আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়

থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হাসপাতালের অফিস এখন ঢাকা ও চট্রগ্রামে

প্রকাশিত: ১১:১১ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২০

দুই থেকে তিন দশক আগে হয়ত অনেক রোগের নিরাময়ের কথা চিন্তাই করা যেত না। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রযুক্তির অগ্রগতিতে সম্প্রতিক সময়ে ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ, অস্থি ও অস্থি গ্রন্থির অনেক সমস্যাই নির্নয় এবং নিরাময়যোগ্য। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে, দক্ষ চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত সংবেদনশীল এবং নিবেদিতপ্রাণ আন্তর্জাতিক মানের নার্সদের সেবায়, এসব রোগের চিকিৎসায় আশপাশের দেশগুলো মধ্যে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক হাসপাতাল শীর্ষে। ১৯৭২ সালে হাঁটি-হাঁটি-পা-পায়ে যাত্রা করা এই হাসপাতাল এখন বিশ্বমানের চিকিৎসা কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। যেখানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা রোগীরা পাচ্ছেন সঠিক সেবা।

এই হাসপাতালে রয়েছে- সিটি-এনজিওগ্রাম, এম.আর.আই, কার্ডিয়াক এম.আর.আই, ওপেন এম.আর.আই, ক্যানসার নির্ণয়ে পি.ই.টি.সিটি প্রযুক্তি, জটিল সার্জারির প্রয়োজনে হাইব্রিড ওটি, ভেরিয়ান এজ রেডিও সার্জারি, ই.ও.এম. ফুল বডি লো রেডিয়েশন ৩-ডি এক্স-রে, ই.সি.এম.ও (মোবাইল হার্ট-লাঙ সাপোর্ট), কার্টোসাউন্ড, ও-আর্ম স্পাইন সার্জারি, রেডিওথেরাপীর আধুনিকায়ন, ক্যাথ লাব, হেলি-ট্রান্সপোর্টসহ আরো অনেক সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।

সিটি-এনজিওগ্রাম: হার্টের রক্তনালিতে রক্ত সঞ্চালন সমস্যা কোন অপারেশন ছাড়া নির্ণয়ের জন্য ২৫৬ স্লাইস সিটি এনজিওগ্রাম রয়েছে, যা পুরনো ১২৮ স্লাইস সিটি এনজিওগ্রামের চেয়ে অনেক উন্নতমানের।

এম.আর.আই: আধুনিক চিকিৎসায় অনেক ধরনের টিউমারের সঠিক অবস্থান নির্ণয়ে শক্তিশালী এম.আর.আই.-এর ভূমিকা অপরিসীম। এই হাসপাতালে ৩.০ টেসলা শক্তি সম্পন্ন ৪টি এম.আর.আই. মেশিন (একটি স্ফেরিক্যাল) আছে, যা থাইল্যান্ডের অন্য কোন হাসপাতালে নেই। কয়েকটি হাসপাতালে মাত্র ১.৫ টেসলা শক্তি সম্পন্ন এম.আর.আই. মেশিন আছে। বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য ১.০০ টেসলা ওপেন এম.আর.আই. মেশিনও রয়েছে।

কার্ডিয়াক এম.আর.আই: থাইল্যান্ডে বেসরকারী ব্যাংকক হসপিটালই প্রথম নিয়ে এসেছে ৩.০ টেসলার শক্তি সম্পন্ন কার্ডিয়াক এম.আর.আই প্রযুক্তি, হার্টের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে যার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

ওপেন এম.আর.আই: ক্লোজড এম.আর.আই. নির্জন কক্ষে করা হয়, যেখানে মেশিন চলাকালীন জোর-শব্দ হয় এবং রোগীকে একটি ক্যাপসুল-সদৃশ বাক্সে শোয়ানো হয়, তাই কিছু কিছু রোগী যাদের একাকীত্ব ভীতি (ক্লাস্টোফোবিয়া) রয়েছে এবং যারা অতিরিক্ত স্থূলকায়, তাঁদের এই যন্ত্রের মাধ্যমে এম.আর.আই. করা যায় না। এ ক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে থাইল্যান্ড এর বেসরকারী একমাত্র ব্যাংকক হসপিটালেই রয়েছে ওপেন এম.আর.আই. ব্যবহারের সুবিধা (১.০ টেসলা)।

