এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র ডি.এম.এফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকতার সনদ নিয়ে বাণিজ্যে মেতেছে! M. Mijanur M. Mijanur Rahman প্রকাশিত: ৬:০৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০ ইদানীং বাংলাদেশ টেকনোলজী ফাউন্ডেশন-বিটিএফ (ভুয়া প্রতিষ্ঠান) সহ বিভিন্ন ভুয়া চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জন্য নির্ধারিত ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ‘ডিএমএফ’ সনদ দিচ্ছে! এসকল ভুয়া চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার পাঁচেক টাকা খরচ করলেই পাওয়া সম্ভব ভুয়া ডিএমএফ সনদ! এবংকি কোনো দিন মেডিকেলের বই না পড়ে প্র্যাকটিকাল ক্লাশ না করেই মিলে যাচ্ছে ভুয়া ডিএমএফ সনদ! প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতারণার ফাঁদ পেতে অঢেল বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যাচ্ছে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ অধিভূক্ত ও বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস্) প্রতিষ্ঠান কেবল ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা ডিগ্রিটি দেয়ার অধিকার রাখে। বিএমডিসি নিবন্ধিত ‘ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারীরা ডিপ্লোমা চিকিৎসক হিসেবে চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া প্রজাতন্ত্রের সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। সরকার আইন তৈরি করেছে, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির দায়িত্ব দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় চিকিৎসা ও দন্ত চিকিৎসা বিদ্যা সম্পর্কিত কোর্স পরিচালনা, চিকিৎসক ও দন্ত চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল ‘বিএম&ডিসি’ তৈরি করেছে, বিএমডিসি আইন’ ২০১০ তৈরি করেছে। অভিযোগ রয়েছে সরকার এত কিছু করার পরও জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত হচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ, বিএমডিসি’র পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাবে দেশের আনাচে কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে নামসর্বস্ব বিভিন্ন ভুয়া চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হচ্ছে বিএমডিসি এ্যাক্ট’ ২০১০ এর পঞ্চম তফসিল নিবন্ধিত ডিপ্লোমা ডিগ্রি ‘ডিএমএফ’। অথচ বিএমডিসি এ্যাক্টের ধারা ২৫ উপধারা (১) ও (২) এ পরিষ্কার বলা আছে সরকার ও বিএমডিসি কাউন্সিলের অনুমোদন ব্যতীত বিএমডিসি’র প্রথম তফসিল থেকে পঞ্চম তফসিল অধিভূক্ত কোনো চিকিৎসা ও দন্ত চিকিৎসা বিদ্যার ডিগ্রি বা ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করা একটি অপরাধ। আইন অমান্যকারী প্রতিষ্ঠানের প্রথমে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা, তারপরও অপরাধ অব্যাহত রাখার জন্য প্রতিদিনের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, সেই সাথে ভুয়া সনদ অর্জন, প্রদান ও প্রতারণার জন্য সনদ অর্জনকারী ও সনদ প্রদানকারী মালিকসহ মালিক কর্তৃপক্ষের জেল তো আছেই। বিএমডিসি আইন আছে কিন্তু আইনের কার্যকারিতা নেই। আইনের কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয়তার সুবাদে এক শ্রেণীর বিশেষ কুচক্রী মহল প্রতারণার ফাঁদ পেতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে ভুয়া ডিএমএফ সনদ ধরিয়ে দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে ভুয়া ডিএমএফ সনদ নিয়ে শুধু যে শিক্ষার্থীরাই প্রতারিত হচ্ছে বিষয় টি তা নয়। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সনদধারী ভুয়া ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা যখন রোগীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগীর স্বাস্থ্যহানী ঘটাচ্ছে, ঘটাবে তার দায়ভার কে নিবে…? এদিকে ভুয়া চিকিৎসকদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে প্রায় সাত বছর পূর্বে বিএম&ডিসি কর্তৃপক্ষ গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসক ও দন্ত চিকিৎসক সনাক্তকরণের জন্য একটি নাম, ঠিকানা ও ছবি সম্বলিত ডিজিটাল সনাক্তকরণ ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। যাতে সাধারণ জনগণ চিকিৎসকদের ও দন্ত চিকিৎসকদের বিএমডিসি কর্তৃক নিবন্ধিত রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ওয়েব সার্চ করে তাদের (চিকিৎসকদের ও দন্ত চিকিৎসকদের) সত্যতা যাচাই করতে পারেন। তবে দুঃখের বিষয় এই যে, উক্ত ডিজিটাল সনাক্তকরণ ওয়েবসাইটে বিএমডিসি নিবন্ধিত ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নামের তালিকা নেই! যে কারণে কেউ একজন চাইলেও ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের নাম, ঠিকানা ও ছবি সম্বলিত ডিজিটাল সনাক্তকরণ করতে পারবেন না। এতে করে সারাদেশ জুড়ে ভুয়া ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের অপতৎপরতা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন’ এর পক্ষ থেকে বিএমডিসি কর্তৃপক্ষকে ডিজিটাল সনাক্তকরণ ওয়েবসাইট তালিকায় ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্তি করার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়া সত্যেও কোনো এক অদৃশ্য অপশক্তির প্রভাবে তা বাস্তবায়ন এখনো সম্ভবপর হয় নি। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন), বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ ও বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের উচিত ভুয়া ডিএমএফ সনদের বিষয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে জনসতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি দেয়া। যাতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসব ভুয়া ডিএমএফ সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার ফাঁদে জড়িয়ে না পড়ে। উপরোক্ত বিষয়ে যথাযত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বিশেষ অনুরোধ করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। লেখক : ডা. এম. মিজানুর রহমান (জনস্বাস্থ্যবিদ) সাবেক তথ্য, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন- বিডিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ। সাংগঠনিক সম্পাদক, পাবলিক হেলথ্ স্পেশ্যালিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- পিএইচএসএবি কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ। আইন শাস্ত্রের শিক্ষার্থী ও সুলেখক। আপনার মতামত দিন : SHARES অপরাধ ও অসংগতি বিষয়: