মেয়াদ উত্তীর্ণ ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বিএমটিএ’র আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ!

প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২০

কমবেশি প্রতিটি পেশাতেই মাদার পেশাজীবী সংগঠন থাকে। যে সংগঠন কাজ করে সংশ্লিষ্ট পেশার সার্বিক মান উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও পেশাজীবীদের মঙ্গল এর স্বার্থে। পাশাপাশি কোনো অশুভ অনাহুত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তার বিনাশ করাও পেশাজীবী সংগঠনের দায়িত্ব। দেশে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পেশাজীবীদের জাতীয় সংগঠন হলো “বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন (বিএমটিএ)”। সংগঠনটির সাবেক নাম “বাংলাদেশ ডিপ্লোমা হেলথ টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন (বিডিএইচটিএ)”।

গত ১৮ বছরে বিএমটিএ’র নির্বাচন হয়েছে দুইবার। একটি ২০০২ সালে আরেকটি ২০১০ সালে। সর্বশেষ ২০১০ সালে বিএমটিএ গঠিত হওয়ার পর আর কোনো নির্বাচন হয়নি। এমনকি বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা বিএমটিএ’র সাথে কেন্দ্রীয় বিএমটিএ’র সাংগঠনিক কোনো সমন্বয় নেই। যতটুকু কর্মকান্ড পরিচালিত হয় তা একেবার ভার্চুয়াল। পুরোটাই ফেসবুক নির্ভর। ২০১০ সালে বিএমটিএ গঠিত হওয়ার পর সারাদেশের মেডিকেল টেকনোলজিস্টবৃন্দ একটি আধুনিক এমটি পেশা বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলো। স্বপ্ন দেখেছিলো দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত হবার। দেশের নবীন ও তরুণ মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পরিচালিত বিতর্কিত মানহীন মেডিকেল টেকনোলোজি কোর্স নামক বিষবাষ্প থেকে মুক্ত হয়ে একমুখী গতিশীল কোর্সের প্রত্যাশায় বুক বেধে ছিলো।

পরিতাপের বিষয় কিছুদিন পর ২০১০ সালে নির্বাচিত বিএমটিএ’র মহাসচিব আশীষ কুমার হালদার স্বেচ্ছায় অদৃশ্য কারণে মহাসচিবের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। গঠনতান্ত্রিক নিয়ম উপেক্ষা করে প্রথম যুগ্ম-মহাসচিব আকতার হোসেন কিরণকে সুপারসিড করে মাহবুবকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ইতোমধ্যে সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন খানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই নির্বাচিত সংগঠনের মেয়াদ ২০১৩ সালে উত্তীর্ণ হয়। অতঃপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা। অথচ আজ ২০২০ সাল নির্বাচন তো দুরের কথা সাংগঠনিক ৬৪ জেলাকে নিয়ে কোনোদিন সাধারণ সভা করতে পারেনি। বরং ২০১৩ সালের পর বিএমটিএ’র আর কোনো সাংগঠনিক কর্মকান্ড দৃশ্যমান নয়।

এর মধ্যে ২০১৩ সালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এর নিয়োগকে কেন্দ্র করে কারিগরি বোর্ডের তথাকথিত মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা মহামান্য হাইকোর্টে রিট করে। যেটা পরবর্তীতে তৃতীয় পক্ষীয় রেসপনডেন্ট হয়ে কিছু সংখ্যক তরুণ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মামলায় লড়তে থাকে। ২০১৬ সালে এই মামলার রায়ে সরকারী চাকুরিতে কাররিগরির তথাকথিত এমটিদের বৈধতা দেওয়া হয়। আর রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের এমটিদের জন্য একটি সুখকর পর্যবেক্ষণ আসে “ওয়ান আমব্রেলা কনসেপ্ট”। মহামান্য হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ এমনকি রিভিউ পিটিশনেও অপরিবর্তিত থাকে। যার খেসারত হিসেবে কারিগরি বোর্ডের তথাকথিত এমটিরা আইনি খেলায় জিতে যায়।

