কিট দিয়ে করোনা পরীক্ষা করলে ‘ফলস নেগেটিভ’ রিপোর্ট ঘটাতে পারে ভয়াবহ সংক্রমণ!

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০

অ্যান্টিবডি কিটের মাধ্যমে সব সময় সঠিক ফল আসে না জানিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেছেন এগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই ‘ফলস নেগেটিভ’ (False negative) রিপোর্ট আসে।

তিনি আরও বলেন, এ প্রক্রিয়ার উপর ওপর নির্ভরশীল হলে ভুল রিপোর্টের কারণে কোনো ব্যক্তি নিজেকে করোনা নেগেটিভ মনে করে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াবেন আর তার মাধ্যমে দ্রুত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে যাবে। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

পিসিআর’র (PCR) পরিবর্তে কিটের মাধ্যমে রেপিড টেস্ট করে করোনা ডায়াগনোসিস করা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেডিভয়েসকে এসব কথা জানান তিনি।

এদিকে স্প্যানিস পত্রিকা এল পাইস স্থানীয় মাইক্রোবায়োলজিস্টদের বরাত দিয়ে জানায় চীনের বায়োইজি কোম্পানির রেপিড টেস্ট কিটের সেনসিটিভিটি মাত্র ৩০ ভাগ।  কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলছেন এর সেনসিটিভিটি ৬০ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) জানায়, কিটের মাধ্যমে রেপিড টেস্ট করলে ৫০ থেকে ৭০ ভাগ করোনা রোগীর ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট আসতে পারে, যা পিসিআর পরীক্ষায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এছাড়াও শতকরা ১০ ভাগ ক্ষেত্রে ফলাফল ‘ফলস পজেটিভ’ আসতে পারে। তাই চীনের উহানে করোনা নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়েছে RT PCR টেকনোলজি যা বাংলাদেশেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

আইইডিসিআর’এর এ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত কয়েক বছর আগেও যখন কারও ডেঙ্গু হতো আমরা তাদের বলতাম, ৫ দিন পরে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করবেন, কারণ রেপিড টেস্টগুলো করা হয় অ্যান্টিবডির সাথে রিএকশনের মাধ্যমে। এন্টিবডি তৈরি শুরু হয় ৪/৫ দিন পর। বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে যেসব অ্যান্টিবডি কিট আনতে চায় বা বানাতে চায় সেগুলো এন্টিবডি ডিটেকশনের মাধ্যমে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে পজিটিভ ফল পেতে ন্যূনতম পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া এগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই ‘ফলস নেগেটিভ’ (False negative) রিপোর্ট আসে। মানে রোগী আসলে করোনা আক্রান্ত অথচ রিপোর্টে দেখায় রোগমুক্ত। এখন আমরা যদি একজন লোকের পরীক্ষা করে তাকে বলে দিই, আপনার করোনা ভাইরাস নাই। কিন্তু সে আসলে ‘ফলস নেগেটিভ’ তাহলে সে নিশ্চিন্তে কমিউনিটিতে ঘুরে বেড়াবে আর তার মাধ্যমে করোনা ছড়াতে থাকবে। সেক্ষেত্রে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনটা খুব দ্রুত হয়ে যাবে। সেজন্য আমরা খুব সাবধানে এগুচ্ছি।’

‘এ অবস্থায় আমরা ভাবছি, কিট আদৌ ব্যবহার করবো কিনা? ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যদি আমাদের অনুমতি দেয় তাহলে আমরা হয়তো ব্যবহার করবো। রেপিড টেস্ট হচ্ছে মূলত স্ক্রিনিং টেস্ট। যখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন খুব বেশি পর্যায়ে পৌছে যায়, তখন কিট ব্যবহার করা হয় অ্যাটাকের ধরনটা কেমন ছিল তা দেখার জন্য করা। সেটা আরও দেড় মাস পরে করলে ভালো হবে’, যোগ করেন আইইডিসিআর’র প্রধান এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৪৫০ কল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। আজ শনিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর মহাখালী থেকে অনলাইনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি আরও জানান, এসব ফোনের প্রত্যেকটিই করোনা সক্রান্ত। তবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪২ জনের। এ পর্যন্ত আইইডিসিআর ১ হাজার ৬৮টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে।

তবে প্রতিদিন প্রায় দেড়শর কাছাকাছি নমুনা সংগ্রহ করতে পারছেন বলে গতকাল শুক্রবার (২৭ মার্চ) মেডিভয়েসকে জানিয়েছিলেন সংস্থাটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। তিনি আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে আমরা হয় তো দৈনিক তিনশর মতো স্যাম্পল সংগ্রহ করতে পারবো।’

অন্যদিকে সাধারণের মাঝে অভিযোগ উঠছে অনেক করোনা রোগীই পরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে জানা যাচ্ছে না করোনা আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যা।

আপনার মতামত দিন :