গাজীপুরে ২১ চিকিৎসকসহ ৯১ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৮:২৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রতিটি জেলাতেই। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কয়েকটি জেলাকে ‘হটস্পট’ হিসাবেও ঘোষণা করা হয়েছে। তন্মধ্যে নারায়ণগঞ্জের পর গাজীপুর জেলায় করোনা পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক হয়ে উঠছে। এ জেলায় এখন পর্যন্ত সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ৯১ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন চিকিৎসক, ২৪ জন নার্স এবং ৪৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।

বুধবার (২২ এপ্রিল) সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহীন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী গত সোমবার পর্যন্ত কিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে ৯১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ৪৬ স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে ল্যাব টেকনিশিয়ান, ফিল্ড অফিসার, ওয়ার্ড বয়সহ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা–কর্মচারী আছেন। তবে গত দুই দিনে গাজীপুরে আক্রান্তদের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

মুহাম্মদ শাহীন জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসকদের মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৭ জন, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের ১২ জন আছেন।

এছাড়াও নার্সদের মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাতজন, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাতজন, কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের আটজন আছেন। ৪৬ স্বাস্থ্যকর্মী জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত।

শহীদ তাজদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, তিনি গাজীপুরের গ্রীন হাসপাতাল কাজ করেন। ১৪ এপ্রিল ওই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার সময় এক চিকিৎসক হাঁচি ও কাশি দিতে থাকলে তাঁকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে দেন সহকর্মী। পরে ১৮ এপ্রিল তিনি পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠান। ২০ এপ্রিল জানতে পারেন, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।

এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, গাজীপুরে অসচেতনতা ও সামাজিক দূরত্বের নিয়ম নীতি না মানার কারণে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে হাট বাজার ও অলিগলিতে মানুষের উপচেপড়া ভিড় এই আশঙ্কাকে বহুগুণ বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন তারা। এ জন্য হাট বাজার খোলা মাঠে স্থানান্তর এবং সপ্তাহে দুই/তিনদিন সময় সূচি দিয়ে হাট বাজার বসানোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, মালেকের বাড়ি, চেরাগআলী, টঙ্গী বাজার, সালনা, মাস্টারবাড়ি, কোনাবাড়িসহ শ্রমিক অধ্যূষিত এলাকায় সাধারণ মানুষ মানছেন না লকডাউন। এসব এলাকার হাট, বাজার ও অলিগলিতে মানুষের ভিড় দেখে উপায় নেই জেলায় লকডাউন চলছে। লকডাউন অমান্য করেই চলছে নির্মাণ কাজ, চায়ের দোকানে বসছে আড্ডা। লোকসমাগমের এসব স্পটে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক নিরাপদ দূরত্ব। ইতোমধ্যে  এই জেলাটি করনো ভাইরাস সংক্রমণে হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আর এভাবে অসচেতনতা ও সামাজিক দূরত্বের নিয়ম নীতি না মানার কারণে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

লোক সমাগমরোধে হাট বাজার খোলা মাঠে স্থানান্তর করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সপ্তাহে দুই/তিনদিন সময় সূচি দিয়ে এসব বাজার বসানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি করছেন সাধারণ মানুষ।

আইইডিসিআররের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গাজীপুর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে ২৬৯ জন।

আপনার মতামত দিন :