করোনার লক্ষণ নিয়ে দেশে আরো ১১ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরো ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি থাকা রোগীও রয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সতর্কতার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্টদের পরিবারের লোকজন ও বাড়ি কোয়ারেন্টিন করেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন।

কুষ্টিয়া : করোনা উপসর্গ নিয়ে সদর জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন এক নারী গতকাল মারা গেছেন। তাঁর নাম ময়না বেগম (৪২)। জ্বর, কাশি ও থাইরয়েডের সমস্যা নিয়ে গত শুক্রবার তিনি হাসপাতালে এলে করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তাঁর বাড়ি মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের মাহাদীপুরে।

সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ঠাণ্ডা, জ্বরের পাশাপাশি ওই রোগীর কিডনিতেও সমস্যা ছিল। তবে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ : করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে গত শনিবার আবদুর রহিম নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বৃআঙ্গারু গ্রামের এই ব্যক্তি তৈরি পোশাক কর্মী। পরিবারের সদস্যরা রাতেই তাঁকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়।

সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে মারা যাওয়া ওই পোশাককর্মীর মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর চার আত্মীয় ও মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্সের চালকের নমুনা নিয়ে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

ঝিনাইদহ : জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে কালীগঞ্জে ইসরাইল হোসেন (৬০) নামে এক ব্যক্তি শনিবার রাতে মারা গেছেন। তাঁর বাড়ি উপজেলার জামাল ইউনিয়নের খানজাপুর গ্রামে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন লুবনা জানান, ওই ব্যক্তি চার দিন ধরে জ্বর, ঠাণ্ডা-কাশি ও গলা ব্যথায় ভুগছিলেন। শনিবার রাতে হাসপাতালে আনার পথে তিনি মারা যান। এর এক ঘণ্টার মধ্যেই মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

কালীগঞ্জের ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া, জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা : জীবননগরে মেহেজান (৬৫) নামে এক নারী সর্দি-জ্বর ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার মারা গেছেন। তিনি কেডিকে ইউনিয়নের খয়েরহুদা গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের স্ত্রী। এ ঘটনায় ওই বৃদ্ধার বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডা. জুলিয়েট পারউইন জানান, মরদেহ থেকে শনিবার রাতে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

ফরিদপুর : সদরপুরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে কাদের মোল্লা (৫৩) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি মারা যান। তাঁর বাড়ি আকটেরচর ইউনিয়নের আকট কালিখোলা গ্রামে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওমর ফয়সাল বলেন, ওই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর হার্টেরও সমস্যা ছিল। আবার করোনা সংক্রমণের কোনো লক্ষণ ছিল না। তার পরও নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

গোপালগঞ্জ : কাশিয়ানীতে করোনার উপসর্গ নিয়ে গতকাল সানিয়া বেগম (২০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহের পাশাপশি বাড়িটি লকডাউন করেছে প্রশাসন।

ইউএনও সাব্বির আহমেদ জানান, বুথপাশা গ্রামের ওই গৃহবধূ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

পটুয়াখালী : গলাচিপার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের পানখালী গ্রামে রাহিমা বেগম (৬৫) নামে এক নারী গত শনিবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়িতে নিয়ে আসার পথে বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে তাঁর মৃত্যু হয়।

ইউএনও শাহ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মরদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত ওই নারীর পুত্রবধূ ও নাতিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

সাভার (ঢাকা) : করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে গতকাল সাভারে আসাদুল ইসলাম (১৩) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। সে রাজাশন এলাকার কনক হোসেনের ছেলে।

সাভার মডেল থানার ওসি এ এফ এম সায়েদ জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া কিশোরের দাফন স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাসাটি লকডাউন করা হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, মরদেহের নমুনা সংগ্রহ করে এরই মধ্যে আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে।

মাদারীপুর : রাজৈরে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর তাঁর মৃত্যু হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, পাইকপাড়া গ্রামের মহর আলী শেখ (৬০) জ্বর ও সর্দি-কাশির চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এলে তাঁকে সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়।

আরএমও ডা. মিঠুন বিশ্বাস জানান, ওই বৃদ্ধ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না তা নিশ্চিত হতে নমুনা রাখা হয়েছে।

ঝিনাইদহ : সদর উপজেলার খাজুরা গ্রামের এক দিনমজুর করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। গত শনিবার ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর পর পুলিশের তত্ত্বাবধানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, খাজুরা গ্রামের এক ব্যক্তি ফরিদপুরে থেকে দিনমজুরের কাজ করতেন। জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কয়েক দিন আগে তিনি ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।

সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেছে। তাঁর পরিবারকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

মৌলভীবাজার : শ্রীমঙ্গলে গত শনিবার রাতে খলিল মিয়া (৬৫) নামে এক ব্যক্তি করোনা সংক্রমণের লক্ষণ নিয়ে মারা গেছেন। সদর ইউনিয়নের সুরভিপাড়া আবাসিক এলাকার ওই বাসিন্দা প্রায় এক মাস ধরে সর্দি-কাশির চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সায়মা আক্তার বলেন, ‘খলিল মিয়ার শ্বাসকষ্ট ছিল না। তবে গত এক মাস ধরেই তিনি সর্দি-কাশির চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কি না তা নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।’

আপনার মতামত দিন :