতো রোজগার করতে পারেন না। চার দিন ধরে হাসপাতালের কোয়ার্টারে আছেন। যদি আরেকজন করোনার রোগী আসেন, তাহলে আরও ২১ দিন বাসায় যেতে পারবেন না। শুধু বাচ্চাটার জন্য মন খারাপ হয়। সারা দিন ভালো থাকলেও রাতে মাকে খোঁজে বাচ্চাটা। দুধ খাওয়ার জন্য কাঁদে। আপনার মতামত দিন : SHARES জাতীয় বিষয়:
আসমাউল হুসনা বাসায় ২০ মাসের বাচ্চা। সে এখনো বুকের দুধ খায়। টানা পাঁচ দিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে পারেননি মা। আরও দুই দিন ফিরতে পারবেন না। এর মধ্যে ওয়ার্ডে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী এলে আরও ২১ দিন তাঁর ফেরা হবে না। এই মা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন আয়া। তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। তাঁর স্বামী রিকশাচালক। করোনাকালে রোগী সেবার দায়িত্ব মাথায় নিয়ে এই মা দুধের শিশুকে বাসায় রেখে থাকছেন হাসপাতালের কোয়ার্টারে। এই আয়ার নাম আসমাউল হুসনা (৩০)। পরিবারে তিনি তানিয়া নামে পরিচিত। স্বামীর নাম কুরবান আলী। তাঁরা নগরের হেতেমখা কারিগরপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। বাসায় হুসনার মা শিশুটিকে দেখভাল করছেন এখন। আট বছর ধরে হুসনা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করার কারণেই আয়া হিসেবে তিনি অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য হাসপাতালে তাঁকে থাকতেই হবে। এদিকে হাসপাতালে কাজ করেন বলে বাসার মালিক তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। এ নিয়ে হুসনা পড়েন চরম বিপদে। রাজশাহীতে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে তাঁর বাসার মালিক ঘোষণা দেন, হাসপাতালে কাজ করলে তাঁকে আর বাসায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। হুসনা তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার সব বিধি মেনেই তিনি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেন এবং সেভাবেই তিনি বাসায় আসেন। তাঁর স্বামী–সন্তানের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের নিরাপত্তার কথাও তাঁকে ভাবতে হয়। কিন্তু বাসার মালিক কিছুতেই তা বুঝতে চান না। গত ১৯ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে কাজ শেষে বাসায় ঢুকতে গেলে বাসার মালিক তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। তাঁদের বাসা থেকে বের করে দিতে চান। ভেতরে দুধের শিশু মায়ের জন্য কাঁদছে, আর মা বাসার বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। এই খবর পেয়ে রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ঘটনাস্থলে যান। বাড়ির মালিককে বোঝান। শেষ পর্যন্ত কথা হয়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর সেবা করলে হুসনা পরবর্তী ২১ দিন বাসায় আসতে পারবেন না। অবশেষে এই শর্তে তিনি রাজি হন। এরই মধ্যে গত রোববার করোনাভাইরাস সন্দেহে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর থেকে হুসনা আর বাসায় ফিরতে পারেননি। হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, জ্যেষ্ঠ এবং কনিষ্ঠ আয়াদের নিয়ে পৃথক দল করে দিয়েছেন। একটি দলে রয়েছেন হুসনা। মেয়েটি বেশ অভিজ্ঞ এবং সৎ। তাঁকে নিয়ে গর্ব করা যায়। হুসনা যে দলে রয়েছেন, সেই দলকে নিয়ে তিনি গত রোববার করোনা সন্দেহে তাঁর ইউনিটে ভর্তি হওয়া এক রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন। ২৯ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় জানা গেছে, ওই রোগী করোনায় আক্রান্ত নন। তারপরও নিয়ম অনুযায়ী সাত দিন তিনি আলাদা থাকছেন। তাঁর সঙ্গে হুসনার দলের সবাইকেও আলাদা করে কোয়ার্টারে রাখা হয়েছে। তাঁদের বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি। আগামী শনিবার পরীক্ষা করে তাঁর (ইনচার্জ) যদি নেগেটিভ ফল আসে, তাহলে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আর কোনো কারণে তাঁর যদি পজিটিভ ফল পাওয়া যায়, তাহলে দলের সবাইকে পরীক্ষা করা হবে। ওঁদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। আসমাউল হুসনা প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করলেও তাঁর চাকরিটা স্থায়ী হয়নি। তারপরও দায়িত্ব ফেলে বাসায় বসে থাকতে পারছেন না। আর অভাবের সংসার, বাসায় বসে থাকলেও পেট চলবে না। রিকশা চালিয়েও স্বামী আগের মতো রোজগার করতে পারেন না। চার দিন ধরে হাসপাতালের কোয়ার্টারে আছেন। যদি আরেকজন করোনার রোগী আসেন, তাহলে আরও ২১ দিন বাসায় যেতে পারবেন না। শুধু বাচ্চাটার জন্য মন খারাপ হয়। সারা দিন ভালো থাকলেও রাতে মাকে খোঁজে বাচ্চাটা। দুধ খাওয়ার জন্য কাঁদে।