বাবা-মার কাছে সন্তান রেখে করোনাযুদ্ধে চিকিৎসক দম্পতি

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৫:২৯ পূর্বাহ্ণ, মে ১৪, ২০২০

দেশে ভয়াবহ আকারে বেড়ে চলেছে মহামারী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। স্বাস্থ্যখাতের এমন সংকটময় মুহূর্তে থেমে নেই চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের লড়াই। আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে প্রতিনিয়ত কর্মস্থলে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন করোনাযুদ্ধের এসব সম্মুখযোদ্ধা। হাসিমুখে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে গড়ে তুলছেন বীরোচিত ইতিহাস।

মানবসেবায় এমনই দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন চাঁদপুরের এক চিকিৎসক দম্পতি। একমাত্র সন্তানকে বাবা-মার কাছে রেখে দিনরাত করোনা আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

তারা হলেন: চাঁদপুরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও করোনা বিষয়ক ফোকাল পার্সন ডা. এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল এবং চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজেদা বেগম পলিন।

কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধে নিরলসভাবে সাধারণ মানুষকে সেবা দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ডা. সাজেদা বেগম পলিনকে এরই মধ্যে ‘করোনা জেনারে’ উপাধিতে ভূষিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর চাঁদপুরের আড়াইশ’ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেলকে করোনাভাইরাস বিষয়ক ‘ফোকাল পার্সন’ ও মেডিকেল টিমের প্রধান হিসেবে মনোনীত করেছে।

জানা যায়,  দেশে করোনা সংক্রমের শুরুতেই আইইডিসিআর’র করোনা বিষয়ক প্রশিক্ষণে জেলা থেকে শুধুমাত্র এই দু’জন চিকিৎসক অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। এরপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আরও কয়েক দফা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এই চিকিৎসক দম্পতি। এই চিকিৎসক দম্পতির আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

হাসপাতালের নিয়মিত ডিউটির পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে আসা লোকদের করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করছেন তারা। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা লোকদের নমুনা সংগ্রহ করা ও তাদের প্রাথমিক চিকিৎসাপত্র দেয়ার পাশাপাশি শনাক্তকৃত রোগীদের হাসপাতাল অথবা বাসায় (আইসোলেশন/কোয়ারেন্টিন) চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান ও চিকিৎসাপত্র দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রোগীদের বাড়তি নজর রাখতে হয় তাদের।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা করোনা ফোকাল পার্সন ডা. এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেল বলেন, ‘প্রথমত আমি ডাক্তার। সেবাই আমার কাজ। তাছাড়া করোনা বৈশ্বিক সংকট। এমন সংকটে প্রতিরোধে আমি আমার সাধ্যের চাইতেও বেশি করার চেষ্টা করছি। আসলে চাকরির মানসিকতা নিয়ে সেবা করা সম্ভব নয়, মানবিকতার প্রশ্নেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কোনো ক্লান্তিতেও সেবা দেওয়া থেকে আমরা পিছু হটতে পারি না।’

একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ডা. রুবেল বলেন, টানা ডিউটি করার কারণে বাসায় যাওয়া হয় না। হাসপাতালে সেবা দেওয়ার সময় একমাত্র সন্তানের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। বাবা-মায়ের কাছে রয়েছে ও। পরিবারকে একেবারেই সময় দেওয়া যাচ্ছে না। মানবসেবার ব্রত নিয়েই তো ডাক্তার হওয়া…।

চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজেদা বেগম পলিন  বলেন, ‘আমার কাজ রোগীদের সেবা দেওয়া, পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দেওয়া। রোগীদের হাসপাতালে ফেলে রেখে আমি নিজে ভালো থাকতে পারি না। সেবাই আমাদের ব্রত। সেবা করতে পারলেই তৃপ্ত হই। দেশের জনগণের প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা, তা পূরণ করতে পারলেই নিজেকে ধন্য মনে করবো। ছেলেকে খুব একটা সময় দিতে পারি না। করোনা আক্রান্তের ভয়ে বাসায়ও যাই না।’

ডা. পলিন আরো বলেন, ‘জেলার সাধারণ মানুষদের সচেতন করতে প্রতিদিনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কোভিড-১৯’ নামের এক ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করছি। এর মাধ্যমে করোনা বিষয়ক আপডেট তথ্য, পরামর্শ, চিকিৎসা ও সতর্কতাগুলো তুলে ধরছি।’

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এই চিকিৎসক দম্পতি সার্বক্ষণিক করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছেন। একমাত্র সন্তানকেও দেখার সুযোগ পান না তারা। দুইজনেই খুব আন্তারিকতার সাথে করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের এমন মানবিকতা নিশ্চয়ই অনেক চিকিৎসকের অনুপ্রেরণার কারণ হবে।

তিনি আরো বলেন, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করা, তা ব্যবস্থাপনা করা, প্রয়োজনে লকডাউন করাসহ সার্বিক বিষয়ে ডা. পলিন দেখাশোনা করছেন। অপরদিকে তার স্বামী ডা. সুজাউদ্দৌলা ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালেনর আরএমও এবং কোভিড ১৯ এর ফোকাল পারসন। সদর হাসপতালে যতজন রোগী ভর্তি হয় তাদের নমুনা সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে সকল ধরণের কার্যক্রম তিনি পরিচালনা করেন। এছাড়াও হাসপতালের ব্যবস্থাপনা, রোস্টার ঠিক করা, কোন চিকিৎসক কখন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন তার সবকিছুই তিনি ঠিক করেন।

আপনার মতামত দিন :