দেশের গবেষণার মান, অতিরঞ্জন নিয়ে কে দায়ী- মিডিয়া নাকি বিজ্ঞানীগণ?

প্রকাশিত: ২:১০ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২০

ড.মুহাম্মদ সরোয়ার হোসাইন,নির্বাহী পরিচালক, বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন(বিআরএফ)

ভেক্সিন কীভাবে তৈরী করা হয় তা যদি কারোর মোটামুটি জানা থাকে তবে করোনার সিকুয়েন্স দিয়ে ভেক্সিন বানানোর গালগল্প করতে লজ্জিত হতেন। বাস্তবতা হচ্ছে ভেক্সিন তৈরী করতে হোল জেনোম সিকুয়েন্স জানার দরকার নেই। বিশ্বের সবচেয়ে তিনটি পরিচিত ভেক্সিন তৈরি করা হয়েছে গুটিবসন্ত, পলিও এবং টিবি’র বিরুদ্ধে যখন জেনোম সিকুয়েন্স করার টেকনোলজি ছিল না!
২০০০ সালের দিকে হিউম্যান জেনোম সিকুয়েন্স হওয়ার বিশ্বব্যাপী তোলপাড় হয়। তখন ফলাও করে বলা হতো মেডিসিন ফিল্ডে অনেক বড় পরিবর্তন হবে। গত ২০ বছরেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। জেনোম সিকুয়েন্স করা মূলত নেশার মত। লক্ষ লক্ষ প্রানী-গাছ, জীবানুর হোল জেনোম সিকুয়েন্স হয়েছে। এ বিষয়ে পরে আরো বিস্তারিত লেখার আশা রাখি।

ভেক্সিন নিয়ে অনেক অতিরঞ্জন হয় সারা বিশ্বে কেননা এটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলো অনেক ইনভেস্ট করে। জেনোম সিকুয়েন্স জানার পর এখন পর্যন্ত তেমন কার্যকরি ভেক্সিন বাজারে আসেনি। এত গালগপ্প করা হয় মূলত গুটিবসন্ত এবং পলিও ভেক্সিনের সফলতা দেখিয়ে!  এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও সত্য। সাব-ইউনিট ভেক্সিন, হেনতেন ভেক্সিন তৈরীর সম্ভাবনা নিয়ে অনেক পেপার পাবলিশড হয়েছে। কিন্তু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে গিয়ে ভেক্সিন ফেল করে।

প্রসংগত, কলেরার ভেক্সিন নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় উদ্যোগের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ইন্ডিয়াতে ফেল করেছে। এখন বাংলাদেশে বড় পপুলেশনে ট্রায়াল চলছে যাতে স্ট্যাটিস্টিক্যালি প্রমাণ করা যায়! তাহলে ভেক্সিন কোম্পানী এপ্রোভাল পাবে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ইনকাম হবে। কলেরার ভেক্সিনের তেমন প্রয়োজন নেই। কলেরার ওরাল স্যালাইন এবং বিশ্বব্যাপী হাইজিন সচেতনতার কারনে পানি বাহিত রোগ কমে গেছে। উন্নত দেশে এসমস্ত খুব কম হয়। ভেক্সিন ট্রায়াল করার জন্য অনেক সায়েন্টিস্ট রিসার্চ ফান্ড পান। এজন্য তারা ভেক্সিনকে প্রমোট করে থাকেন পলিও/গুটিবসন্তের সাকসেস দেখিয়ে।

শ্বাসতন্ত্রে আক্রান্ত করে এমন কোন ভাইরাস ( করোনা, সার্স, মারস) নিয়ে ভেক্সিন সফল হয়নি। এইচআইভি নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ইনভেস্ট করে সফলতা মুখে দেখা যায়নি। স্বর্দিজ্বরের ভেক্সিন সফল হয়নি। আমেরিকায় মূলত বয়স্ক মানুষরা প্রতিবছর এই ভেক্সিন নিয়ে থাকেন। তারপরে স্বর্দিজ্বরে সেখানে প্রায় ৬০,০০০ লোক প্রতি বছর মারা যায়।

আমরা ধরেই নিয়েছি করোনার ভেক্সিন সফল হবে এবং সে অনুযায়ী সব পরিকল্পনা হচ্ছে। সেই আশায় প্রয়োজনে দুবছর বাসায় লুকিয়ে থাকার জন্য প্রচারণা হচ্ছে মিডিয়াতে/ফেসবুকে। করোনা ভেক্সিন যে সফল তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারবে না, কেননা এর সহোদর ভাই সার্সের বিরুদ্ধে ১৭ বছর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বে সম্ভবত ৫০-৬০ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করা হয়েছে করোনার ভেক্সিন বানাতে। তাই কয়েকমাসের জন্য করোনাকে প্রতিরোধ করা যায় (ফ্লু টাইপের) এমন ভেক্সিন বাজারে আসলেও সবাই হুমরি খেয়ে পড়বে। এটা যতটুকু না করোনা প্রতিরোধ করবে তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে মানসিকভাবে আস্থা অর্জন করা।

বিশ্বে বড় বড় প্রতিষ্ঠান অনেক বছর ধরে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও তেমন সফলতার মুখ দেখেনি। কিন্তু বাংলাদেশী সায়েন্টিস্টরা করোনার কয়েকটি সিকুয়েন্স করে বাংলাদেশের ভেক্সিন তৈরি নিয়ে মিডিয়াতে অতিরঞ্জন করে সাধারন মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন।

 

আপনার মতামত দিন :