হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে থাকা কিডনি রোগীর মৃত্যু, চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ পরিবারের

প্রকাশিত: ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২০

করোনা সন্দেহে যশোর জেনারেল হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত রোগীর ডায়ালাইসিস করাতে বাইরে না পাঠানোর কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিহতের স্ত্রী অভিযোগ করেন, হাসপাতালের ডা. উজ্জ্বলের অবহেলার কারণে তার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি কখনোই ওই ডাক্তারকে ক্ষমা করবেন না বলে জানান।
বৃহস্পতিবার ভোরে মারা যাওয়া ওই রোগীর নাম আলমগীর কবীর সনু (৪৫ )। তিনি যশোরের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের স্বরূপপুর গ্রামের আনোয়ারুল হকের ছেলে।
নিহতের স্ত্রী সানজিদা কবীর অভিযোগ করেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ওবায়দুল কাদির উজ্জ্বলের অবহেলায় চিকিৎসা না পেয়ে তার স্বামী মারা গেছেন। বারবার তাকে খবর দেওয়ার পরেও ওই চিকিৎসক রোগ্যীকে দেখতে আসেননি।
তবে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তার এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়।
সানজিদা কবীর রাতে এই প্রতিনিধিকে বলেন, গত ১০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন আলমগীর কবীর। সেদিনই তারা ভারতের কলকাতা থেকে দেশে ফেরেন।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশফেরত হিসেবে আমরা (তিনিসহ) জেনারেল হাসপাতালের কোয়ারেন্টিনে থাকতে সম্মত হই। আগে থেকেই ডাক্তারদের সঙ্গে কথা হয়। আমার স্বামীর ডায়ালাইসিস করার ব্যবস্থা করার বিষয়ে আগে থেকেই হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহিত করি। তারাও আমাকে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু, ওই হাসপাতালের কিডনি রোগের বিশেষজ্ঞ ডা. উজ্জ্বল দীর্ঘ এই সময়ে আমার স্বামীর কিডনি ডায়ালিসিসের কোনও ব্যবস্থা করেননি। এমনকি বুধবার রাতে (১৫ এপ্রিল) যখন আমার স্বামীর অবস্থা বেশ খারাপ, তখন ওয়ার্ডে থাকা সিস্টার ও আমি মিলে ডা. উজ্জ্বলকে কমপক্ষে ৫০ বার ফোন দেই। কিন্তু তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। ওই রাতে যদি আমার স্বামীর ডায়ালাইসিস করা যেতো, হয়তো তিনি মারা যেতেন না।
তিনি বলেন, আমার কোনও ক্ষমতা নেই। যদি থাকতো- তবে, ডা. উজ্জ্বল সাহেবের লাইসেন্স কীভাবে থাকে তা দেখে নিতাম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সানজিদা বলেন, সরকার ডাক্তারদের জন্যে হাসপাতালে হাজার হাজার পিপিইসহ করোনা রোগীদের চিকিৎসার্থে সরঞ্জাম দিয়েছে, সেগুলো ব্যবহারের জন্যে। কিন্তু ডাক্তাররা কী করছেন! কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগীদের যদি অন্য কোনও অসুখ থাকে, তার কি চিকিৎসা হবে না- প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি দাবি করেন, যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল তার স্বামীর ডায়ালাইসিস করাতে রাজি ছিল; কিন্তু ডা. উজ্জ্বলই কোয়ারেন্টিনের অজুহাতে রোগীকে সেখানে যেতে দেননি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বহু চেষ্টার পর যোগাযোগ সম্ভব হয় ডা. ওবায়দুল কাদির উজ্জ্বলের সঙ্গে। তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত রাতে আমার ডিউটি ছিল না। যে ডাক্তার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি ওই ভদ্রলোককে অ্যাটেন্ড করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকা রোগী মানেই আমরা সন্দেহ করি- তিনি করোনা আক্রান্ত। সুতরাং তার পরীক্ষা ছাড়া হাসপাতাল ত্যাগের কোনও সুযোগ নেই। আমরা এই রিস্ক নিতে পারি না। সেকারণে আমরা করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি।
তিনি বলেন, যেদিন ওই রোগী এখানে আসেন, আমরা তাকে ঢাকায় রেফার করেছিলাম। ঢাকায় করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট দিনের দিন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু, যশোর থেকে খুলনায় পাঠিয়েও দুই তিন দিন অপেক্ষা করতে হয়।
জানতে চাইলে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, ওই রোগীকে আগেও চিকিৎসা দিয়েছেন ডা. উজ্জ্বল। কিন্তু, ভারত থেকে ফেরার কারণে সমস্যা হয়েছে। হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানোর কোনও ব্যবস্থা নেই। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকায় তার করোনা পরীক্ষা ছাড়া হাসপাতালের ডাক্তারও যেমন তাকে বাইরে পাঠাতে চাননি, তেমনি যেখানে ডায়ালাইসিস করানো হয়, তারাও নিতে চায়নি।
তিনি বলেন, ভারতফেরত অন্য জেলার রোগীকে আমরা ঢাকাসহ তাদের স্ব স্ব জেলায় পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু, এই রোগীর বাড়ি যশোরে। তাছাড়া চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনও যশোরের মানুষ-তিনিও অনুরোধ করেন যশোরে রেখে চিকিৎসা করানোর। আমরা আসলে তার করোনা পরীক্ষা না করিয়ে বাইরে পাঠাতে পারি না।
তিনি বলেন, গেল রাতে ডা. উজ্জ্বলের দায়িত্ব ছিল না। সেখানে মেডিসিন ডাক্তার দেবাশীষ ছিলেন। তিনি ওই রোগীকে চিকিৎসাও দিয়েছেন। এছাড়া গতকাল দুপুরে হাসপাতালের আরএমও তাকে ছাড়পত্রও দেন। কিন্তু তারা যাননি। আমি শুনেছি, ওই রোগীর অ্যাটেন্ডেন্ট যশোরের ইবনে সিনায় ডায়ালাইসিস করিয়ে একবারে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছিলেন। গতকালই আমরা মৌখিকভাবে খুলনা থেকে জানতে পারি, আলমগীর কবীরের করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ ফলাফল। তারপরই ইবনে সিনায় তাকে ডায়ালাইসিসের জন্যে বলা হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে ডায়ালাইসিসের কথা ছিল। কিন্তু, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চুয়াডাঙ্গার সিএসের ফোনে জানতে পারি তিনি এক্সপায়ার্ড হয়েছেন।

আপনার মতামত দিন :