করোনার সংক্রমণ হয়েছে মোট ৫৭ জেলায়, নারায়ণগঞ্জ থেকে ছড়িয়েছে ২১টি জেলা শহরে!

প্রকাশিত: ৫:৪৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২০

দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত ৫৭টিতে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে অন্তত ২১টিতে সংক্রমণ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া লোকজনের মাধ্যমে। আর নারায়ণগঞ্জে সংক্রমণ হয়েছে ইতালি ফেরত প্রবাসীর মাধ্যমে। এদিকে আক্রান্ত অন্য জেলার মধ্যে কয়েকটিতে সংক্রমণ হয়েছে ঢাকা ও গাজীপুর থেকে যাওয়া করোনা রোগীর মাধ্যমে। বেশ কয়েকটি জেলার সংক্রমণের কারণ স্পষ্ট হওয়া যায়নি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম তিন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এই তিন জনের দু’জন ইতালি থেকে দেশে এসেছিলেন। তাদের মাধ্যমেই তৃতীয় ব্যক্তির সংক্রমণ হয়। এই তিন জনই নারায়ণগঞ্জের। এরপরই ঢাকা মহানগরীতে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। সেই থেকে গতকাল মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) পর্যন্ত দেশের ৫৭ জেলায় করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি, বরিশাল বিভাগের ভোলা, রাজশাহী বিভাগের নাটোর এবং খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরে করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি।

টাঙ্গাইলে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ এপ্রিল। ৪৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির বাড়ি মির্জাপুর উপজেলা বৈরাগী ভাওড়া পশ্চিমপাড়া এলাকায়। শনাক্ত হওয়ার তিন দিন আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে মির্জাপুরের বাড়িতে যান। লোকটি নারায়ণগঞ্জে একটি ক্লিনিকে চাকরি করতেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত এ জেলার করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ১৩ জন।

গত ১৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে জেলার প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে উপসর্গ নিয়ে নিজের এলাকায় যান। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হলে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। সিরাজগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যক্তির মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলায় সংক্রমণ হয়। ১১ এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান।

লালমনিরহাটে প্রথম করোনা পজিটিভ হয় সদর উপজেলায় গোকুন্ডা ইউনিয়নের গুড়িয়া দহগ্রামের এক বাসিন্দার। তিনি নারায়ণগঞ্জে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। শনাক্ত হওয়ার তিন দিন আগে ৮ এপ্রিল তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসেন। তার করোনার উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ৩১ বয়সী ওই যুবকের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

দিনাজপুর জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১৪ এপ্রিল। একই দিনে জেলার তিনটি উপজেলার ৭ জন করোনা শনাক্ত হয় বলে জানান দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ। আক্রান্তদের মধ্যে দু’জন হলেন নারায়ণগঞ্জ ফেরত। দু’জন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তারা স্বামী-স্ত্রী। বাকিদের সংক্রমণের কারণ চিহ্নিত করা যায়নি।

চাঁদপুরে প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিটি নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া। ওই ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে লকডাউনের মধ্যে ৫ এপ্রিল নৌপথে চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানায় শ্বশুরবাড়িতে যান। পরে শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে ৯ এপ্রিল তার করোনা শনাক্ত হয়। ওই তরুণের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের সিভিল সার্জন সাখাওয়াত উল্লাহ।

পিরোজপুরে প্রথম করোনা পজিটিভ হয় মঠবাড়িয়ার এক ব্যক্তির। লকডাউনের মধ্যে তিনি ১০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে পিরোজপুর যান। পরে তার নমুনা পরীক্ষা করলে ১৩ এপ্রিল করোনা পজিটিভ হয়। সিভিল সার্জন হাসনাৎ ইউসুফ জাকী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফরিদপুর প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১২ এপ্রিল। আক্রান্ত ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ থেকে যাওয়া। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে ফরিদপুরের নগরকান্দা গেলে তার করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পরে পরীক্ষার পজিটিভ আসে। একই দিনে এ জেলায় আরেকজন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। তিনি ঢাকা থেকে এলাকায় যান।

পাবনায় প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ১৬ এপ্রিল। ৩২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় টাইলস মিস্ত্রির কাজ করতেন। ওই ব্যক্তি ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে এসে জ্বর, ঠান্ডায় আক্রান্ত হন। পরে তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে করোনা ধরা পড়ে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নরসিংদীতে প্রথম করোনা চিহ্নিত ব্যক্তির বাড়ি জেলার পলাশ উপজেলার ইসলামপাড়া গ্রামে। মুফতি শামীম মিয়া নারায়ণগঞ্জের একটি গার্মেন্টে চাকরি করতেন। তিনি ওই গার্মেন্টের মসজিদে ইমামতিও করতেন। করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তিনি নিজেই ৫ এপ্রিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা করান। পরদিন করোনা পজিটিভ জানতে পারেন। তিনি এরইমধ্যে সুস্থ হয়ে গেছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ২০ এপ্রিল। জেলা শহরের পৌর এলাকার দক্ষিণ চরমোহনপুর এলাকার ওই ব্যক্তি ১৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে এলাকায় আসে। ওই সময় তার কোনও উপসর্গ ছিল না। তবে, নারায়ণগঞ্জ ফেরত হওয়ায় ওই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী পাঠানো হলে পজিটিভ আসে। জেলা প্রশাসক এ জেড এম নূরুল হক এ তথ্য জানিয়েছেন।

বান্দরবানে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয় ১৫ এপ্রিল। জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনারপাড়া এলাকার ওই বাসিন্দা কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাবলিগ করে আসেন। আক্রান্ত ওই ব্যক্তির বয়স ৫৯ বছর।

রংপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার এক যুবকের। রংপুর মেডিক্যালে নমুনা পরীক্ষা করলে গত ৮ এপ্রিল তার করোনা পজিটিভ হয়। এর আগে ওই যুবক নারায়ণগঞ্জে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ১১ এপ্রিল। এ জেলায় একই দিনে তিন জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি হরিপুর উপজেলার। অন্য একজনের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলায়। সিভিল সার্জন ডা. মাহফুজার রহমান সরকার জানান, আক্রান্ত তিন জনই নারী

আপনার মতামত দিন :