কর্তৃপক্ষ শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়েছেন, বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের

প্রকাশিত: ৮:০৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৩, ২০২০

 

১৯৭১ সালের পরে এই যুদ্ধ পীড়িত ও যুদ্ধাহত নব স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, অনেক গরীব, দুস্থ, অসহায় মানুষের সামান্য রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানও সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেটা মনে করতে হলে, আমাদের সেই পূর্বের কথা স্মরণ করতে হবে যখন সামান্য কলেরা রোগে গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে যেত, অসংখ্য মানুষ মারা যেত। যা জনবান্ধব বঙ্গবন্ধু’র সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। ঠিক তখনি স্বল্প সময়ে সবার জন্য মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা প্রদান বাধ্যতামূলক করার জন্য বঙ্গবন্ধু’র সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ১৯৭৩-১৯৭৮ ইং মোতাবেক ব্রিটিশ পাকিস্তান পিরিয়ডের মেডিকেল কাউন্সিল নিবন্ধিত লাইসেন্সশিয়েট অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি এলএমএফ, মেম্বার অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি এমএমএফ ডিপ্লোমা সমমানের কোর্স কারিকুলাম অনুসারে চিকিৎসা বিদ্যায় ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ‘ডিএমএফ’ কোর্স টি আন্তর্জাতিক ভাবে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক অধিভূক্ত, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ( ম্যাটস্ ) এর মাধ্যমে ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা চিকিৎসকতা পেশা কোর্স টি প্রথম যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এদেশে ৯ টি সরকারি ম্যাটস্ ও প্রায় ২০৪ টি বেসরকারি ম্যাটস্ ডিপ্লোমা চিকিৎসকের ‘ডিএমএফ’ কোর্স টি পরিচালনা করে আসছে। এখানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০,০০০ ষাট হাজার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১০ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক ‘সাব এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার এসএসিএমও’ পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপ-হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল সহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এছাড়াও প্রায় ১২ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, দেশি বিদেশি এনজিও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে কর্মরত আছেন। বর্তমানে নতুন পাশ করা ১৫ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক বেকার রয়েছেন, যাদেরকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন নিয়োগ দিলে নভেল করোনা ভাইরাস মোকাবেলা সহজ হতো বলে সাধারণ জনগণ মনে করেন। এখনই এ বিষয়ে সরকারের জরুরি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

 

