রোজায় মুমিন পায় প্রশান্তি Shaber Hossain Shaber Hossain Chowdhury প্রকাশিত: ১০:২১ অপরাহ্ণ, মে ৩, ২০২০ দেখতে দেখতে রহমতের দশক শেষ। আজকে রাতে সেহেরী খেলে কাল থেকে প্রবেশ করব মাগফিরাতের দশকে। মুসলিম উম্মাহর জন্য এ পবিত্র মাসটি অন্যান্য মাসের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কেননা এই মাসে ইবাদত-বন্দেগির মাঝে আসে আমূল পরিবর্তন। যদিও এবছরের রোজায় যোগ হয়েছে করোনা ভাইরাসের ভয়। মহামারি করোনা পরিস্থিতির কালেও মুমিন-মুত্তাকি তার ইবাদতে সামান্যতম কমতি করছেন না। যদিও মুমিনের প্রাণ হচ্ছে মসজিদ। কিন্তু করোনার কারণে সে নিজ ঘরকেই ইবাদতের জন্য উত্তমভাবে তৈরি করে নিয়েছেন। রোজাদার পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিশেষ ইবাদত, সেহরি ও ইফতার করছেন। এতে পরিবারে বিরাজ করছে ভিন্ন এক আনন্দ। তবে মসজিদের সাথে তার যে আত্মার সম্পর্ক তা লাভের জন্য মন আনচান করছে। দোয়া করি আল্লাহতায়ালা যেন দ্রুত বিশ্ব থেকে সব বালা-মুসিবত দূর করে দেন আর মুমিন তার প্রাণের সাথে অর্থাৎ মসজিদে গিয়ে পাঁচবার সাক্ষাৎ করতে পারেন। হাদিস পাঠে জানা জায়, ‘রোজা ধৈর্যের অর্ধেক আর ধৈর্য ঈমানের অর্ধেক। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমজানের রোজা স্রষ্টার সাথে বান্দার সাক্ষাৎ লাভের মাধ্যম হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ স্তম্ভ। আর এজন্যই হজরত রাসূলে করিম (সা.) হাদিসে কুদসীর মাধ্যমে এরশাদ করেছেন। সম্মান ও মর্যাদার প্রভু আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের অন্য সব কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা একান্তই আমার জন্য এবং আমি এর জন্য তাকে পুরস্কৃত করব’। রোজা ঢাল স্বরূপ। তার নামে বলছি, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের গন্ধের চেয়েও পবিত্র। একজন রোজাদার দু’টি আনন্দ লাভ করে। সে আনন্দিত হয় যখন সে ইফতার করে এবং রোজার কল্যাণে সে আনন্দিত হয় যখন সে তার প্রভুর সাথে মিলিত হয়’ (বোখারি)। পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহতায়ালা ধৈর্যশীলদেরকে বেহিসাব সওয়াব দান করবেন। রোজা পালন করার ফলে একজন রোজাদার ধৈর্যের চূড়ান্ত নমুনা পেশ করেন। হাদিসে কুদসী হতে আরো জানা যায় যে, হজরত রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ বলেন, রোজাদার তার ভোগ-লিপ্সা এবং পানাহার শুধুমাত্র আমার জন্যই বর্জন করে, সুতরাং রোজা আমার উদ্দেশ্যেই আর আমিই এর প্রতিদান দিই (মুসলিম)।’ একটু চিন্তা করে দেখুন, যার প্রতিদান স্বয়ং আল্লাহ দিবেন, তাহলে এর গুরুত্ব কতই না ব্যাপক। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান মানুষের ধমনীতে চলাচল করে, তোমরা যদি শয়তান হতে আত্মরক্ষা করতে চাও, তবে রোজার মাধ্যমে তোমাদের ধমনীকে সংকীর্ণ করে দাও।’ বর্ণনাকারী আরো বলেন, ‘একবার হুজুর পাক (সা.) আমাকে বললেন, হে আয়েশা! সদাসর্বদা জান্নাতের দরজার কড়া নাড়তে থাক। জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), তা কিভাবে? তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, রোজার মাধ্যমে।’ (এহ্ ইয়াউ উলুমিদ্দীন)। প্রত্যেক রোজাদারকে গভীরভাবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা আদায়ের অর্থ কতগুলো বিষয় থেকে বেঁচে থাকা ও কতগুলো বিষয়কে বর্জন করা। এর মাঝে বাহ্যিকতার কোন আমল নেই। অন্য যেকোনো ইবাদত মানব দৃষ্টে ধরা পড়ে, কিন্তু রোজা এমন এক ইবাদত, যা শুধু আল্লাহতায়ালাই দেখতে পান, যার মূল শিকড় রোজাদার ব্যক্তির হৃদয়ে লুকায়িত তাকওয়ার সাথে সংযুক্ত। আরো পড়ুন: রমজানে অধিক হারে যেসব দোয়া পড়বো মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের হৃদয়ে যদি শয়তানের আনাগোনা না থাকতো, তবে মানুষ উর্দ্ধজগত দেখার দৃষ্টিসম্পন্ন হয়ে যেত। শয়তানের আনাগোনা বন্ধে রোজা হচ্ছে ইবাদত সমূহের ঢাল স্বরূপ।’ মহামারি করোনা ভাইরাসের দিনগুলোতে একজন মুমিন আতঙ্কিত না হয়ে বরং সচেতনতা অবলম্বন করে চলে আর তার ইবাদতের মাত্রা আরো বহুগুণ বৃদ্ধি করে। তার রাতগুলোকে ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখে আর দিনগুলোকে অতিবাহিত করে পুণ্যময় কাজে। তাই বলা যায় রোজায় মুমিন লাভ করে প্রকৃত প্রশান্তি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের রোজাগুলো তিনি গ্রহণ করুন,আমিন। লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট আপনার মতামত দিন : SHARES Uncategorized বিষয়: