দেশব্যাপী করোনার নমুনা পরীক্ষা

ল্যাবে সরঞ্জাম সংকট তীব্র

Shakil Shakil

Ahmed

প্রকাশিত: ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০২০

সারা দেশে সরকারি বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা সরঞ্জামের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে দেশের কোভিড-১৯ পরীক্ষা। দ্রুত এসব সামগ্রী সরবরাহ করা না হলে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহী, খুলনা এবং ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে। এমন তথ্য সয়ং স্বাস্থ্য অধিদফতরের।

 

সম্প্রতি এ ধরনের তথ্য জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো-সিএমএসডিকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এতে বলা হয়েছে, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার পরীক্ষা করার মতো ব্যবহার্য সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা ২০ আগস্ট এ সংক্রান্ত চিঠি দেন সিএমএসডিকে। চিঠিতে অধিদফতরের মহাপরিচালকের স্বাক্ষর রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সরকারি সহায়তায় পরিচালিত আরটি-পিসিআর ল্যাবগুলোতে কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম (কনজিউমেবল গুডস) প্রয়োজন। বর্তমানে সারা দেশে সরকারি সহায়তায় পরিচালিত আরটি-পিসিআর ল্যাবগুলোতে এক মাসে যে পরিমাণ কনজিউমেবল সামগ্রীর প্রয়োজন হয় তার একটি চাহিদাপত্র এতে সংযুক্ত করা হয়েছে। সরকারিভাবে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার পরীক্ষা সম্পন্ন হবে এটা ধরে এই চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে। যা ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিবেচনায় বৃদ্ধি বা হ্রস পেতে পারে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এসব সরঞ্জামের অভাবে দিনাজপুরের আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ, বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, মুগদা মেডিকেল কলেজ, খুলনা মেডিকেল কলেজ, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে এসব সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহ করা প্রয়োজন।

যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন- ক্রায়োভায়েল্স (১.৮ এমএল) স্ক্রুক্যাপ ৫০ পিসের ৫শ’ প্যাকেট। ট্রান্সফ্রি পিপেট (ড্রপার ৩ এমএল) ১০০ পিসের ২শ’ প্যাকেট। মাইক্রোপিপেট (১০ মাইক্রো লিটার) ৯৬০ পিসের ৮০০ বক্স। মাইক্রোপিপেট (২০ মাইক্রো লিটার) ৯৬০ পিসের ৫০০ বক্স। মাইক্রোপিপেট (১০০ মাইক্রো লিটার) ৯৬০ পিসের ৫০০ বক্স। মাইক্রোপিপেট (২০০ মাইক্রো লিটার) এক হাজার পিসের ৪০০ বক্স। অপটিক্যাল ৮ টিউব স্ট্রিপ (০.২/০.১ মাইক্রো লিটার) ১২৫ স্ট্রিপের ৩০০ বক্স। অপটিক্যাল ৮-ক্যাপ স্ট্রিপ ৩০০ স্ট্রিপের ১৫০ বক্স। পটিক্যাল ৯৬ ওয়েল রিয়াকশন প্লেট (০.২/০.১ মিলি লিটার) ১০ প্লেটের ৫০ বক্স। অপটিক্যাল অ্যাডহেসিভ ফিল্ম ১০০ ফিল্ম প্যাকের ৫ প্যাক। রেন্স-ফ্রি মাইক্রোফগ টিউব (১.৫৮এমএল) ৫০০ টিউবের ৮০০ প্যাক।

আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় এসব সরঞ্জামের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ক্রায়োভায়ল মূলত নমুনা প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা হয়। নমুনা পরীক্ষায় বিভিন্ন ধরনের তরল রিয়েজেন্ট স্থানান্তর ও প্রয়োগ করতে নানা প্রকার মাইক্রোপিপেট ব্যবহার করা হয়। পিসিআর পরীক্ষায় ভিন্ন ভিন্ন মাইক্রোপিপেট প্রয়োজন হয়, কারণ একটি নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ধরনের রিয়েজেন্টের সঠিক মাত্রা প্রয়োগ করতে হয়। রিয়েজেন্টের মাত্রার অতিসামান্যতম পরিবর্তন ঘটলেও পরীক্ষার ফলাফলে তারতম্য ঘটতে পারে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি পৃথক নমুনা পরীক্ষার জন্য এসব সরঞ্জাম আলাদাভাবে ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ একবার একটি পিসিআর মেশিনে যদি ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তাহলে এ ধরনের ব্যবহার্য সরঞ্জামও ৯৪টি নমুনার জন্য আলাদা দরকার হয়। কারণ এগুলো ডিসপোজেবল, অর্থাৎ একবারের বেশি ব্যবহারযোগ্য নয়।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, এসব কারণেই পিসিআর পরীক্ষা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং ব্যয়বহুল। একটি নমুনা পরীক্ষার জন্য এত সরঞ্জাম ব্যবহার করতে ১০০ টাকার বেশি ব্যয় হয়। এছাড়া প্রতি নমুনায় কিট ও রিয়েজেন্টসহ আরও ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ পিসিআর মেশিনে একজন ব্যক্তির একটি নমুনা পরীক্ষার জন্য সরকারের ব্যয় হয় ২৮৫০ টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ একটি পিসিআর মেশিনে একবার ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করতে ব্যয় হয় ২ লাখ ৬৭ হাজার ৯০০ টাকা। সরকারিভাবে যদি দৈনিক ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হয় তবে ব্যয় হবে ২৮ কোটি ৫ লাখ টাকা।

এসব কনজিউমেবল বা ব্যবহার্য সরঞ্জাম সিএমএসডি কিনতে শুরু করেছে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিম সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, এটি প্রক্রিয়াধীন। যেহেতু দু’দিন সরকারি ছুটি তাই রোববারের আগে সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই এসব কেনার ব্যবস্থা হবে। এসব কেনাকাটায় দেরি হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক নাসিমা বলেন, এখনও সমস্যা হচ্ছে না। আশা করছি সে রকম হওয়ার আগেই নতুন ব্যবহার্য সরঞ্জাম চলে আসবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্যে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৯২টি ল্যাবে ১১ হাজার ৬৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সারা দেশে পরীক্ষা হয়েছে ১৫ লাখ ২৫ হাজার ৮১৫টি নমুনা। শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ২ হাজার ১৩১ জনকে নিয়ে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৮ হাজার ৯২৫ জন।

তথ্যসূত্রঃ যুগান্তর অনলাইন

আপনার মতামত দিন :