দেশীয় প্রযুক্তিতে কম খরচে ভেন্টিলেটর তৈরি করলো বাংলাদেশের তরুণেরা

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ১২:৪৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০

মহামারি করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের পর অকেজো করে দেয় ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্রকে। গোটা বিশ্বের চিকিৎসকেদের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির ফুসফুসকে সচল রাখা ।

করোনা চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর। কিন্তু গোটা পৃথিবীতেই  এ যন্ত্রের চরম সংকট চলছে। চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে উন্নত থেকে অউন্নত সব দেশকেই। এমন সংকটের মধ্যেই দেশের করোনা চিকিৎসাকে আরো সহজ করতে চিকিৎসক কাজী সীফায়েত এনাম স্বাক্ষর দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করলে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র।

খুব ছোট থেকেই যন্ত্রের প্রতি ঝোঁক চিকিৎসক স্বাক্ষরের। চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়ালেখা করেও যন্ত্রের প্রতি ঝোঁক একটুও কমেনি । অবশেষে সবার জন্য সেবা নিশ্চিতে এই কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর তৈরি করেন তিনি।  চিকিৎসকরাও বেশ আশাবাদি তাঁর তৈরিকৃত ভেন্টিলেটর নিয়ে। যা কিনা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে ভূমিকা রাখবে।

এই ভেন্টিলেটর তৈরিতে সহযোগী ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার বায়েজীদ শুভ। তারা যন্ত্রটির নাম দিয়েছেন ‘স্পন্দন’।

তৈরীকৃত ভেন্টিলেটর দিয়ে  tidal volume, IE ratio, peak flow, apnea, pressure, respiratory rate, রোগীর  breath sensor সবই নিখুঁত ভাবে করা যাবে বলে তাদের দাবি।

ভেন্টিলেটর তৈরি নিয়ে চিকিৎসক কাজী সীফায়েত এনাম স্বাক্ষর মেডিভয়েসকে বলেন, ভেন্টিলেটর সেবা ব্যয়বহুল হওয়ায় গরীব ও দুস্থ রোগীরা সেবা নিতে পারছে না। যেটি আমাকে খুব কষ্ট দেয়। এমন চিন্তা থেকেই এসব মানুষদের জন্য খুব কম খরচে সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের এই চেষ্টা। এরই মধ্যে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো মহামারি করোনাভাইরাস। করোনা আক্রান্ত রোগীদের একটা বড় অংশের ভেন্টিলেটর সার্পোট লাগে। যা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও তাদের রোগীদের ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দিতে পারছে না। বলতে পারেন বিশ্বজুড়ে ভেন্টিলেটর সংকট চলছে। ইতিমধ্যে আমাদের দেশেও করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এর সংখ্যা আরো বেড়ে গেলে ভেন্টিলেটর সেবা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়বে।

কাজী স্বাক্ষর আরো বলেন, ভেন্টিলেটরের মৌলিক ফিচারগুলো আমরা যুক্ত করেছি। কম খরচে যাতে রোগীদের সেবা দেওয়া যায়, আমরা সেরকমভাবে তৈরি করেছি। এখন যন্ত্রটিকে হাসপাতলে সেবার জন্য উপযুক্ত করাই আমাদের কাজ। তবে এজন্য কিছুটা সময় লাগবে। আপাতত আমাদের ডিজাইন তৈরি করেছি। ডিভাইটিকে সেবা উপযোগী করতে আরো কিছু কাজ করতে হবে। সেজন্য আমাদের আর্থিক সার্পোট খুব জরুরি। আমার প্রত্যাশা যদি সরকারের কাছ থেকে যদি আর্থিক সহযোগিতা পাই তবে কাজটা আরো সহজ হবে।

ভবিষ্যতে দেশের সব ইউনিয়ন পর্যায়ে রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটর সেবা নিশ্চিত হবে। যাতে করে যে কোন জরুরি রোগীকে হাসপাতালে আনা পর্যন্ত ভেন্টিলেটর সেবা দেওয়া যায়। এর সাথে রোগীরা যাতে কম খরচে ভেন্টিলেটর সেবা পায়, এমনই স্বপ্ন দেখে এই তরুণ চিকিৎসক।

করোনা সংকট নিয়ে তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে সবাইকে অনেক সচেতন থাকতে হবে। উন্নত অনেক দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। আমরা সবাই সচেতন থাকলে করোনা প্রতিরোধ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হভে। তাছাড়া আক্রান্তদের জন্য আমার দেশে আইসিইউগুলোকে প্রস্তুত রাখতে হবে। তবে করেনাভাইরাস ছড়াতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, উদ্ভাবক ও চিকিৎসক কাজী স্বাক্ষরের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার সদর উপজেলায়। পড়ালেখা করেছেন কুমিল্লা ইস্পাহানি স্কুলে। তারপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ। পাবলিক হেল্থে মাস্টার্স । বর্তমানে এফসিপিএস কার্ডিওলজিতে অধ্যয়ন করছেন। ইঞ্জিনিয়ার বায়েজীদ শুভ তাঁর কাজিন।

ডিভাইসটি বানাতে তাদেরকে প্রত্যক্ষ ভাবে সহোযোগিতা করেছেন ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী  ছাত্র এ এফ কিংশুক এবং আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র তাজবিরুল হাসান কাব্য ।

এছাড়া পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করেছেন , অ্যাপোলা হাসপাতালের রেজিস্টার চিকিৎসক আসিফ উর রহমান,  ঢাকা মেডিকেল কলেজ রেজিস্টার ডা: ফরহাদ উদ্দীন হাসান চৌধুরী মারুফ, এম তোফাজ্জল আলি, কাজী মনসুর উল হক, ফাহিম আহমেদ, আকিফ মুন্তাসির ও সোহেল রানা ।

আপনার মতামত দিন :