সংক্রমণের সুপারস্প্রেড সময় চলছে, পরীক্ষার পরিধি বাড়াতে হবে

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৯:০২ পূর্বাহ্ণ, মে ১৮, ২০২০

বিল্লাল হোসেন রাজু: দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। প্রতিনিয়তই মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। চলমান এ মহামারি প্রতিরোধে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ সরকারের সব বিভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই এ ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে, যাদের কোনো পরীক্ষাই হয়নি। এ অবস্থায় তাদের সংস্পর্শে আসা বহু মানুষের করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) একটি জরিপে দেখা যায়, দেশে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ৯২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৮ মার্চ থেকে গত ৯ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের ২৪টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে এ জরিপ পরিচালনা করে সিজিএস।

দেশে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অনেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে, যা বড় ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তাই নমুনা পরীক্ষা আরো বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর সাথে সাথে উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করে ফলাফল না আসা পর্যন্ত তাদের আলাদা ব্যবস্থায় রাখার পরার্মশও তাদের।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহ ধরেই দেখা যাচ্ছে করোনা সংক্রমণের হার খুব পরিবর্তন হচ্ছে না। এ হার ১৪-১৫ ভাগের মধ্যেই রয়েছে, খুব একটা বাড়ছেও না বা কমছেও না। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে দেখা গেছে সংক্রমণের হার তিন ভাগ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ ধারা বজায় রয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এ থেকে কোন সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নন। তারা বলছেন, টানা ১৫ দিন ধরে যদি সংক্রমণের হার নিম্নগামী হয় – তাহলেই শুধু বলা যাবে যে অবস্থা স্থিতিশীল হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু মেডিভয়েসকে বলেন, ‘করোনার সংক্রমণের ‘সুপার স্প্রেড’ সময় চলছে’। বর্তমানে নতুন করে করোনা শনাক্তদের বেশি ভাগ ব্যক্তির শরীরে তেমন কোন উপসর্গ থাকছে না। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। কিন্তু পরীক্ষা করলে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ছে। তাই এ সময়টায় পরীক্ষা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সবাইকে আরো অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে যারা নমুনা পরীক্ষার জন্য উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসবেন তাদের অবশ্যই খুব সচেতন থাকতে হবে। হাসপাতালে আসার পথে অনেক ব্যক্তি তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সচেতনতা খুব জরুরি।’

সেন্টার ফর জেনোসাইডের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে অনেক ব্যক্তি পরীক্ষা করতে আসে। আসার পথেই বহু মানুষ আক্রান্ত হয়ে যায়। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে এই মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। তার মতে, এ ধরণের রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রত্যেককে ঝুঁকিতে থাকেন এবং ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণ রীতিমত অসম্ভব হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি দ্রুত টেস্টের কোন বিকল্প নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, করোনা আক্রান্ত হননি এমন ৩৩ জন রোগী সেবা না পেয়ে মারা গেছেন। বাড়ি থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে আটটি এবং পরিবার পরিত্যক্ত হয়েছেন ২৩ জন। দুজন সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার শঙ্কায় আত্মহত্যা করেছেন। তাছাড়া করোনা ইস্যুতে ৭৯টি গুজব ছড়ানোর ঘটনা ঘটেছে এবং এজন্য ৮৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আপনার মতামত দিন :