ব্লক এন্ডিং পরীক্ষা বিকল্প উপায়ে নেওয়ার দাবি চিকিৎসকদের

Emon Emon

Chowdhury

প্রকাশিত: ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ, মে ১৯, ২০২০

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীনে এমডি কোর্সের ব্লক সমাপনী পরীক্ষা আগামী ১০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় পাঠক্রম সমন্বয় কমিটির ৭১তম সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয় বলে গত ৪ মে এক অফিস আদেশে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে আরও বলা হয়েছে, বিএসএমএমইউ এবং এর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ফেজ-এ রেসিডেন্টদের (মার্চ-মে ২০২০২ সেশন) ব্লক সমাপনী পরীক্ষা ১০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

এতে আরও বলা হয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ব্লক সমাপনী পরীক্ষাটি শুধু লিখিত ও এসসিএ’র (ক্লিনিক্যাল ছাড়া) উপর হবে এবং রেসিডেন্টদের অবশ্যই উক্ত বক্ল এন্ডিং ক্লিয়ারেন্সের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ডোনিং এবং ডোফিং ক্লাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।

এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার জন্য প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট আলাদা আলাদা সময় দিয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের দুই দিন আসতে হবে বিএসএমএমইউতে। একদিন লিখিত পরীক্ষা। আরেকদিন অসপি পরীক্ষা।

সংক্রমণের শঙ্কায় চিকিৎসকরা

এদিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে বিকল্প উপায়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেসিডেন্ট চিকিৎসক মেডিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের ডিপার্টমেন্টে প্রায় ৪০ জন ফেজ-এ চিকিৎসক আছেন, যারা ব্লক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। এখন এই ৪০ জনকে একই রুমে ঘণ্টাখানেক সময় একই সাথে বসে পরীক্ষা দিতে হবে। আবার অসপি পরীক্ষায় ঘুরে ঘুরে সবাই একই টেবিলে বসে পরীক্ষা দিবেন। এখন এদের মধ্যে যদি কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে বাকি সবাই আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। যেহেতু এখন লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী আমাদের চারপাশে আছে। তাই আমরা জানিও না যে কে আক্রান্ত আর কে সুস্থ। আমাদের বাড়িতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আছেন। আমাদের মাধ্যমে তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

চিকিৎকরা বলেন, রেসিডেন্টরা বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসায় অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনই নতুন নতুন চিকিৎসক আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় করোনা চিকিৎসায় চিকিৎসক সংকট দেখা দেয়াটা অস্বাভাবিক না। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানের ঝুঁকি ব্যতিত অন্যান্য সাম্ভাব্য সকল ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন বলে তারা আশাবাদী।

বিকল্প পদ্ধতিতে নেওয়ার দাবি 

এ অবস্থায় বিকল্প কোনো পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে এক রেসিডেন্ট চিকিৎসক বলেন, ‘অনলাইনে এই পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। সারা পৃথিবীতেই অনলাইন পরীক্ষার অনেক পদ্ধতি চালু আছে। আর এখন তো করোনা মহামারী চলছে। এরই মধ্যে করোনার একটা কোর্স এবং পরীক্ষা কিন্তু বিএসএমএমইউর ওয়েবসাইটে অনলাইনেই হচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাহলে ব্লক এন্ডিং পরীক্ষা অনলাইনে কেন নয়? এছাড়া অন্য পদ্ধতির কথাও বিবেচনা করা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, স্যাররা অনলাইনে ক্লাসও নিয়েছেন যেন একসাথে ক্লাসরুমে ক্লাস করে নবীন চিকিৎসকরা ঝুঁকিতে না পড়েন। সুতরাং তাদের সুরক্ষায় স্যারদের এই সতর্কতা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে সবাইকে একত্রিত করে নেওয়া এই ব্লক এন্ডিং পরীক্ষার মাধ্যমে।

আরেকজন রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিএসএমএমইউর নিজস্ব কোনো আবাসন নাই। আমরা একেকজন একেক জায়গায় থাকি। যানবাহন চলছে না ঠিকমত। জার্নি করে যাওয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্ষেত্রে শুধু পরীক্ষার দু-এক ঘণ্টার জন্য দুই দিন জার্নি করে হাসপাতালে যাওয়াটাই হয়তো রোগ নিয়ে বাড়ি ফেরার কারণ হবে। বিকল্প উপায়ে পরীক্ষা নেয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. মো. এবিএম আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না। কারণ আমি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এছাড়া এ ব্যাপারে কিছু বলার ইখতিয়ারও আমার নেই। এটি দেখাশোনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা)। তিনি ভালো বলতে পারবেন।’

এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউর সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান বলেন, ‘এবার পরীক্ষাটা আমরা যতটা উদারভাবে সম্ভব নেবো। ব্লক এন্ডিংয়ে তো একেকটা ওয়ার্ডে অল্প অল্প ডাক্তার। তবে যাদের বেশি আছে তারা ভাগ করে নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্টগুলো স্বায়ত্তশাসিত। আমরা তাদেরকে কোনো কিছু চাপ দিয়ে করাতে পারি না। সুতরাং যেখানে শিক্ষার্থী বেশি আছে, তারা ব্যবস্থা করবে। এটা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। আমরা তাদের বলে দিয়েছি, তিনটা কমপার্টমেন্টের মধ্যে এবার দুটো নিলেই হবে।’

আপনার মতামত দিন :