প্লাজমা থেরাপিঃ কার্যকরিতা কি আছে? 

প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২০

সম্প্রতি সময়ে প্লাজমা থেরাপি নিয়ে অনেক কথা দেখা যাচ্ছে। Convalescent plasma therapy নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম।

১. এটা কি? থিওরিটা এমন যে সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগী SARS-CoV2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিজের শরীরের তৈরি antibody বানিয়ে ফেলেছে। সেই antibodyটাই পাওয়ার জন্যে একজনের রক্তের প্লাজমা (রক্তের তরল অংশ) দেয়া হচ্ছে এক গুরুতর অসুস্থ এক রোগী কে। আসা করা হচ্ছে যে একজনের antibody দিয়ে অন্য আরেকজনের ভাইরাস থামানোর ক্ষমতা সৃষ্টি করা হবে।

২. আগে কি ব্যবহার হয়েছে? জ্বি। এন্টিবিয়োটিক আসার আগে, অন্যান্য অনেক রোগেই ব্যবহৃত হত প্লাজমা। স্কার্লেট ফিভার থেকে নিউমোকোক্কাল নিউমোনিয়ে তেও। ভাইরাস রোগে সব চেয়ে বেশি ব্যবহৃত কারন antibiotic যেমন হয়েছে antiviral তেমন পায়নি এখনো আমরা। ১৯১৮ এর স্প্যানিশ ফ্লু যখন হয় তয়ার পরপরো কিছু ব্যবহার হয়েছিল। এ নিয়ে ঔই সময় পাবলিশ করা কিছু রিসার্চ আছে। সব চেয়ে বেশি কার্যকারিতা দেখা গিয়েছিল ২০০৯ এর H1N1 ‘swine flu’ মহামারির সময়। এ নিয়ে বেশ কিছু স্টাডিও হয়েছে। অন্য যে দুই করোনাভাইরাস মহামারি করেছিল- SARS-CoV1 এবং MERS-CoV, সেগুলোতেও ব্যবহৃত হয়েছিল। SARS নিয়ে কিছু ভাল স্ট্যাডি হলেও MERS এ তেমন কাজ করেনি। Ebola তেও ব্যবহৃত হয়েছে কিছুটা।

৩. এটা কি নিরাপদ? যেকোন চিকিৎসার প্রথম দরকারি গুণ হলো এটা কি নিরাপদ কিনা। কার্যকর হলেও যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। এই নিয়ে তেমন কাজ না হলেও, আগে কিছু রোগের সময় প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়েছে, এবং তেমন কোন খারাপ পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, একারনে ধরা হচ্ছে নিরাপদ। তবে ব্লাড গ্রুপ মিলানো দরকার, এবং একের অধিক বার প্লাজমা দিতে থাকলে একটা রিয়েকশান হতেও পারে। তাই ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ করে, এক ব্যাগ প্লাজমা বলতে পারা যায় অনেকটাই নিরাপদ।

৪. এটা কি কার্যকরি? একটা চিকিৎসা নিরাপদ হলে এর পরের প্রশ্ন, এটা কি কাজ করে? কার্যকারিতা প্রমান করা অনেক কঠিন একটা জিনিস। একজন কে দিলাম, সে ভাল হয়ে গেল, এর মানেই এই নয় যে এটা কাজ করে। কার্যকারিতা দেখার জন্যে দরকার একটা randomized controlled trial। এক গ্রুপকে দিবেন প্লাজমা, এক গ্রুপকে দিবেন না। তারপর তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার, সুস্থতা পাওয়ার জন্যে কত সময় লেগেছে এগুলা দেখা লাগবে। বুঝতেই পারছেন, এটা করতে অনেক সময় লাগবে।

৫. তাহলে কি গবেষনা আছে? কিছু ছোট Case Series ছাপানো হয়েছে যেগুলোতে দেখা গিয়েছে যে প্লাজমা দেয়া রোগী সুস্থ হয়েছে প্লাজমা পাওয়ার পড়। এটা এবং ইতিহাসে আরো অন্যান্য রোগের জন্যে ব্যবহৃত হওয়ার কারনেই বলা হয়েছে যে এটা কাজ করতেও পারে। গবেষনা চলছে, এবং আরো নতুন ডাটা সামনে আসছে। এখন compassionate use হিসেবে ব্যবহার করা যাবে

৬. সবাইকে দেয়া যাবে? সবাই কে দেয়া একটু সমস্যা, কারন একজনের প্লাজমা একজন বা হয়ত, কয়েকজন কে দেয়া যাবে। এর জন্যে দরকার অনেক মানুষ সুস্থ হয়ে উঠা। সুস্থতা হতেও তো সময় লাগে ১০-১৪ দিন, এর পর আরো কিছুদিন অপেক্ষা করে তারপর প্লাজমা দেওয়া যায়, তাও যদি যথেষ্ট antibody থাকে। আর সংক্রমনের হার যেহেতু সুস্থ হওয়ার হারের চেয়েও বেশই, এই এক চিকিৎসা সবাইকে দেয়া যাবেনা, তাই শুধুই দেয়া হচ্ছে তাদেরকে যারা গুরুতন অসুস্থ। আর অধিকাংশ মানুষ কিন্ত কোন চিকিৎসা ছাড়াই ভাল হয়ে যাচ্ছে।

তাই এক কথায় বলা যাচ্ছেনা এটা কি কার্যকর কিনা। কিন্ত কিছুটা আসা দেখানোর মত হতেও পারে, যা আমরা কয়েক সপ্তাহে বা মাসে হয়ত পাব ইন শা আল্লাহ। তাই যেটা দরকার তা হলো সুস্থ হয়ে গেলে, প্লিজ এক ব্যাগ রক্তদান করুন। অনেকগুলো গ্রুপ আছে বাংলাদেশে যারা এই কাজে নিয়োজিত।

Dr. Raiiq Ridwan
Specialty Trainee in Emergency Medicine
Cambridge University Hospitals

আপনার মতামত দিন :