২০১৩ সালের পর বিএমটিএ ঘুমিয়ে যায়।অতঃপর দীর্ঘসময় মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা জাতীয় মাদার সংগঠনের অভাব বোধ করতে থাকে।কারিগরি বোর্ডের এমটিদের মামলায় জিতে যাওয়া এবং পেশাজীবী এমটিদের দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদা না পাওয়ায় এমটিরা বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষুব্ধ হতে থাকে।এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে সারাদেশের ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) এর ছাত্ররা দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। তারই ফলশ্রুতি ২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি মাইনরস প্রদান করা হয়। যা আমাদের মাদার সংগঠন বিএমটিএ আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বিএমটিএ’র এই ধারাবাহিক ব্যর্থতায় ২০১৬ সালে গঠিত জাতীয় দাবী বাস্তবায়ন পরিষদও সফল হতে পারেনি।এমনকি রোয়ানুকে উপেক্ষা করে সারাদেশের আইএইচটি’র ছাত্রদের প্রেসক্লাবের সামনে আমরণ অনশনের মতো কর্মসূচিকেও মাদার সংগঠন বিএমটিএ’র ব্যর্থতায় ছাত্রদের ত্যাগের মূল্যায়ণ হয়নি।

অতঃপর ঘুমিয়ে থাকা বিএমটিএ হঠাৎ করে আকতার হোসেন কিরণকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করে ভার্চুয়াল সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালিত করার চেষ্টা করে। অথচ মাহবুব কবে কখন কিভাবে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দয়িত্ব ছেড়ে দিলেন তার কোনো ব্যাখ্যা কিংবা তথ্যবিবরণী দেশের ৬৪ টি সাংগঠনিক জেলাকে জানানো হয়নি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আকতার হোসেন কিরণও কবে কিভাবে তার দায়িত্ব ছেড়েছেন কিংবা রেখেছেন সেই তথ্যও সারাদেশের বিএমটিএ’র সদস্যবৃন্দ জানতে পারেননি। সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বিএমটিএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন খানকে গত রমজান মাসে দেখা গেলো বিএমটিএ’র মহাসচিব হিসেবে বিবৃতি দিতে। এই মেয়াদ উত্তীর্ণ, গঠনতন্ত্র পরিপন্থী, রেজি. বিহীন বিএমটিএ করোনা মহামারিতে দাবী আদায়ের নামে কর্মবিরতির মতো নানান আন্দোলন কর্মসূচি দিচ্ছে। তারা কখনোই এধরনের কর্মসূচি দেওয়ার অধিকার রাখেনা। মূলত তারা সরকারকে জিম্মি করে স্বাস্থ্যখাতের ক্ষতি করতে চাইছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলার বিএমটিএ’র সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের আস্থা হচ্ছে বিএমটিএ। তাই বিএমটিএ দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে সমগ্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রেখে পেশাগত দক্ষতা, সততা ও দেশপ্রেমের চেতনা ঘটিয়ে দেশ গঠনে অধিকতর দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাবে। কিন্তু দীর্ঘদিন বিএমটিএ’র নিস্ক্রিয়তা ও প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকান্ড, বিগত ১০ বছরে বিএমটিএ’র নির্বাচন না হওয়া, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট জাতি পিছিয়ে পড়া বিএমটিএ’র স্বভাবসিদ্ধ রূপকে করেছে কলংকিত। তাই এই মেয়াদ উত্তীর্ণ বিএমটিএ কখনোই আন্দোলন কর্মসূচি দিতে পারেনা। আমরা তা মানবোনা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিএমটিএ’র সাধারণ সম্পাদক এস এম জুনায়েদ বাপ্পি বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট এসোসিয়েশন (বিএমটিএ) হচ্ছে এদেশের মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রাণের সংগঠন, আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। অথচ বর্তমান গঠনতন্ত্র পরিপন্থী বিএমটিএ আন্দোলনের নামে স্বাস্থ্যখাতকে জিম্মি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলছে। সাধারণ মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের জীবন নিয়ে তারা খেলছে।

আপনার মতামত দিন :