ম্যাটস্ ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডাক্তারি পড়তে চান, তাহলে জেনে নিন

প্রকাশিত: ৪:০২ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০২০

মেডিনিউজ রিপোর্ট :

ডিপ্লোমা ডাক্তারি কোর্স জনগণের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চিকিৎসা সেবার একটি বড় অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হয় এই ডিপ্লোমা ডাক্তারি কোর্স কে। দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৭৩-৭৮ ইং) অনুযায়ী জনগণের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালে সরকার ব্রিটিশ- পাকিস্তান আমলের মেডিকেল কাউন্সিল নিবন্ধিত লাইসেন্সশিয়েট অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি এলএমএফ, মেম্বার অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি এমএমএফ সমমান ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের কোর্স কারিকুলাম অনুসারে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা ডিগ্রি কোর্স টি আন্তর্জাতিক ভাবে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসে। ডিএমএফ কোর্স টি বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদের অধীন ৪ চার বছর মেয়াদি একটি ডিপ্লোমা ডিগ্রি কোর্স।

মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল বা ম্যাটস্ কী ? :

মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস্) হলো এক ধরনের বিশেষায়িত মেডিকেল ডিপ্লোমা স্কুল। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ধরনের মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করে। অনুমোদনের পর সব ম্যাটস্ বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অনুষদের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পাঠদান করা হয় এবং অনুষদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের সংখ্যা আড়াইশর কাছাকাছি। এদের মধ্যে সরকারি ৯ টি ম্যাটস্ বাকী সব গুলো বেসরকারি। ম্যাটস্ ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য আবেদন করার নূন্যতম যোগ্যতা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জীববিজ্ঞানসহ এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ২.৫। বেসরকারি ম্যাটস্ সমূহে ডিপ্লোমা পড়তে চাইলেও সরকারি জাতীয় ভাবে গৃহীত ম্যাটস্ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পরীক্ষার্থীকে নূন্যতম পাশ মার্ক পেতে হবে। বেসরকারি ম্যাটস্ সমূহে ভর্তির পূর্বে অবশ্যই জেনে নিতে হবে উক্ত ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত কিনা। বিএম&ডিসি স্বীকৃতিবিহীন বেসরকারি ম্যাটস্ থেকে কোনো অবস্থাতেই ডিপ্লোমা কোর্স করা যাবে না, এতেকরে ভবিষ্যতে মহাবিপদের আশঙ্কা থেকে যায়। বিএম&ডিসির নিবন্ধন সনদ ছাড়া যে কোন কর্মস্থলে চিকিৎসা সেবা দেয়া, প্রাইভেট চেম্বার প্র্যাকটিস করা, রোগী দেখা, এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা দেয়া নিষিদ্ধ। আদেশ অমান্যকারীর ৩ বছরের জেল ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানার উভয় দণ্ড আইনে বলবৎ রয়েছে। বেসরকারি প্রায় ২০৯ টি ম্যাটস্ সমূহের মধ্যে মাত্র ৬৪ টি’র বিএম&ডিসি স্বীকৃতি রয়েছে।

ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ) কী ? :

ম্যাটস্ প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত কোর্সের নাম ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (ডিএমএফ)। এই কোর্সের মেয়াদ ৪ বছর। একজন ম্যাটস্ ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থী চার বছর ধরে স্নাতক এমবিবিএস কোর্সের প্রায় সব বিষয় যেমন- মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী এন্ড অবসটেট্রিকস, এনাটমী, ফিজিওলজি, প্যাথলজী এন্ড মাইক্রোবায়োলজী, বায়োকেমিস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, মেডিকেল জুরিসপ্রুডেন্স, কমিউনিটি হেলথ্, হেলথ্ ম্যানেজমেন্ট, মেডিকেল ইথিক্স, বেসিক ইংলিশ ও কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ে ৩ বছরের প্রাতিষ্ঠানিক ও ১ বছরের ইন্টার্নীশিপ সহ মোট ৪ চার বছর পড়াশোনা করে থাকেন।

চিকিৎসা পেশায় তত্ত্বীয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে হাতে-কলমে শিক্ষারও গুরুত্ব অনেক বেশি। স্নাতক এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের অংশ হিসেবে যেমন বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করতে হয়, তেমনি ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জনেও ইন্টার্নশিপ করতে হয়। ম্যাটসের চতুর্থ বর্ষে বিভিন্ন হাসপাতালে হাতে-কলমে রোগী পর্যবেক্ষণ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা প্রদানসহ রোগীর অন্যান্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর সরাসরি শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন জেলা হাসপাতাল ও থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ওই ইন্টার্নি করার সুযোগ রয়েছে। সরকার অনুমোদিত ও বিএম&ডিসি স্বীকৃত যে কোনো ম্যাটস্ থেকে শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ করার পর উত্তীর্ণদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক (ডিএমএফ) সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) কর্তৃক পেশাগত রেজিস্ট্রেশন/লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে সরকারি-বেসরকারি চাকরি বা প্রাইভেট মেডিকেল প্র্যাকটিস করতে পারেন।

কর্মসংস্থানের সুযোগ :

ম্যাটস্ কোর্সসম্পন্নকারীকে ডিএমএফ সার্টিফিকেট প্রদান করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এই মিড লেভেলের চিকিৎসক শ্রেণি তৈরি হয়। এই ডিপ্লোমা ডিগ্রিপ্রাপ্তদের বলা হয়ে থাকে ডিপ্লোমা ডাক্তার। সরকারি চাকরিতে ডিএমএফ ধারীদের সাব-এ্যাসিসট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে নানাবিধ পদে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৯ সাল থেকে গ্রাম, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা চিকিৎসা তথা সকল ধরণের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন। ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিপ্রাপ্তরা বহুভাবে, বহুপদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, উপ-হাসপাতাল, প্রেষণে জেলা হাসপাতাল, বিভিন্ন ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, স্কুল হেলথ ক্লিনিক, বিভিন্ন আধা সরকারি বা কর্পোরেশন যেমন; তিতাস গ্যাস, বিআইডব্লিউটিসি, বিজি প্রেস, বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য, কেয়ার, গণসাহায্য সংস্থা, আইসিডিডিআরবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেভ দ্য চিলড্রেনেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে এসব ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীর। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি নানা চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানে তাদের কাজের সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনাও রয়েছে এ সেক্টরে। আবার চাকরি না করলেও একজন ডিএমএফ প্রাইভেট ডিপ্লোমা মেডিকেল প্র্যাকটিশনার হিসেবে যে কোনো স্থানে মেডিকেল চেম্বার প্র্যাকটিস করে উপার্জন করতে পারেন। অর্থ্যাত এই ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডাক্তারি কোর্স করলে চাকরির সঙ্গে সঙ্গে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগও রয়েছে।

#বি. দ্র. ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রির সনদ দিয়ে এদেশে ৩ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সহ ১৮ টি গভঃ ও ইউজিসি স্বীকৃত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষায়, বেসিক মেডিকেল সায়েন্সেস, এ্যালাইড হেলথ্ সায়েন্সেস, মেডিকেল লাইফ সায়েন্সেস ও পাবলিক হেলথ্ সায়েন্স রিলেটেড বিষয় সমূহে স্নাতক ডিগ্রি/ অনার্স করার সুযোগ রয়েছে।