দিরাইয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বজনদের হাতে চিকিৎসক লাঞ্ছিত Emon Emon Chowdhury প্রকাশিত: ২:৪০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২০ দিরাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সি বিভাগের এক চিকিৎসককে উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বজনরা লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চিকিৎসক স্বপন সরকার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাঞ্ছিত হবার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করে পোস্ট করলে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এনিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বজনরা। ডা. স্বপন সরকার বলেন, রোববার সকালে আমি ইমার্জেন্সিতে ডিউটিরত ছিলাম। এ সময় সেখানে রাজীব নামে এক যুবক এসে নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরীর ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যান সাহেব অসুস্থ জানিয়ে বাসায় যেতে বলেন। আমি ইমার্জেন্সি ফেলে বাসায় যেতে অপারগতা প্রকাশ করে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। তিনি বলেন, এ সময় ওই যুবক (রাজীব) উত্তেজিত হয়ে বেরিয়ে যান, কিছুক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে, এক ভাইসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসে আমাকে গালাগালি শুরু করেন। আমার চেয়ার লাথি মেরে ফেলে দেয়। চেয়ারম্যানের ভাই আমার দিকে মসজিদের দানবাক্স নিয়ে মারতে তেড়ে আসেন। হইচইয়ের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান ছুটে এসে একজন ডাক্তারকে উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বজনদের সঙ্গে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। ডা. স্বপন আরও বলেন, আমি ইমার্জেন্সি ছেড়ে যেতে পারতাম, কিন্তু তখন যদি একজন শ্বাসকষ্টের রোগী আসতেন, তখন ইমার্জেন্সিতে কে রোগী দেখত? এই মহামারীর সময়ে আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। এর মাঝে এই রকম হুমকি, গালাগালি শুনলে আর কাজ করতে ইচ্ছে করে না। তখন মনে হয় এদেশে সবচেয়ে বড় পাপ ক্ষমতাশালী না হওয়া, দ্বিতীয় পাপ ডাক্তার হওয়া। তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই আবুল কাশেম চৌধুরী জানান, চেয়ারম্যান সাহেব সকালে পাতলা পায়খানা ও জ্বরে অসুস্থবোধ করলে রাজীব হাসপাতালে গিয়ে ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানিয়ে বাসায় আসতে বলেন। কিন্তু উনি কোনো রেসপন্সই করেননি। লাঞ্ছিতের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, স্বজন অসুস্থ হবার পর চিকিৎসক চিকিৎসা না দিলে যে কেউ উত্তেজিত হবেন, এটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রেও ছেলেরা সামান্য উত্তেজিত হয়েছিল, আমি ধমক দিয়ে বের করে দিছি। উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাগ্নে রাজীব বলেন, ভোর ৬টায় মামা (উপজেলা চেয়ারম্যান) অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখি ইমার্জেন্সি ছাড়া সবকিছু বন্ধ। আমি উনাকে (স্বপন সরকার) বাসায় আসতে বলি, তিনি অপারগতা জানালে আমি উনাকে চেয়ারম্যান সাহেবের কথা জানিয়ে বলি, এখন সব সবাই ঘুমিয়ে, ইমার্জেন্সিতেও কোনো রোগী নেই, আপনি আমার মোটরসাইকেলে চলুন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে আবার হাসপাতালে পৌঁছে দিব। তিনি বলেন, তখন ওই চিকিৎসক তাচ্ছিল্য করে যে কেউ হোক, আমি যেতে পারবো না বলে জানান। এসময় উনার সঙ্গে আমার সামান্য বাকবিতণ্ডা হলে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আমি এখানে বেশি দূর থেকে আসিনি, আমার বাড়িও শাল্লা। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, ইমার্জেন্সি ডাক্তারের সঙ্গে চেয়ারম্যান সাহেবের আত্মীয়রা খারাপ আচরণ করেছে। পরে বাসায় গিয়ে ডাক্তার চেয়ারম্যান সাহেবকে দেখে আসছেন। তবে বিষয়টি মিটমাট হয়ে গেছে। এদিকে ডাক্তার লাঞ্ছিতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুনামগঞ্জ বিএমএ। আপনার মতামত দিন : SHARES অপরাধ ও অসংগতি বিষয়: