চট্টগ্রামে সরকারী হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন লাকড়ি দিয়ে রান্না করতে হলো ২০০ রোগীর খাবার Jewel Das Jewel Das Guptha প্রকাশিত: ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০ চলতি সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া পরিশোধের কথাতেও মন গলেনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এর বিক্রয় উত্তর বিভাগের কর্মকর্তাদের। বকেয়া আদায়ের অজুহাতে প্রায় দুইশ রোগীকে বিপদে ফেলে গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় কেজিডিসিএল। গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালের আন্ত.বিভাগে চিকিৎসাধীন থাকা দুই শতাধিক রোগীর পথ্য সরবরাহে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। এতে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন রোগী ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে জেনারেল হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার তথ্য জানা নেই স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালের কিছু গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। আমরা বকেয়া বিলের অর্থ পরিশোধের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ দুই লাখ ৭৩ হাজার টাকা একটি আংশিক বিল করে দিয়েছিল। সরকারি টাকা চাওয়া মাত্র পরিশোধ করা যায় না। কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার দুপুরে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ জেনারেল হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে আসা কর্মকর্তাদের আমরা অনেক অনুরোধ করেছিলাম। তারা আমাদের অনুরোধ শুনেননি। এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রায় দুইশ রোগীকে নিয়ে আমরা বিপত্তিতে পড়েছি।’ এদিকে সোমবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন আনোয়ার হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুনেছি গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় হাসপাতালের গ্যাসের লাইন কেটে দিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষ। অথচ কর্ণফুলী গ্যাসের শত শত কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। টেক্সটাইল মিল, রিফ্যুয়েলিং স্টেশনসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা বকেয়া। ওইসব বকেয়া উদ্ধারে শক্ত পদক্ষেপ না নিয়ে সরকারি হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে রোগীদের বেকায়দায় ফেলা দুঃখজনক। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক বলেন, ‘যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে। সেখানে মাত্র ৭ লাখ টাকা বকেয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া দুঃখজনক। জেনারেল হাসপাতালে বেশিরভাগ গরীব রোগী চিকিৎসা নেয়। পথ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হলে রোগীরাই বিপাকে পড়বে। সঠিক সময়ে পথ্য না পেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জীবনের ঝুঁকিও রয়েছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘সোমবার রাতে লাকড়ি সংগ্রহ করে রোগীদের খাবার রান্নার কাজটি সারতে হয়েছে।’ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দায়িত্বে থাকা কেজিডিসিএল এর বিক্রয় উত্তর বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক কবির আহমদ বলেন, ‘প্রায় ৫২-৫৩ মাসের মিলে ৭ লাখ টাকার বেশি বিল বকেয়া রয়েছে। বার বার চিঠি দেওয়ার পরেও বিল পরিশোধ করেনি। এরপরেও তো কিছু করার নেই। এতদিন রোগীর কথা চিন্তা করেই এত্তো টাকা জমছে! আমরা তিন মাসের টাকা বকেয়া হতে দেই না।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহমদ মজুমদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আজ (সোমবার) সারাদিনই ঢাকায় মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এখন ফিরছি বিমানবন্দরে এসেছি। জেনারেল হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন সোমবার রাতে জানান, ‘হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। আমি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলছি।’ সুত্রঃ দৈনিক আজাদী আপনার মতামত দিন : SHARES অপরাধ ও অসংগতি বিষয়: