অবহেলায় মায়ের মৃত্যুর অভিযোগে ইউনাইটেডকে চিকিৎসকের লিগ্যাল নোটিশ

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ২:৫২ পূর্বাহ্ণ, মে ৪, ২০২০

অবহেলা, অসদাচরণ ও অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে মায়ের মৃত্যুর জন্য যৌক্তিক ও আইনগত ব্যাখ্যা চেয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার।

তার পক্ষে আইনজীবী গোলাম মোস্তফা (শাহীন) হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই নোটিশ পাঠিয়েছেন। বিষয়টি রোববার (৩ মে) জাগোনিউজকে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী গোলাম মোস্তফা (শাহীন) নিজে।

তিনি জানান, নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে রোগীর সাথে অবহেলা, অসদাচরণ ও অশোভন আচরণ এবং মৃত্যুর জন্য যৌক্তিক কারণ ও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। অন্যথায় আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গত ২৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দারের মা মাহমুদা খানম (৭৫) মারা যান। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে মাহমুদা খানমকে ইউনাইটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। কিন্তু লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় ১৪ এপ্রিল তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ (ছাড়) করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহমুদা খানমের মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী গোলাম মোস্তফা বলেন, লাইফ সাপোর্টে থাকা একজন রোগীকে অ্যাম্বুলেন্স এবং পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যগত সাপোর্টিং ব্যবস্থা ছাড়া অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এর আগেও ইউনাইটেড হাসপাতালের এমন অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

মায়ের মৃত্যুর পর ডা. জিয়াউদ্দিন হায়দার প্রধানমন্ত্রীর কাছেও এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন বলে জানান আইনজীবী গোলাম মোস্তফা।

তিনি জানান, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিহীন, আইনবহির্ভূত ও কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে মা মাহমুদা খানমের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করেন ডা. জিয়াউদ্দিন। তাদের পরিবারে তিন ভাইসহ পাঁচজন ডাক্তার। একটি হাসপাতালের এমন অবহেলার কারণে মায়ের মৃত্যু কোনোভাবেই তারা মেনে নিতে পারছেন না।

মায়ের মৃত্যু নিয়ে জিয়াউদ্দিন দেশি-বিদেশি সিনিয়র চিকিৎসক, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারাও মনে করছেন, এটা আদতে একটা হত্যাকাণ্ড।

জিয়াউদ্দিন জানান, গত ৫ এপ্রিল তার মায়ের নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। কিন্তু ১১ এপ্রিল তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিচে নামতে থাকে। এ অবস্থায় তাকে একাধিক বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হলেও করোনাভাইরাসের ভয়ে সবাই ফিরিয়ে দেয়। পরে উত্তরার একটি ক্লিনিকে নিয়ে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এরপর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট এলে তাকে ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হয়। কারণ তার রক্তে তখন অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৫০ শতাংশেরও কম।

ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪ এপ্রিল ডা. জিয়াউদ্দিনের ভাইদের ডেকে বলে, তাদের মায়ের দ্বিতীয় কোভিড-১৯ পরীক্ষায় ফল পজিটিভ এসেছে এবং তাকে এ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিতে হবে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতো, যদি ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় তবে তার অপরিবর্তনীয় মস্তিষ্কের ক্ষতিতে ভুগবেন তিনি এবং মৃত্যুবরণ করবেন। জিয়াউদ্দিনের ভাই, আত্মীয়-স্বজন এবং কিছু বন্ধুবান্ধব অনুরোধ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাহমুদা খানমকে তখন রিলিজ করে দেয়। কোনো মোবাইল ভেন্টিলেটরের সুবিধা ছাড়াই তাকে সেখান থেকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।

এরপর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও মাহমুদা খানমের মস্তিষ্কের যে ক্ষতি হয়েছে, তা আর কাটিয়ে ওঠা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তিনি গভীর কোমায় চলে যান। ২৩ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টায় মারা যান মাহমুদা খানম।

ডা. জিয়াউদ্দিন জানান, ইউনাইটেডের এমন আচরণের সঙ্গে সঙ্গে ছিল কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স-আয়াদের ভীতি, অমনোযোগিতা, অপ্রতুলতা আর অদক্ষতা এবং ঘায়ের মাধ্যমে (শুয়ে থাকতে থাকতে তার পিঠে ঘা হয়েছিল) সমগ্র শরীরে ছড়িয়ে পড়া ‘সেপসিস’, যা খুব দ্রুত তার মায়ের হৃদযন্ত্রকে আক্রান্ত করে এবং পরিশেষে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

ড. জিয়াউদ্দিনের বরাত দিয়ে আইনজীবী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি (ডা. জিয়া) জানি ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শক্তিশালী। কিন্তু ওদের কৃত অপরাধ চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এক বিভীষিকাময় কলঙ্ক। এই কলঙ্কের কথা বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বিবেকবান মানুষের জানা উচিত, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ওদের বিচার হওয়া উচিত এবং যেন এভাবে স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ভবিষ্যতে কাউকে সহ্য করতে না হয়।

আপনার মতামত দিন :