ক্যানসার নির্ণয়ে পি.ই.টি.সিটি প্রযুক্তি: থাইল্যান্ডে বেসরকারী ব্যাংকক হসপিটালই প্রথম এই প্রযুক্তি এবং সাইক্লোট্রন মেশিন তাঁদের অঙ্গনে স্থাপন করে। বর্তমানে ৪র্থ প্রজন্মের পেট-সিটির (এম সিটি ফ্লো সহ) ২টি ইউনিট এই হসপিটালে চিকিৎসা সেবায় চালু আছে।ব্যাংককের অন্যান্য বেসরকারী হসপিটালে এখনও ২য় প্রজন্মের পেট-সিটি ব্যবহৃত হচ্ছে।

হাইব্রিড ওটি – জটিল সার্জারির প্রয়োজনে: জীবন রক্ষার প্রয়োজনে শরীরের দুইটি স্থানে দুই ধরনের সার্জারি একই সাথে করার সময় এই ওটি ব্যবহৃত হয়। থাইল্যান্ডের আর কোন বেসরকারী হসপিটালে এই ধরনের ওটি নেই।

ভেরিয়ান এজ রেডিও সার্জারি: স্বল্প সময়ে উচ্চমাত্রায় রেডিয়েশন প্রয়োগ করে মেটাসটাটিক ব্রেইন টিউমারসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানের টিউমার ১ থেকে ৫ সেশনেই চিকিৎসা করা যায়। প্রতি সেশনে সময় লাগে মাত্র ৭ থেকে ১৫ মিনিট। টিউমার নিকটবর্তী সুস্থ টিস্যুগুলোর বিশেষ কোন রেডিয়েশন জনিত ক্ষতি হয়না। চিকিৎসা ব্যয় কমে আসে এবং একদিনে অনেক রোগীর চিকিৎসা দেয়া যায়। থাইল্যান্ডের শুধু বেসরকারী ব্যাংকক হসপিটালেই এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যান্য বেসরকারী হসপিটাল এখনও এক ইউনিট ‘লিনাক’ মেশিন দিয়েই চলছে।

ই.ও.এম. ফুল বডি লো রেডিয়েশন ৩-ডি এক্স-রে: থাইল্যান্ডের বেসরকারী একমাত্র ব্যাংকক হসপিটালেই এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। হাড়,স্পাইন ও জয়েন্টের সমস্যা, যেখানে বারবার এক্স-রে করা প্রয়োজন, সেখানে এই প্রযুক্তি খুবই কার্যকরী ও শিশুদের জন্য খুবই উপযোগী।

ই.সি.এম.ও (মোবাইল হার্ট-লাঙ সাপোর্ট): গুরুতর রোগী স্থানান্তরে বেসরকারী ব্যাংকক হসপিটাল, থাইল্যান্ডই  শুধু স্থানান্তর যোগ্য হার্ট লাঙ মেশিন ব্যবহার করতে সক্ষম।

কার্টোসাউন্ড: হার্টের এরিথমিয়া বা স্পন্দন সমস্যা সমাধানে ই.পি.আই ছাড়াও সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে এই হাসপাতলে।

ও-আর্ম স্পাইন সার্জারি: জটিল স্পাইন সার্জারি ঝুঁকিমুক্ত এবং আরও সফলতার সাথে করার জন্য এখানে ও-আর্মের ব্যবহার রয়েছে ।

রেডিওথেরাপীর আধুনিকায়ন: এখানে ভেরিয়ান ও লিনাক–দুই প্রযুক্তিই ব্যবহৃত হচ্ছে, অন্যান্য বেসরকারী হসপিটালে শুধু লিনাক-ই রয়েছে।

ক্যাথ লাব: এ হাসপাতাল ২টি ক্যাথ ল্যাব ও একটি হাইব্রিড ওটি সমৃদ্ধ ।

হেলি-ট্রান্সপোর্ট: ব্যাংকক হসপিটাল ছাড়া থাইল্যান্ডের আর কোন বেসরকারী হাসপাতালে নিজস্ব আই.সি.ইউ. সমৃদ্ধ হেলিকপ্টারের মাধ্যমে থাইল্যান্ডের অভ্যন্তরে রোগী স্থানান্তরে ব্যবস্থা নেই।

