জিম্মি ঘাটাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

Jewel Jewel

Rana

প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২০

দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা পাঁচ সিন্ডিকেট সদস্যের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ৫০ শয্যার ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ আর জালিয়াতির মতো গর্হিত কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা হচ্ছেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুর রহমান খান, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ফরহাদ রহমান ও নিজ বেতনে প্রধান সহকারী পদে থাকা ফরহাদের স্ত্রী শামীমা নাসরিন, পিয়ন আ. হালিম ও ল্যাব টেকনিশিয়ান শাহালম। সূত্রে জানা গেছে, ফরহাদ রহমানের পদবি হচ্ছে জুনিয়র মেকানিক। এ পদটি ব্লক পোস্ট হওয়ায় কোনো পদোন্নতি কিংবা অন্য কোনো পদে যাওয়ার বিধান নেই। তৎকালীন বিএনপি আমলে প্রভাব খাটিয়ে মাইগ্রেশন করে তিনি জুনিয়র মেকানিক থেকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ পেয়েছেন। অপরদিকে তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনের মূল পদ হচ্ছে হিসাবরক্ষক। তিনি তার মূল পদ ছাড়াও পরিসংখ্যান সহকারী বা পরিসংখ্যানবিদ ও নিজ বেতনে প্রধান সহকারীর পদ আগলে রেখেছেন। অলিখিতভাবে তারা দু’জনে পাঁচটি পদ দখলে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, এদের বাড়ি হাসপাতালের কাছে ঘাটাইল সদরের পশ্চিম পাড়া বকুলতলা মহল্লায়। ফলে কোনো কিছুর তোয়াক্কা করছেন না। ১২-১৩ বছর ধরে তারা এখানে কর্মরত থাকায় হাসপাতালটি যেন পারিবারিক আবাসস্থল। স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে কাউকে তোয়াক্কা না করে হেন কোনো কাজ নেই তিনি করেন না। ফলে হাসপাতালের মূল কর্মকর্তা তাকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ডানহস্ত হিসেবেই ব্যবহার করছেন। নানা অভিযোগের ভিত্তিতে এর আগেও তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। কয়েক মাসের মধ্যেই আবার পোস্টিং নিয়ে চলে আসেন এখানে। এসেই আবার গড়ে তোলেন স্বামী-স্ত্রীর সিন্ডিকেট। এছাড়া সিন্ডিকেটের প্রধান সমন্বয়ক ফরহাদ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বিভিন্ন কর্মসূচির নামে বরাদ্দের অর্থ বিল-ভাউচারের মাধ্যমে লুটপাট, ট্রেনিংয়ের নামে ফিল্ড স্টাফদের ভাতা আত্মসাৎ, রোগীর জন্য খাবারের তালিকায় অধিক রোগী দেখিয়ে বিল করা, কোনো চিকিৎসক দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকলেও তাদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দেয়ার সুযোগ করে দেয়া। তাছাড়া চিকিৎসকদের কাছ থেকে তারিখবিহীন ছুটির আবেদন নিয়ে রাখা। এজন্য উপযুক্ত সেলামি পেয়ে থাকেন তিনি। জানতে চাইলে ফরহাদ রহমান বলেন, জুনিয়র মেকানিক থেকে আবেদনের ভিত্তিতে তিনি অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। উল্লেখ্য, জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উপলক্ষে ১৩ মে দেয়া বরাদ্দকৃত ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা করোনাভাইরাসের কারণে দুস্থদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি প্যাকেটে ৪৮০ টাকা করে ১০০ জনকে ৪৮ হাজার টাকার খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। অবশিষ্ট ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে এ সিন্ডিকেট। অপরদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বাজেট শাখা থেকে ২১ এপ্রিল এক স্মারকপত্রের মাধ্যমে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুকূলে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ টাকার বিপরীতে কোনো কিছুই করা হয়নি। জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের জন্য কত বরাদ্দ ছিল তা জানতে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে প্রতিবেদকের কাছে বরাদ্দের কপি থাকায় তিনি পাশ কাটিয়ে যেতে পারেননি। ফলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের বরাদ্দের মধ্যে ৮০-৮৫ হাজার টাকার ত্রাণ দেয়া হয়েছে। আর কিছু রাখা হয়েছে অডিটের জন্য। অডিটের সময় দিতে হয়। অপরদিকে ২১ এপ্রিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা থেকে বরাদ্দ দেয়া ৩ লাখ টাকা কোন খাতে ব্যয় হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব নার্স ও ডাক্তার ভর্তি কোভিড রোগীর সেবাশুশ্রূষা করেন তাদের জন্য এ টাকা খরচ হবে।

তথ্য সূত্রঃ যুগান্তর (১৫.০৬.২০২০)

আপনার মতামত দিন :