বঙ্গবন্ধু প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পনের অধ্যায়ের ৫২০ ও ৫২১ পৃষ্টায় লেখে রেখে গেছেন এই মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার-ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের যেনো মেডিকেল সায়েন্সে কনডেন্সে উচ্চশিক্ষা ব্যাচেলর অব মেডিসিন এন্ড ব্যাচেলর অব সার্জারী ‘এমবিবিএস’ কোর্স করার সুযোগ দেয়া হয়। এ পরিকল্পনায় ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া ছিল। মহামানব মুজিব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, অন্যান্য ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের যেমন; হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, নার্সিং, মিডওয়াইফারী, ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল টেকনোলজী (ল্যাব, ফিজিওথেরাপি, রেডিওগ্রাফার, রেডিওলোজী), ফার্মেসি, কৃষি, ফিশারিজ, ফরেস্ট্রী, সার্ভেয়ার, লাইভস্টক প্রভৃতির উচ্চশিক্ষার ন্যায় ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জন্যেও বিএমডিসি কাউন্সিল স্বীকৃত উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাঙ্গালীর প্রাণপুরুষ মুজিব বোঝতে পেরেছিলেন যে, সারাবিশ্বে সায়েন্স বেকগ্রাউন্ডে ১২ ক্লাস হায়ার সেকেন্ডারি পর্যন্ত পড়ে মেডিকেল-ডেন্টাল সায়েন্সে স্নাতক এমবিবিএস, বিডিএস, (স্নাতক এমডি-দেশের বাহিরের) ইত্যাদি পড়তে পারলে, বায়োলজীসহ এসএসসি সায়েন্স বিভাগে পাস করে ৪ চার বছর (ডিএমএফ) ডিপ্লোমা পাস করার পর বিএম&ডিসি নিবন্ধিত ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ (সেকেন্ডারি প্লাস ডিপ্লোমা ৪ বছর) সর্বোমোট ১৪ ক্লাস পাশ করার পর অবশ্যই ‘এমবিবিএস’ ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা রাখেন। মহাকালের মহানায়ক মুজিব বোঝতে পেরেছিলেন যে, উচ্চ মাধ্যমিকে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, বায়োলজী সহ এইচএসসি পাশ করে একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য মেডিকেল সায়েন্সে ‘এমবিবিএস’ অর্জনের সুযোগ পেলে মাধ্যমিকে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, বায়োলজী সহ এসএসসি পাশ করে ডিএমএফ কোর্সের ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ম্যাটস্ সমূহে মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী এন্ড অবস্টেট্রিকস্, এনাটমী, ফিজিওলজী, প্যাথলজী, মাইক্রোবায়োলজী, বায়োকেমিস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজী, মেডিকেল জুরিসপ্রুডেন্স, কমিউনিটি হেলথ্, হেলথ্ ম্যানেজমেন্ট, বেসিক ইংলিশ, কম্পিউটার সায়েন্স ও মেডিকেল ইথিক্স বিষয়ে ১ বছরের ইন্টার্নীশিপ সহ সর্বোমোট ৪ চার বছর পড়াশোনা করে ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা পাশ করার পর অবশ্যই মেডিকেল সায়েন্সে ‘এমবিবিএস’ কোর্সে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। বাঙ্গালীর স্বপ্নদ্রষ্টা মুজিব বোঝতে পেরেছিলেন যে, উচ্চশিক্ষা রাষ্ট্রের প্রতিটা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তাই ডিএমএফ পাশ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হলে, উন্নত দেশের ন্যায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশেও চিকিৎসা সেবা খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হবে। আজ বাঙ্গলীর স্বপ্নদ্রষ্টা মুজিব নেই, তাই তার স্বপ্ন প্রথম বার্ষিকী পরিকল্পনা ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হয় নি। যে প্রাণ পুরুষের জন্ম না হলে, এই সোনার বাংলার জন্ম হতো না, বাংলাদেশের জন্ম হতো না, যার জন্ম না হলে বাঙ্গালী জাতি মুক্তি পেতো না, আজও সেই মহামানবের স্বপ্ন প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সমগ্র অসমাপ্তই রয়ে গেল! তবুও ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন, সেই দিনের অপেক্ষায় থাকেন, যে দিন আবারো কেউ আসবে, আসবেই বাঙ্গালীর প্রাণপুরুষ মুজিবের আদর্শ বক্ষে ধারন করে। যার চেতনার মূলমন্ত্র হবে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সমগ্র বাস্তবায়ন করা। সকল ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের প্রাণের দাবি, উচ্চতর শিক্ষায় সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সৃষ্ট ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ‘ঢাকা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ ডুয়েট এর মতো স্বতন্ত্র ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করা হোক। ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ স্বপ্ন দেখেন যে, তারা চিকিৎসা বিদ্যায় উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসক হয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাত কে জনগণের দোর-গোড়ায় পৌঁছে দেবেন, চিকিৎসা সেবা খাতকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজড্ করবেন। যারা বৈশ্বিক মহামারীতে লুকিয়ে না থেকে রোগীর সেবায় নিজের জীবন বিসর্জন দেবেন। কথায় আছে অধিকতর ভাল কিছু পাওয়ার জন্য কম ভাল কিছু উপহার দিতে হয়। উচ্চশিক্ষাটা ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উপহার হিসেবে দেওয়া প্রয়োজন। কাজেই এ বিষয়ে সরকারের অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করি।

 

তা ছাড়াও ১৯৭৬ সালের গভঃ মেডিকেল স্কুল ম্যাটস্ তৈরির সরকারি প্রজেক্ট প্রোফাইলে সব কিছুর সুস্পষ্ট উল্লেখ ছিল। উল্লেখ ছিল, পেশাভিত্তিক পরিচিতি মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার, টাইটেল/উপাধি ডিপ্লোমা চিকিৎসক পদবি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণের ভাগ্য। লেখা ছিল এদের তৈরির সকল উদ্দেশ্য এবং সরকারি- বেসরকারি সকল চাকরি ক্ষেত্রে তারা কি কি সুযোগ সুবিধা পাবে সব। প্রজেক্ট প্রোফাইলে তিন টি স্টেপসের লিখিত দালিলিক প্রতিশ্রুতি দেয়া ছিল।

স্টেপ ওয়ানঃ মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার (ডিপ্লোমা চিকিৎসক) গণ পদবি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার চাকরির প্রথম ৫ বছর পর্যন্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার) গণের সমমান বেতন ও অন্যান্য সুবিধা জাতীয় পে-স্কেলে পাবেন উল্লেখ ছিল।
স্টেপ টুঃ মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার (ডিপ্লোমা চিকিৎসক) গণ পদবি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার চাকরির প্রথম ৫ বছরের পর হতে ১২ বছর পর্যন্ত বেতন ও অন্যান্য সুবিধা জাতীয় পে-স্কেলের (সর্বোমোট গ্রেড ২০ টি) মাঝ খানের অর্থ্যাৎ প্রমোশনে ১০ দশম গ্রেডে আসবেন। উল্লেখ্য, আশির দশকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার) গণের এন্ট্রি পদ ১১ তম গ্রেডে ছিল, এখন এদের এন্ট্রি পদ যেহুতু ১০ ম গ্রেডে তাই এই পরিকল্পনাটা বর্তমান পে-স্কেলে অকেজো বলে গন্য হবে।

স্টেপ থ্রীঃ এখানে একটা বিরাট সম্মান, পদোন্নতি ও পদবির কথা বলা হয়েছিল। ১২ বছর চাকরি করার পর মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার (ডিপ্লোমা চিকিৎসক) গণ পদবি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদোন্নতি পেয়ে (প্রথম শ্রেণীর ৯ নবম গ্রেড) নতুন পদবি “মেডিকেল অফিসার” পাবেন। তারা “সহকারী সার্জন” এর সমমান বেতন ও অন্যান্য সুবিধা জাতীয় পে-স্কেলে পাবেন। যেমন করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার) গণ পদোন্নতি পেয়ে (প্রথম শ্রেণীর ৯ নবম গ্রেড) সহকারী প্রকৌশলী হয়ে থাকেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারগণ পদোন্নতিতে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ৫ ম গ্রেড প্রাপ্ত হয়ে চাকরি থেকে অবসর নেন। স্বাধীনতার অর্ধশতকবর্ষ পার হলেও এদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ এখন পর্যন্ত এ সকল লিখিত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন তো করেই নি বরং উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদ টিকে ১১ তম গ্রেডের ব্লক পোস্ট করে রেখেছে! অর্থাৎ ৪০ বছর তাদের একই গ্রেডে একই চেয়ারে বসে কাজ করে যেতে হয়, কোনো পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা হয় নি! যা অত্যান্ত অমানবিক বিষয় বলে বিবেচিত হয়। শুধু তাই নয় এস.এ.সি.এম.ও দের নিচের গ্রেডের বিভিন্ন কর্মচারীদের পদোন্নতি দিয়ে এস.এ.সি.এম.ও দের বস বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে তবুও এস.এ.সি.এম.ও দের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় নি! এই বৈষম্যের জন্যই কি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ স্বাধীনতা অর্জন ? এমতাবস্থায় সরকারের উচিত এসকল বিষয়ে অতিদ্রুত পদক্ষেপ নেয়া। অন্যথায় এসএসিএমও দের মনোবিস্ফোরণ কখন, কোথায় ঘটবে তা কেউ বলতে পারে না।

 

