জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট

চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র ও চিকিৎসায় লোকবল সংকট চরমে

প্রকাশিত: ১:০২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২০

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) চিকিৎসাসেবা ও নমুনা সংগ্রহ-পরীক্ষা চলছে চিকিৎসক, নার্সসহ জনবল সংকটের মধ্য দিয়ে। আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি সংক্রামক এ ভাইরাস পরীক্ষার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কিন্তু এসব জনবল সংকট দেখা দেওয়ায় হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছেন।

চিকিৎসকদের মতে, যেভাবে করোনা আক্রান্ত ও সন্দেহজনক রোগীর বাড়ার সঙ্গে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে সে অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট বিভিন্ন বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারী জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন। ইতোমধ্যে দুইটি হাসপাতাল থেকে লোকবল চেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বরাবরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির আগের লোকবল দিয়ে করোনার আইসোলেশন ওয়ার্ডসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এতে করে তারা নানা সমস্যায় পড়ছেন।

চট্টগ্রামে এখন সরকারি তিনটি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও সন্দেহজনক (কভিড-১৯) রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসক-নার্সসহ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সংকট না হলেও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে সংকট রয়েছে।

চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ১০০ শয্যার করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে সদর হাসপাতাল হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। এখানে গতকাল রবিবার দুপুর পর্ষন্ত আইসোলেশনে রয়েছে ২৮ জন রোগী। এরমধ্যে ২৪ জনই শনাক্ত। অপর চারজনের পরীক্ষা হলেও রিপোর্টের অপেক্ষায়। এ হাসপাতালে ইতোমধ্যে ৮ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট এবং ৭ জন মেডিক্যাল অফিসার প্রেষণে দেওয়া হলেও বিভিন্ন বিভাগে (করোনা রোগী) চিকিৎসাসেবার জন্য আরও অন্তত ৩০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন। এসব চিকিৎসক প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে সর্বশেষ গত শনিবার স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, আইসোলেশনে আমাদের এখানে দিন দিন রোগী বাড়ছে। বর্তমান যে লোকবল রয়েছে তারা তো চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। কিন্তু চিকিৎসকসহ আরও কিছু লোকবল প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) আইসোলেশনে গতকাল দুপুর পর্ষন্ত ৮ জন রোগী আইসোলেশনে রয়েছে। এরমধ্যে চারজন শনাক্ত এবং চারজনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের অপেক্ষায়। করোনার জন্য ৩০ শয্যার সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে ১২ জন চিকিৎসককে প্রেষণে সংযুক্ত করা হয়েছে। এখন মোট ৪০ জন চিকিৎসক এবং ৪০ জন নার্স রয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাছান চৌধুরী জানান।

তিনি বলেন, আমাদের এখানে আইসিইউ স্থাপনের জায়গা নেই। ৭টি কক্ষে করোনারোগীর চিকিৎসাসেবার জন্য ৩০টি শয্যা করা হয়েছে।

তবে বিআইটিআইডির অধীনে থাকা চট্টগ্রামে একমাত্র করোনাভাইরাসের পরীক্ষা কেন্দ্রে লোকবল সংকট চরম আকার ধারন করেছে। সূত্র জানান, মাইক্রোবায়োলজী ল্যাবে টিবি রোগসহ বিভিন্ন রোগের আগে (করোনা পরিস্থিতির আগে) দৈনিক এক শিফটে ২৫ থেকে ৩০টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতো। সকাল সাড়ে আটটা থেকে আড়াইটা পর্ষন্ত কাজ করা হতো। করোনা নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা শুরুর পর কাজ বেড়েছে ৭/৮ গুণ। দুইশিফটে সকাল থেকে রাত ১০ টা পর্ষন্ত পরীক্ষা হচ্ছে করোনার। কিন্তু এ পর্ষন্ত লোকবল বেড়েছে মাত্র একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ।

জানতে চাইলে বিআইটিআইডির মাইক্রোবায়োলজী বিভাগের প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ গত শনিবার বিকেলে বলেন, আমাদের এখানে কিটের কোনো সংকট নেই। নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় আমাদের এখানে আরও অন্তত ৭/৮ জন প্রয়োজন। আমাদেরকে গড়ে ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হয়। কিন্তু লোকবলের সংকট রয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল পাওয়া গেলে আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে।

এদিকে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাছান চৌধুরী গতকাল দুপুরে বলেন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক প্রেষণে যোগদান করেছেন।

সুত্রঃ কালের কন্ঠ

আপনার মতামত দিন :