মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের পরীক্ষায় অনিয়মের শঙ্কা

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৫:০৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২০

১২ বছর পর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরুরি ভিত্তিতে এর জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করেন এবং নিয়োগের উদ্যোগ নেন। এর আগে গত জুনে বিশেষ বিবেচনায় সরাসরি ২০২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হলেও পরীক্ষার মাধ্যমে ২০০৮ সালের পর এবারই প্রথম ৮৮৯ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ পেতে যাচ্ছে। আগামীকাল শনিবার নিয়োগ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হবে।

এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। চাকরিপ্রার্থীরা আশঙ্কা করছেন, লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরির সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের একটি চক্র অর্থের বিনিময়ে চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও চাকরিপ্রার্থী মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা জানিয়েছেন, এ চক্রের সদস্যরা চাকরিপ্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার নামে ১০-১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করছেন। এজন্য তারা নিজেদের লোক দিয়ে জেলাভিত্তিক তালিকা তৈরি করছেন। তাদের দাবি, টাকা দিলে তারা চাকরিপ্রার্থীকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ব্যবস্থা করে দেবেন। এমনকি তারা এমনও বলছেন, তাদের তালিকাভুক্তি ছাড়া কারও পক্ষে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে।

এসব কর্মকর্তা ও চাকরিপ্রার্থী আরও জানান, প্রশ্ন তৈরির বিষয়টি খুবই গোপনীয় এবং কে কোথায় প্রশ্ন তৈরি করছেন, তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়া কারোরই জানার কথা নয়। কিন্তু অনিয়মের আশ্রয় নিতেই এ চক্র প্রশ্ন তৈরির তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। যেখানে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে, মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পশ্চিমপাশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল লাইব্রেরির আশপাশে চাকরিপ্রার্থীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগে অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের জন্য তিনজনকে সন্দেহ করছেন। তাদের মধ্যে দুজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ও একজন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে কর্মরত। এদের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে কর্মকর্তা প্রশ্ন তৈরি ও নিয়োগ কমিটির সঙ্গে যুক্ত তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অনিয়মের অভিযোগে ২০১৩-১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত চারবার বিভিন্ন জায়গায় শাস্তিমূলক বদলি করা হয়। পরে তিনি আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বদলি হয়ে আসেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও চাকরিপ্রার্থীরা জানান, বাকি দুজনের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে গত জুনে বিশেষ বিবেচনায় সরাসরি ২০২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এমনকি সে সময় নিয়োগ দিতে অর্থ লেনদেনের কথোপকথন সংবলিত ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ড এই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের বলে জানা যায়। তিনি মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের একটি সংগঠনের নেতা। অন্যজন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আরেক কর্মকর্তা। তার পদ ননগেজেটেড হলেও প্রভাব খাটিয়ে কয়েক ধাপ ওপরে একটি গেজেটেড পদ দখল করে রাখার অভিযোগ রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

চাকরিপ্রার্থীরা বলেন, শেষের দুজন চাকরিপ্রার্থীদের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছেন যে, চাকরি পেতে হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাদের সঙ্গে নিয়োগ কমিটির কর্মকর্তাদের ভালো সম্পর্ক। তারাই তালিকা তৈরি করছেন। এ তালিকার বাইরের কারও চাকরি পাওয়া খুব কঠিন হবে।

তবে কোনোভাবেই প্রশ্নফাঁস বা নিয়োগের অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. হাসান ইমাম। তিনি গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়, তার সবই নিয়েছি। যে অভিযোগের কথা বলছেন, এগুলো সবসময়ই কিছু লোক থাকে তারা এ ধরনের গুজব ছড়ায়। আমরা চেষ্টা করছি একটি সুন্দর পরীক্ষা করার জন্য, আমাদের কমিটিও চেষ্টা করছে। কোনোভাবেই অনিয়ম বা নিয়োগবাণিজ্যের সুযোগ আমরা দেখি না। বিশেষ করে পরীক্ষার প্রশ্ন যাতে ফাঁস না হয়, সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা অবশ্যই সতর্ক আছি। কোনোভাবেই যাতে কোনো অনিয়ম হতে না পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া আছে।

অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, গত জুনে অনলাইনে ও কয়েকটি দৈনিকে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পাঁচটি পদে ৮৮৯ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। গত ২৫ নভেম্বর বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর নয়টি ভেন্যুতে লিখিত পরীক্ষা হবে। ৮৮৯টি পদের জন্য আবেদন করেছেন ২৩ হাজার ৫২২ জন।

এর আগে গত ৩ জুন করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে তিন হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ সৃষ্টি করে সরকার। এর মধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ ১ হাজার ২০০টি। তার মধ্যে ২০২ জনকে বিশেষ বিবেচনায় জুলাই মাসের শেষের দিকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অবশিষ্ট ৯৯৮টি পদের মধ্যে এখন ৮৮৯টি পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে বিশেষ বিবেচনায় ২০২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। তখন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রকৃত মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের বাদ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের একটি চক্র কভিড চিকিৎসা কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োগ দেয়। পরে ঘুষের বিনিময়ে তাদের থেকে বেশিরভাগকে চাকরি দেওয়া হয়। যারা বাদ পড়েন তাদের বর্তমান নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল তখনই। তখন এ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করে টেকনোলজিস্টদের সংগঠনগুলো। কিন্তু পরে আন্দোলন থেমে যায় ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা জানান, দেশে দেড় লাখ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দরকার। আছে মাত্র পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। অথচ বেকার মেডিকেল টেকনোলজিস্টের সংখ্যা ২৫ হাজার। সুতরাং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিয়োগ দেওয়া না হলে প্রকৃতরা বঞ্চিত হবেন। এতে প্রধানমন্ত্রী যে কারণে এই পদ সৃজন করেছেন, সেই করোনা শনাক্তে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটবে।

সৌজন্যে : দেশ রূপান্তর।

আপনার মতামত দিন :