আলোচনার এপর্যায়ে এসে এবার আমরা জানবো ১৯৮৫ সালের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাইনুটস বিষয়ে। এখানেও সুস্পষ্ট উল্লেখ ছিল উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ চাকরির প্রথম ৫ বছর পর্যন্ত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার এস.এ.এম.ও থাকবেন। চাকরির ৫ বছর পর থেকে ১২ বছর পর্যন্ত সহকারী মেডিকেল অফিসার এ.এম.ও হবেন। ১২ বছর সন্তোষজনক ভাবে চাকরি করার পর মেডিকেল অফিসার পদে পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য অপশক্তির কারণে এসব কোন কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নি। ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের ভাগ্য নিয়ে কোন একটা মহল ছিনিমিনি খেলছে। কর্তৃপক্ষ ভুলে যায় একজনকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করার জন্য ইহকালে ও পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। আমি কেবল মনে করিয়ে দিতে চাই, প্রতিটা ডিপ্লোমা চিকিৎসকের আত্মার ক্রন্দন শব্দের তিল তিল হিসাব পারলৌকিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবাইকে দিতে হবে। সরকারের উচিত এসব বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা। কারণ স্বাধীন দেশে কেউ কারো ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার রাখে না। যেমনটা খেলা হচ্ছে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের ভাগ্য নিয়ে।

 

সবশেষে বলতে চাই প্রথম যেদিন আমাদের দেশে নভেল করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয় তখন থেকেই শহরের শ্রমজীবী মানুষ করোনার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পেতে নিজ নিজ গ্রামের বাড়ীতে চলে গেছেন। আমরা জানি এদেশের প্রায় ৮০ ভাগ লোক গ্রামে বসবাস করেন। গ্রামের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র গুলো প্রাইমারী লেভেলের। উপজেলা পর্যন্ত প্রাইমারী লেভেলের স্বাস্থ্য সেবা পরিচালিত হয়। গ্রামে গ্রামে লক ডাউন বলবৎ থাকায় এখন আর গ্রামের রোগী জেলা শহরে সেকেন্ডারী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে যেতে পারছেন না। এমতাবস্থায় গ্রামের সিংহভাগ রোগী ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য সেবা নিচ্ছেন। প্রাইমারী লেভেলে স্বাস্থ্য সেবার প্রথম হাতিয়ার ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ। তারপরও গত ৬ বছর ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের কোন নিয়োগ নেই। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে প্রায় ৩ হাজার এসএসিএমও পদ শূন্য রয়েছে। বিগত ৬ বছরে মোট কর্মরত পদ থেকে অবসরগ্রহণ করেছেন আরো প্রায় ১ হাজার এসএসিএমও। দীর্ঘদিন এ পদে নিয়োগ নেই তাই বেকার রয়েছেন মেডিকেল সায়েন্সের মতো জটিল বিষয়ে প্রশিক্ষিত হাজার হাজার ডিপ্লোমাধারী জনবল। অনেক মেডিকেল ডিপ্লোমাধারী দীর্ঘদিন চাকরির আশায় থেকে থেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের ডিপ্লোমা চিকিৎসকতা পেশার কথা ভুলে যেয়ে অন্য পেশায় মনোনিবেশ করছেন। অপরপক্ষে একটা মহল গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার দায়িত্ব কোয়াকদের হাতে তোলে দিয়ে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ। এ লজ্জার দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না।

 

এতো কিছুর পরও ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে নভেল করোনা ভাইরাস কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জে কর্মরত গাজীপুর কাপাসিয়ার একজন ইন্টার্ন ডিপ্লোমা চিকিৎসক করোনা উপসর্গে মারা যাওয়া সহ এ পর্যন্ত ২৯ জন ডিপ্লোমা চিকিৎসক কর্মস্থলে সেবা দিতে গিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও তারা তাদের কর্মস্থলে অকুতোভয় করোনা যোদ্ধার মতো রোগীদের সাধ্য মতো চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের গর্ব, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সৃষ্ট ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ দেশের গর্ব।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক : ডা. এম. মিজানুর রহমান (জনস্বাস্থ্যবিদ)
ডিপ্লোমা চিকিৎসক পেশাজীবী নেতা।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট জনস্বাস্থ্যবিদ পেশাজীবী নেতা।
আইন শাস্ত্রের শিক্ষার্থী ও সুলেখক।