এছাড়া ল্যাকশেল গামা লাইফ, নোভালিস ফর ক্যান্সার রেডিয়েশন ট্রিটমেন্ট, দ্যা ভিঞ্চি রবোটিক সার্জারির মতো প্রযুক্তিগুলিও প্রথম বেসরকারী ব্যাংকক হসপিটাল থাইল্যান্ডে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য নিয়ে আসে। তারপর সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে এসব প্রযুক্তিগুলোড় প্রতিস্থাপন করে আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো দ্রুত ও কার্যকর ভাবে রোগ নির্ণয় ও নতুন প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবাকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।

ব্যাংকক হসপিটাল থাইল্যান্ড-এর কাছাকাছি মানের হসপিটালগুলো থেকে অনেক ক্ষেত্রে এই হসপিটালে চিকিৎসার খরচও তুলনামূলক ভাবে কমিয়ে আনা হচ্ছে। অবশ্য সাশ্রয়ী হতে গিয়ে চিকিৎসা মানের সাথে কোনরকম সমঝোতা করার প্রশ্নই উঠেনা।

রোগীদের সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা দানের জন্য এই হাসপাতালের অনেকগুলো সেবাই নির্ধারিত মূল্য বা ফিক্সড প্রাইজ এর মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে।

এই হাসপাতালের বেশীরভাগ চিকিৎসকই সার্বক্ষণিক বা ফুল-টাইম হিসাবে নিয়োজিত আছেন। থাইল্যান্ডের অন্যান্য হসপিটালের তুলনায় বিশেষ দক্ষ চিকিৎসকগণের সমাবেশও এখানে অনেক বেশী। অন্য হসপিটালগুলোতে বাংলাভাষী কোন চিকিৎসক নেই।

কিন্তু ব্যাংকক হসপিটালে মেডিসিন কনসালটেন্ট হিসাবে বিগত প্রায় ২৫ বৎসর ধরে ডা. শক্তি রঞ্জন পাল কর্মরত আছেন। তিনি একমাত্র বাঙালী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যার থাইল্যান্ডে চিকিৎসক হিসাবে কাজ করার রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। অমায়িক ব্যবহার, মেডিসিনে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী ডা. শক্তি অনেক বাঙালী রোগীর কাছে বিশেষ ভরসার স্থল।

কিছু কিছু জটিল রোগীর বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সমন্বিত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। স্পাইন সার্জারির জন্য অর্থোপেডিক্স ও নিউরোসার্জনের বিশেষজ্ঞ দল এই সেবা দেয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য রয়েছে টিউমার বোর্ড। জরুরি রোগী গ্রহন করে তাৎক্ষনিকভাবে সঠিক চিকিৎসা দেয়ার জন্যে রয়েছে মেডিক্যাল ইভাকুয়েশন কো-অরডিনেশান টিম। বাংলাদেশীদের দেখভালের জন্য বাংলাদেশ মেডিক্যাল সার্ভিস বা বি.এম.এস. এর বাংলাদেশী ভাইবোনেরা সবসময় তৎপর।

জরুরি রোগী স্থানান্তরের জন্য আছে নিজস্ব এয়ার-অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। কিন্তু অন্যান্য হসপিটালগুলোর নিজস্ব সার্ভিস না থাকার কারনে তাঁদের জরুরি রোগী স্থানান্তরের জন্য বাইরের সংস্থার সাহায্য নিতে হয়। মাত্র ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যাংকক হসপিটাল রোগী স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। থাইল্যান্ডে একমাত্র ব্যাংকক হসপিটালেই এধরনের জরুরি রোগীকে হসপিটালে স্থানান্তরের সেবা দেয়ার জন্য সমন্বিত মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। এ ধরনের রোগীদের সেবা দানের ক্ষেত্রে কিছু  অর্থছাড়ের সুযোগও রয়েছে।

বাংলাদেশে এই হসপিটালের ৩টি সার্ভিস অফিস রয়েছে, যার ২টি ঢাকায় (ধানমণ্ডি ও বনানী), ও একটি চট্টগ্রাম মহানগরীতে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই অফিসগুলো ব্যাংকক হসপিটালের চিকিৎসকের সাথে রোগীর অ্যাপয়েন্টমেনট, ভিসা সহায়তা, হোটেল বুকিং, এয়ারপোর্ট পিকআপ ইত্যাদি সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। এই অফিসগুলো থেকে রোগীর অসুস্থতার পূর্ণাঙ্গ কিন্তু সংক্ষিপ্ত বিবরণ বা হেল্‌থ প্রোফাইল,টেলিমেডিসিন এবং টেলি-কন্সালটেশনও করা যায়।

আপনার মতামত দিন :