করোনার সংক্রমণে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ, পরীক্ষায় পিছিয়ে

প্রকাশিত: ১:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৩, ২০২০

দৈনিক ও গত এক সপ্তাহে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ দশে। আর এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের বিবেচনায় বাংলাদেশ শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে আছে। কিন্তু এসব দেশের মধ্যে করোনার নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে দুই দেশের একটি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে গড়ে ২ হাজার ৮৭৬ জনের করোনা (কোভিড-১৯) শনাক্তকরণের পরীক্ষা হচ্ছে। বাংলাদেশের চেয়ে অল্প কম পরীক্ষা হচ্ছে মেক্সিকোতে। আর দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে তুলনা করলে বাংলাদেশের চেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে কেবল আফগানিস্তানে।
যদিও বাংলাদেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির এই সময়ে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষার সংখ্যা ও আওতা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। কারণ, পরীক্ষা বাড়লে আরও বেশিসংখ্যক আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হবে। তাতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সহজ হবে।
দেশে বর্তমানে ৫৯টি ল্যাবরেটরিতে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৯টি এবং ঢাকার বাইরে ৩০টি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৯৯০ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যা এ পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ পরীক্ষা। গত ১৪ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, শিগগির দৈনিক পরীক্ষা ১৫ হাজারে উন্নীত করা হবে। এ ঘোষণার প্রায় এক মাস পরে গত বুধবার সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো গেছে।
পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকে করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। তাতে দেখা যায়, মোট আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান গতকাল পর্যন্ত ছিল ১৯তম।

ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে ২ হাজার ৮৭৬ জনের করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে, যা শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্বিতীয় কম। শীর্ষ ২০-এর মধ্যে সবচেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে ১৪ নম্বরে থাকা মেক্সিকোতে। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে পরীক্ষা হচ্ছে ২ হাজার ৮৬৬ জনের। এর চেয়ে একটু ভালো অবস্থানে আছে ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানে প্রতি ১০ লাখে পরীক্ষা হচ্ছে ৩ হাজার ৬৬৭ জনের আর ভারতে ৩ হাজার ৮৮৯ জনের।

বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় প্রায় একই সময়ে। পেরুতে প্রতি ১০ লাখে ৩৮ হাজার ৯২৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৮ জন রোগী।

দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে শুধু আফগানিস্তানে। দেশটিতে প্রতি ১০ লাখে ১ হাজার ৩৮১ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভুটানে প্রতি ১০ লাখে ২৬ হাজার ৬২২, নেপালে ১০ হাজার ৬৪৮, শ্রীলঙ্কায় ৩ হাজার ৮১৮ এবং মালদ্বীপে ৫৩ হাজার ৫৯৪ জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, মালদ্বীপের জনসংখ্যা সাড়ে পাঁচ লাখের মতো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম।
এই ১০টি দেশের মধ্যেও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন পরীক্ষা হচ্ছে বাংলাদেশ। এখানেও সবচেয়ে কম পরীক্ষা হচ্ছে অষ্টম স্থানে থাকা মেক্সিকোতে। সংক্রমণের দিক থেকে বাংলাদেশের ঠিক পরেই ২০তম স্থানে থাকা কাতারে প্রতি ১০ লাখে ৯৯ হাজার ৯৫৯ পরীক্ষা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র যুক্ত হয়েছে। পরীক্ষার সংখ্যাও ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। পরীক্ষা বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হলে পরীক্ষার সংখ্যা আরও বাড়বে।

পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে যে যন্ত্রের মাধ্যমে করোনা শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাতে একবারে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা যায়। এতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। পর্যাপ্ত টেকনোলজিস্ট থাকলে ও নমুনা সংগ্রহ করা গেলে একটি মেশিনে দিনে অন্তত তিনবার পরীক্ষা করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কুর্মিটোলা হাসপাতাল, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ কয়েকটি কেন্দ্রে অধিকাংশ সময় দিনে এক পালায় নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ল্যাবে কর্মীসংকট থাকায় একাধিক পালায় পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। মাঠপর্যায়ে প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব থাকায় পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহ করতেও সমস্যা হচ্ছে। তার ওপর নানা জটিলতায় একেক সময় একেক কেন্দ্রে পরীক্ষা বন্ধ থাকাতেও দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমবেশি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে শুক্রবার পরীক্ষা বন্ধ থাকে।

সরকার গঠিত করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষার সংখ্যা ও আওতা বাড়লে জনগণের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে। বর্তমানে যে কেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষা হচ্ছে, সেগুলোতেই দৈনিক প্রায় ৩০ হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব। সে জন্য লোকবল ও লজিস্টিক সাহায্য বাড়াতে হবে।

 

সূত্রঃ প্রথম আলো।

আপনার মতামত দিন :