চট্টগ্রামে বিভিন্ন সংঘটনের প্রতিবাদ মিছিল

সরকারী রেলওয়ের জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ

প্রকাশিত: ৯:৪৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

নগরীর সিআরবিতে রেলওয়ের জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত চট্টগ্রামবাসী কোনো ভাবেই বাস্তবায়ন করতে দেবে না। রেলওয়ের ওই জায়গায় সরকারি উদ্যোগে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে। চারটি সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। রেলওয়ের জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটি, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগ এবং গণ অধিকার চর্চা কেন্দ্র। আয়োজক চার সংগঠন ছাড়াও আরো বেশ কয়টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ-চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে মূল বক্তা ছিলেন জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহবায়ক মুক্তিযাদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান।

জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে পেশাজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যোগের আহ্বায়ক সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, গণ অধিকার চর্চা কেন্দ্রের সচিব মশিউর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী নূর জাহান বেগম, বাসদ চট্টগ্রাম জেলার সদস্য মহিন উদ্দিন, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসান মারুফ রুমি, কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ও আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান, গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক শরিফ চৌহান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম শহরে জায়গার অভাবে যেখানে সরকারি বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল হচ্ছে না, সেখানে রেলওয়ের (সরকারি) বিশাল আয়তনের (৬ একর) জমি দিয়ে দেয়া হচ্ছে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে। তারা সেখানে বড় হাসপাতাল করবে, মেডিকেল কলেজ করবে। তারা সেটা করবে ব্যবসার উদ্দেশ্যেই। এতে সাধারণ মানুষ সরকারি সুবিধায় স্বাস্থ্যসেবা পাবে না। আকাশচুম্বি ফি দিয়ে সাধারণ মানুষকে এই সেবা কিনে নিতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামে বড় হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান হোক, তাতে আমাদের (চট্টগ্রামবাসীর) আপত্তি নেই। কিন্তু সরকারি জায়গায় কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া জনস্বার্থ বিরোধী। তাই রেলওয়ের ওই জমিতে বেসরকারি কোনো স্থাপনা চট্টগ্রামের মানুষ মেনে নেবে না। সরকারকে অবিলম্বে জনস্বার্থ বিরোধী এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে এবং রেলওয়ের ওই জমিতে সরকারি উদ্যোগেই বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করতে হবে।

সরকারকে দ্রুত এই দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, কয়েকবছর আগে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে চট্টগ্রামের মানুষের বিরোধীতার মুখে সরকার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে আলাদা একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ। এবারও সরকারি জায়গা একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেয়ার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। চট্টগ্রামের গণমানুষের আকাঙ্খা অনুযায়ী রেলওয়ের ওই জায়গায় সরকারি উদ্যোগে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান বক্তারা। অন্যথা, আরো বৃহৎ পরিসরে কর্মসূচি দেয়া হবে। আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। গণবিরোধী এ সিদ্ধান্ত কোনো ভাবেই বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া এ আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। অন্যান্যের মাঝে লেখক কালাম চৌধুরী, রুবা আহসান রহমত, আসমা আকতার, এম এ হাশেম রাজু, মিঠুল দাশ গুপ্ত ও হরেন্দ্র কুমার নাথসহ আরো অনেকেই সংহতি প্রকাশের মাধ্যমে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের বিরোধিতার পরও নগরীর সিআরবি এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে ৫০০ শয্যার একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং একশ আসনের একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকেও নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। সিআরবি এলাকায় বিদ্যমান রেলওয়ে (বক্ষব্যাধি) হাসপাতাল সংলগ্ন ৬ একর জমি জুড়ে এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি)’র আওতায় গড়ে তোলা হলেও এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা হবে সম্পূর্ণ বেসরকারি (ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক) মালিকানায়। অর্থাৎ সরকারি জমিতে হলেও এই স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে চড়া দামে (বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই) সেবা নিতে হবে জনসাধারণকে। স্বল্প খরচে সরকারি সেবা এখানে পাওয়া যাবে না। সরকারি জমিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এই প্রকল্পটির বিরোধিতা করে আসছেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। এই প্রকল্পকে জনস্বার্থ বিরোধী অভিহিত করে এই সিদ্ধান্ত বাতিল এবং রেলওয়ের ওই জায়গায় সরকারি উদ্যোগে বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে চট্টগ্রামের বেশকয়টি সংগঠন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সংগঠনগুলো।

সুত্রঃ আজাদী

আপনার মতামত দিন :