কমিউনিটি সংক্রমণে করোনা ছড়িয়েছে ৩৫ জেলায়

প্রকাশিত: ৬:২১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৪, ২০২০

করোনাভাইরাসে কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এতে করে নতুন নতুন জেলার বাসিন্দারা এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৩৫টি জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত করেছে সরকারের রোগতত্ত, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত শনাক্তদের বেশিরভাগ ঢাকা মহানগরীর বাসিন্দা। এরপরই রয়েছে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান। এদিকে দেশে এক দিনেই ১৮২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে বেড়ে হয়েছে ৮০৩ জন। ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জন। গত এক দিনে আরও তিনজন সুস্থ হয়ে ওঠায় এ পর্যন্ত মোট ৪২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির
এ সবশেষ তথ্য তুলে ধরা হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে ইতোমধ্যে কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। এটা যেন না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার মিরপুর, বাসাবোসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় বেশি সংক্রমিত হয়েছে। এসব এলাকা থেকে যারা বিভিন্ন জেলায় গেছে সেসব এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে।
আরও কঠোর হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, লকডাউন পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। বাজারে অনেক লোক ঘোরাঘুরি করছে। বাইরে অনেক মানুষ অযথা ঘোরাঘুরি করছে। এ জিনিসটি পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতাল ও অন্য ব্যবস্থাপনাকে মজবুত করছি। কোনো দেশ লাখ লাখ মানুষের চিকিৎসা হাসপাতালে দিতে পারে না। আমাদের কোভিড-১৯ মোকাবেলার মূল অস্ত্র ঘরে থাকা এবং ঘরে থাকা‌ এবং পরীক্ষা করা। যার মাধ্যমে যারা সংক্রমিত হয়েছে, চিহ্নিত হবে এবং তাদের আইসোলেশনে রাখা যাবে। তারা যেন অন্য কাউকে সংক্রমিত না করতে পারে। এটি সবচেয়ে বড় হাতিয়ার, সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন তিনটি আইসোলেশন সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছেÑ বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি পুরনো মার্কেট ও দিয়াবাড়ীতে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত করার জন্য নিয়েছি। এর মধ্যে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালের পুরনো ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ৩শ শয্যা রয়েছে।
আরও কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুতের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের একটি ভবনে কাজ শুরু হয়েছে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা শহরের ভেতরে ৫শ শয্যার শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ৭শ স্যার আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজকে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে। এগুলোতে আইসিইউ সুবিধা রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় যেসব বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, তারা এগিয়ে এসেছে। তাদের হাসপাতালগুলো আমরা তালিকাভুক্ত করে নিচ্ছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭০টি নমুনা পরীক্ষা করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ১৮২ জন। এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১০ হাজার ৬২৩টি। ১৭টি প্রতিষ্ঠানে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। নতুন আরও চার-পাঁচশ ভেন্টিলেটর ও চার-পাঁচশ অক্সিজেনারেটর আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম শিশুর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়ায়। সোমবার রাত আড়াইটায় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ছয় বছর বয়সি শিশুটি মারা যায়। ১০ বছরের নিচে কোনো শিশুর প্রথম মৃত্যু এটি। আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, রোববার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মানুষের সর্বনিম্ন বয়স ছিল ৩২ বছর। ফলে এটি বাংলাদেশে ১০ বছরের নিচে প্রথম মৃত্যু বলা যায়।

বিশ্ব সাস্থ্যসংস্থা বলছে, করোনাভাইরাসে শিশুরা তুলনামূলকভাবে কম আক্রান্ত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্বে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ছিল দশমিক সাত শতাংশের মতো।

 

আপনার মতামত দিন :